২০ বছরেও দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক হত্যার বিচার হয়নি

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ১৯ জুন, ১৯৯৬। রাত ১০টা ২৩ মিনিটে নিজ পত্রিকা অফিসে কর্মরত অবস্থায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হন দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা স ম আলাউদ্দিন। আজ হত্যার ২০টি বছর পেরিয়েছে, কিন্তু আজও বিচার হয়নি। সাতক্ষীরা আদালত সূত্র জানায়, দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক স ম আলাউদ্দিনকে হত্যার ঘটনায় তার ভাই স.ম নাসির উদ্দিন একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পাঁচদিন পর হত্যাকাণ্ডের ব্যবহৃত কাটা রাইফেলসহ সুলতানপুরের আব্দুল ওহাবের ছেলে যুবলীগ কর্মী সাইফুল ইসলামকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকাণ্ডের কারণ এবং এরসঙ্গে জড়িত হিসেবে সাতক্ষীরার কয়েকজনের নাম প্রকাশ করে। এক বছর তদন্ত শেষে ১৯৯৭ সালের ১০ মে সিআইডির খুলনা জোনের এএসপি খন্দকার মো. ইকবাল উল্লেখিত ব্যক্তিদের আসামি শ্রেণিভুক্ত করে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার অভিযোগপত্র চার্জশিট দাখিল করেন। আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা অবস্থায় সাইফুল্লাহ কিসলু মারা যান।

আদালত সূত্র আরও জানায়, সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটির অভিযোগ গঠনের পর ঝড়ু, সবুরসহ কয়েকজন আসামি উচ্চ আদালতে কোয়াশমেন্টের আবেদন করলে মামলাটির বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। পরবর্তীতে হাইকোর্ট ডিভিশন এবং আপিল বিভাগের আদেশে দীর্ঘদিন মামলাটির কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

একপর্যায়ে আপিল বিভাগ বিষয়টির নিষ্পত্তি করে সব আসামির বিরুদ্ধে মামলাটি দ্রুত বিচারের নির্দেশ দেন। এ পর্যায়ে মামলাটি সাতক্ষীরা দায়রা জজ আদালতে বিচার কার্যক্রম শুরুর প্রাক্কালে ফের সবুর, ঝড়ুসহ কয়েকজন আসামি সাতক্ষীরা জেলার পরিবর্তে মামলাটি অন্য কোনো জেলায় বিচারের জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করলে বিচার কার্যক্রম আবারো স্থগিত হয়ে যায়। হাইকোর্ট ডিভিশন আসামিদের আবেদন নামঞ্জুর করে আদেশ দিলে আসামিরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যায়। সেখানে শুনানির পর আসামিদের আবেদন নামঞ্জুর হয়। সে আদেশ নিম্ন আদালতে আসার পর মূলত ২০১২ সালে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। কিন্তু মামলাটির বিচার কাজ আজও শেষ হয়নি।

সূত্র জানায়, মামলাটির ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ইতোমধ্যে ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। ইতোমেধ্যে মামলাটির অভিযোগপত্রে উল্লিখিত সাক্ষীদের মধ্যে ৭/৮ জন মারা গেছেন। হুমকি দেওয়া হয়েছে কয়েকজন সাক্ষীকে। আর তাতে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে বিচারপ্রত্যাশী শহীদ স ম আলাউদ্দিনের স্বজনসহ সাতক্ষীরার ২০ লাখ মানুষের অপেক্ষা।

আদালত সূত্র আরও জানায়, চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার আসামি কাজী সাইফুল ইসলামের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী- ভোমরা স্থল বন্দর, সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের বিরোধ, কলেজ ছাত্র ভবোরঞ্জন হত্যা মামলায় স ম আলাউদ্দিনের বাদী পক্ষে অবস্থান নেওয়া ইত্যাদি বিষয়ে আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে স ম আলাউদ্দিনকে হত্যা করেন। উল্লিখিত বিষয়গুলো ইতোপূর্বে যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের জবানবন্দিতেও উঠে এসেছে।

এদিকে, দৈনিক পত্রদূত সম্পাদক শহীদ স ম আলাউদ্দিনের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১৯ জুন রোববার সকাল ৯টায় কবর জিয়ারত ও শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন এবং বেলা ১১টায় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে স্মরণসভা।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.