খাগড়াছড়িতে দুর্বৃত্তদের ব্যাপক চাঁদাবাজি, দুইজনকে অপহরণ

শ্যামল রুদ্র, রামগড়(খাগড়াছড়ি) : খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা ও এর আশপাশের পার্বত্য গ্রামীণ জনপদে সশস্ত্র দুর্বৃত্তদল ব্যাপকহারে চাঁদাবাজি ও অপহরণের মাধ্যমে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে,পার্বত্য চট্রগ্রামের দুই আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের নাম পরিচয়ে বহিরাগত কতিপয় দুর্বৃত্ত এ সব অপকর্মে জড়িত। এদের সহযোগিতায় রয়েছে সুযোগসন্ধানী স্থানীয় কয়েকটি দুষ্ট চক্র। এ সব চাঁদাবাজদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রতিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের সত্যিকারের সক্রিয়তা চেয়েছেন জনসাধারন। দুর্বৃত্তদের অত্যাচার উৎপীড়ন মোকাবেলায় প্রশাসনের ঢিলেঢালা ভূমিকায় এলাকাবাসী ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছেন। অবশ্য উপজেলার স্পর্শকাতর অংশে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ও পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের ঘটনা কমেনি বলে জানা গেছে।

চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের অপতৎপরতার ঘটনায় অতিষ্ঠ স্থানীয় জনসাধারন এখন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দিন যাপন করছেন। রামগড় উপজেলা জেএসএস (সন্তু গ্র“প) সভাপতি মংসুইপ্র“ কারবারী বলেন,এলাকায় সশস্ত্র চাঁদাবাজদের ব্যাপক উপস্থিতি রয়েছে। তিনি নিজেই ভয়ের মধ্যে আছেন বলে এই প্রতিবেদককে জানান। এদিকে সোমবার (২০জুন) রাত ৯টায় রামগড়ের পাতাছড়া ইউনিয়নের ঝর্নাছড়া এলাকায় চাঁদার দাবীতে দুটি বসত ঘরে আগুন ও দুটি ঘর ভাঙ্গচোর করে সবকিছু লুটে নেয় দুর্বৃত্তরা। এ সময় বাড়ির মালিক জেসমিন আক্তার ও দীন আলী মোল্লা সহ বেশ কয়েকজনকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় দীন আলী মোল্লার ছেলে মারুফ মোল্লা বাদী হয়ে রামগড় থানায় মামলা দায়ের করেন। রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে রামগড় সদর ইউনিয়নের খাগড়াবিলের সোনার খিল এলাকা থেকে একই দিন (২০ জুন-সোমবার) রাত ৭টায় চাঁদা না পেয়ে আবু হানিফ পিতা আবুল কাসেম ও ফজর আলী পিতা শহর আলী এই দুজনকে দুর্বৃত্তরা অপহরণ করে নিয়ে যায়।

এর আগে গত শনিবার চাঁদা আদায়কালে ইউচিঙ মারমা ও চাইক্যং মারমা নামের দুই দুর্বৃত্তকে পাতাছড়া ইউনিয়নের কর্নেল বাগান এলাকা থেকে সেনাবাহিনী আটক করে। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর অনেকগুলো সিম কার্ড ও মোবাইল সেট, চাঁদা আদায়ের রশিদসহ নগদ টাকা জব্দ করা হয়। রামগড় সার্কেল এএসপি মো. হুমায়ুন কবীর দুর্বৃত্তরা ইউপিডিএফ কিংবা জেএসএস (এম গ্র“পের ) সদস্য হতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

রামগড় সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহআলম মজুমদার ও পাতাছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মনিন্দ্র ত্রিপুরা তাঁদের এলাকায় চাঁদাবাজি,অপহরণ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কথা স্বীকার করে বলেন,সন্ত্রাস প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে যে কোন সময় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। এলাকাবাসী উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছেন। পাতাছড়ার মোহাম্মদ আলী ও আবদুল কাইয়ুম বলেন,আমরা এলাকায় যাই না। উপজেলা সদরে বাসা ভাড়া নিয়েছি। চাঁদার দাবিতে দুর্বৃত্তরা স¤প্রতি তাঁদের শতাধিক ফলন্ত আম গাছ কেটে ফেলে। এসব ঘটনা থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। নিজেরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অপরাধীদের আটক করতে প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে।

সরেজমিনখোঁজনিয়ে জানা যায়,রামগড়ের লক্ষীছড়া,পিলাকছড়া,বেলতলি,বৈদ্যপাড়া,বড়খেদা,ছোটখেদা,ছেনচরিপাড়া,গুজাপাড়া,বালুখালী,হাতিরকুম্বা,জালিয়াপাড়া,কৈলাশটিলা,লালছড়ি,বলিপাড়া,রুপাইছড়ি,তৈচাকমা,থলিবাড়ি,হাফছড়ি,বড়ইতলা,থানাচন্দ্রপাড়া,মুসলিমপাড়া,মরাকয়লাসহ প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় সর্বত্রই সশস্ত্র দুর্বৃত্তরা সক্রিয়। থানাচন্দ্র পাড়ার জলিল মিয়া ও মুসলিম পাড়ার মংহলাপ্র“ মারমা বলেন,এলাকায় চাঁদাবাজেরা খুবই বেপরোয়া। ভয়ে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। তাঁরা বলেন, দুর্বৃত্তরা বিভিন্ন হারে চাঁদা ধার্য করে। ব্যবসায়ী,চাকুরিজীবী,গরিব কৃষক ও প্রবাসী পরিবার গুলোর আত্বীয়স্বজন সবাই নিরুপায় হয়ে নিয়মিত চাঁদা দেন সন্ত্রাসীদের। চাঁদাবাজদের উৎপাতে সরকারি উন্নয়নমূলক কাজকর্ম বাধাগ্রস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

রামগড় উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্ (ইউএনও) মো. ইকবাল হোসেন এই প্রতিবেদককে বলেন,পার্বত্য চট্রগ্রামের দুই আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় (ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টÑইউপিডিএফ) ও (জন সংহতি সমিতিÑ জেএসএস’র (এমএন গ্রুপ) এলাকার বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজির ঘটনাগুলো সঠিক। এগুলো বন্ধে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও সক্রিয় হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন ।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.