মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের কি দোষ ?

গোলাম শরীফ টিটু :  ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনকে পুর্নমন্ত্রী এবং নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভিকে উপমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে এ মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। এদিকে দেশের ব্যবসা-বানিজ্য ও আমদানী রপ্তানীর প্রবেশদ্বার বার আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত বন্দরনগরী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনকে পুর্নমন্ত্রীর মর্যাদা না দেয়ায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রামের সচেতন মহল। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ছাড়াও সমাজের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।

চট্টগ্রাম পেশাজীবি সমন্বয় পরিষদের সাধারন সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন,’ কোন অপরাধে কপাল পুড়লো চট্টলার? ঢাকার অর্ধশহরের দুই মেয়র পুর্নমন্ত্রীর পদমর্যাদা পেলেও পুর্নশহর চট্টলার মেয়র কেন তা পাবেন না? ঢাকার দুই মেয়রের সাথে ঘোষনা আসলো নারায়নগঞ্জের মেয়রের উপমন্ত্রী পদমর্যাদা দেয়ার। তবে কি অভাগা চট্টগ্রামের ললাটে জুটলো সেই পুরনো বঞ্চনা? বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী যেখানে চট্টগ্রামের উন্নয়নে বিশেষ প্রতিশ্র“তিবদ্ধ সেখানে এই বৈষম্য কেন? তবে কি এটি কোন আমলাতান্ত্রিক ষড়যন্ত্র? এ নিয়ে জনসাধারনের মনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন!

বিশিষ্ট আইনজীবি ও সাবেক পিপি সালাউদ্দিন আহমদ চৌধুরী লিপু বলেন,’দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের প্রতি বৈষম্যমুলক আচরন করেছে প্রতিটি সরকার। চট্টগ্রামের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনকে পুর্নমন্ত্রী মর্যাদা না দেয়ায় আমি হতাশ হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকারের কাছে এমন আশা করিনি। তবে কি এখনো চট্টগ্রাম বিদ্বেষী আমলারা সক্রিয়?’

চট্টগ্রামের উন্নয়নকামী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, পেশাজীবি ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলেন,’ এ ঘটনায় ফের প্রকাশ পেয়েছে চট্টগ্রামের প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণের। জাতীয় অর্থনীতিতে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম সর্বোচ্চ রাজস্বের যোগানদাতা হলেও সরকারের কতিপয় আমলাদের কার্যক্রমে চট্টগ্রামের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করেছেন বার বার। মুখে চট্টগ্রামের গুনগান করলেও তাদের অন্তরে চট্টগ্রাম বিদ্বেষ, উন্নয়ন কার্যক্রমে চট্টগ্রামকে পিছিয়ে রাখার নীতি অতীতেও পরিলক্ষিত হয়েছে। নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে বিএনপি সরকারের সময় চট্টগ্রামকে বানিজ্যিক রাজধানী উপাধী দিলেও তারা বানিজ্যিক রাজধানী বাস্তবায়নে কোন কাজ করেনি।

উপরন্তু চট্টগ্রামকে গুরুত্বহীন করে এ অঞ্চল থেকে সরকারের অনেক গুরুত্বপুর্ন বিভাগকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এমনকি পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত-জোট সরকারের আমলে চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে বেশি সংখ্যক মন্ত্রী, মন্ত্রী মর্যাদার উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত করা হলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের অভ্যন্তরীন বিরোধের কারনে কার্যত বানিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে কোন ’প্রকল্প গঠন করা হয়নি। দেশের ব্যবসা বানিজ্যের তীর্থস্থান চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে দেশের কোন উন্নয়ন চিন্তা করা যায় না, তেমনি রাজধানী ঢাকার পর ঘুরে ফিরে আসে চট্টগ্রামের নাম। বঙ্গবন্ধু পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সাধারন সম্পাদক জুবায়ের সিদ্দিকী বলেন,’ রাজনীতিতে দীর্ঘ ত্যাগ, ব্যক্তিগত ইমেজ, যোগ্যতা ও বহুমুখী প্রতিভার আলোকে বিবেচনা করলে সর্বপ্রথম পুর্নমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার কথা চট্টগ্রামের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনকে। অথচ চট্টগ্রামের মেয়রকে পুর্নমন্ত্রীর মর্যাদা না দিয়ে অর্থনীতিতে গুরুত্বপুর্ন এলাকা চট্টগ্রামের প্রতি হেয় করা হয়েছে যা মেনে নেওয়া যায়না।

একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন চট্টগ্রাম রাইসমিল মালিক সমিতির সভাপতি ও বক্সিরহাট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা বাবু শান্তদাশ গুপ্ত। তিনি বলেন,’ তরুন প্রজন্মের অহংকার, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, সাবেক অকুতোভয় ছাত্রনেতা আ.জ.ম নাছির উদ্দিনের মত যোগ্য নেতাকে মুল্যায়ন না করায় ব্যথিত হয়েছি।’ বক্সিরহাটের আরেক আওয়ামী লীগ নেতা এস.এম মামুনুর রশিদ বলেন,’ চট্টগ্রামের যুব সমাজের অহংকার মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনকে পুর্নমন্ত্রীর মর্যাদা না দেয়ায় কষ্ট পেয়েছি। তাঁর প্রতি অবমুল্যায়ন মানে চট্টগ্রামের প্রতি অবমুল্যায়ন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক সালাউদ্দিন সাকিব প্রতিক্রিয়ায় বলেন, দেশের অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার চট্টগ্রামের নন্দিত মেয়র, সাবেক ছাত্রনেতা ও বিশিষ্ট ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব আ.জ.ম নাছির উদ্দিনকে অবিলম্বে পুর্নমন্ত্রীর পর্যাদায় দেখতে চাই।

চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষের সাথে ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে আমিও জোরালো দাবী রাখছি। যে চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন, সেই চট্টগ্রামের পরীক্ষিত ছাত্রনেতা ও নন্দিত মেয়রের প্রতি উপযুক্ত মল্যায়ন করার জন্য নেত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করি।’’ওমান বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব জসিম উদ্দিন বলেন,’ আমরা আ.জ.ম নাছির উদ্দিনকে পুর্নমন্ত্রীর মর্যাদায় দেখতে চাই। আশাকরি প্রধানমন্ত্রী, গনতন্ত্রের মানষকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি সুবিবেচনা করবেন। চট্টগ্রামের একজন ব্যবসায়ী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন,’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরই চট্টগ্রামের প্রতি আন্তরিক। তার আমলে সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন কর্মকান্ড হয়েছে এ চট্টগ্রামে। তবে সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ও গুরুত্বপুর্ন আমলারা চট্টগ্রাম বিদ্বেষী। এটি প্রমানিত সত্য।

বঙ্গবন্ধু পরিষদ আবুধাবীর সভাপতি আলহাজ্ব ইফতেখার হোসাইন বাবুল, সাধারন সম্পাদক নাছির উদ্দিন তালুকদার, কাতার বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ মুসাও যৌথ বিবৃতিতে চট্টগ্রামের মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিনকে অবিল¤েব পুর্নমন্ত্রী মর্যাদা দেয়ার আহবান জানিয়েছেন। এদিকে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় নগরী ও নগরীর বাইরে জেলার বিভিন্ন এলাকায় মিছিল করেছে ছাত্রলীগ, যুবলীগ সহ বিভিন্ন সংগঠন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গে কথা বললেও তিনি কোন প্রতিক্রিয় ব্যক্ত করেননি। তবে তিনি বলেন,’ আ.জ.ম নাছির উদ্দিন অবশ্যই একজন যোগ্য মানুষ। তাঁকে উপযুক্ত মুল্যায়ন করলে খুশি হতাম। নগরীর প্রবীন এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন,’ শুধু আমলাতন্ত্র নয়, আমাদের কিছু নেতাদের স্বভাব চট্টগ্রাম বিদ্বেষ।

রাজনীতিতে মত-পার্থক্য থাকবে, কিন্তু কাদা ছোড়াছুড়ি করে আমরা নিজেরাই নিজেদের পায়ে কুড়াল মারছি। তিনি বলেন,’ আ.জ.ম নাছির কে মুল্যায়ন করলে চট্টগ্রামবাসীও খুশী হতো। বুঝতে পারছি না তাঁর কি দোষ ?

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.