চট্টগ্রামে মিতু হত্যাকান্ডের নতুন মোড় !

জুবায়ের সিদ্দিকী – 

চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকান্ডের রহস্য উম্মোচনের কিনারায় পুলিশ। হত্যাকান্ডে জড়িত তিন খুনিসহ ৫ জন বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহনকারীও রয়েছে। মুল পরিকল্পনাকারীও রয়েছে। মুল পরিকল্পনাকারীও পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে। সে বাবুল আক্তারের বিশ্বস্ত সোর্স। পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছে, এ হত্যাকান্ডে পরিকল্পনাকারী একজন হলেও তা বাস্তবায়ন করেছে ৯ জন মিলে। খুনিরা সকলে ভাড়াটে। তবে হত্যাকান্ডের কারন এখনো উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। কিন্তু পুলিশ এখনো এ ব্যাপারে মুখ খুলছে না। তারা কাউকেই আটকের কথা স্বীকার করছেন না।

একাধিক সুত্রে জানা গেছে, পুলিশ জানতে পেরেছে, পুরো পরিকল্পনা একজন মাত্র ব্যক্তি করেছেন। আর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে ভাড়াটে খুনিরা। হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নিয়েছে চারজন এবং পাঁচজন আশপাশে অবস্থান নিয়ে সহায়তা করেছে। এ ছাড়া মিতুকে হত্যা করতে কমপক্ষে পাঁচ দফা চেষ্টা চালিয়ে সাত দফায় হত্যাকারীরা সফল হয়েছে বলে পুলিশ তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে।

সুত্র জানায়, মিতু হত্যাকান্ডে সরাসরি অংশ নিয়ে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যাওয়া সেই তিন যুবকসহ মোট পাঁচ হত্যাকারী এখন পুলিশ হেফাজতে। হত্যাকান্ডে পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন ও এর পরবর্তী অবস্থার পুরো চিত্র এখন পুলিশের হাতে এসে গেছে বলে একাধিক সুত্রে জানা যায়। শিগগিরই এই হত্যারহস্য উম্মোচিত হবে জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন ’অপেক্ষা করুন’।

জানা গেছে, হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাকারী, হত্যাকারী এবং তাদের সহযোগিদের ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এদের মধ্যে হত্যাকান্ডের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত পাঁচজন এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। পুলিশ কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, আমরা শিগগিরই এই ব্যাপারে আপনাদের ভালো খবর দিতে সক্ষম হব। এ জন্য আরেকটু ধৈয্য ধরতে হবে। তারপর সবকিছু খোলাসা হবে। পুলিশ সুত্রে জানা যায়, মোবাইল কল রেকর্ডসহ নানাভাবে নিশ্চিত হওয়ার পর নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় পুলিশ। পুলিশ চাক্তাই এলাকা থেকে ভোলা নামের এক সন্ত্রাসীকে আটক করে। তার বিরুদ্ধে ১৫টির বেশি মামলা রয়েছে। তিনি ছাড়াও মুছা নামে এক ব্যক্তিকে রাঙ্গুনিয়া রানীরহাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তারা দুজনই এক সময় জেলে ছিলেন। তারা বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করতো।

বাবুল আক্তার ও তার পরিবারের সাথে ভাল সম্পর্কের কারনে পরিস্কার ধারনা ছিল এ দুজনের। সুত্র জানায়, মিতুকে যে স্থানে হত্যা করা হয় সেই জিইসি মোড়ে বসানো টাওয়ারের অধীনে যেসব মোবাইল ফোন থেকে কল ইনকামিং আউটগোয়িং হয়েছে তা পর্যালোচনা করেও মুছা ও ভোলার ফোন ব্যবহারের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তারা ছাড়াও আরও তিন জনকে আটক করেছে পুলিশ। যারা সরাসরি হত্যাকান্ডে অংশ নিয়েছে। পুলিশ জানতে পেরেছে, ভাড়াটের মাধ্যমে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। কোন পক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে মিতুকে খুন করে তারা। এর আগে কিভাবে হত্যাকান্ড ঘটানো হবে তারও পরিকল্পনা করা হয়। উল্লেখ্য মিতু হত্যাকান্ডের পর হাটহাজারীর মুছাবিয়া দরবার শরীফ থেকে আবু নসর গুন্নু ও নগরীর অক্সিজেন থেকে শাহজামান রবিন নামে দুজনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পুলিশ দাবী করেছিল মিতু হত্যায় সম্পৃক্ত রয়েছে তারা এ সন্দেহে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে রিমান্ডে আনার পরও তাদের কাছ থেকে তেমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। গুন্নুর গ্রেফতার নিয়ে মামলার তদারকি কর্মকর্তা ডিবি ডিসি মোকতার হোসেন ও তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা কাজী রকিব উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে। তারা ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে গ্রেফতার করে বলে অভিযোগ করা হয়।

পরবর্তীতে পরিবর্তন করা হয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। মামলার সকল কার্যক্রম থেকে বাদ দেয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মোকতার হোসেনকে। মিতু হত্যাকান্ডে জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কারাগার থেকে জঙ্গি সদস্য ফুয়াদকে রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। তার কাছে এ ব্যাপারে কোন তথ্য পায়নি বলে সুত্রে জানা গেছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জঙ্গি ফুয়াদ হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে।

স্ত্রী খুন হওয়ার পর থেকে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে ঢাকায় শ্বশুর বাড়িতেই থাকছিলেন বাবুল আক্তার। তার শ্বশুর মোশাররফ হোসেন অবসরে গিয়েছিলেন পুলিশের ওসি হিসেবে। আর বাবা আবদুল ওয়াদুদ মিয়াও চাকরি করেছেন পুলিশে। গত ২৪ জুন শুক্রবার রাতে বনশ্রী থেকে যখন বাবুল আক্তারকে নিয়ে যাওয়া হয়, তার বাবা তখন ওই বাসায় ছিলেন। তিনি বলেন,’ সন্ধ্যায় অফিসার্স ক্লাবে একটা অনুষ্টান ছিল। সেখানে যাওয়ার পর বাবুল জানায় আইজি সাহেবের সাথে দেখা করবে। দেখা করার পর অনুষ্টান হয়েই বাসায় আসে ওরা। বাবা ও শ্বশুরের ভাষ্য অনুযায়ী, বাবুলের সঙ্গে খিলগাঁও থানার ওসি মঈনুল হোসেনও বনশ্রীর বাসায় যান। কিছুক্ষন পর যান মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার আনোয়ার হোসেন। তিনিই জানান, পুলিশ মহাপরিদর্শক এ.কে.এম শহীদুল হক ’ডেকেছেন’ বাবুলকে। কিন্তু তার পর থেকে বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় এবং পুলিশ কর্মকর্তারা ফোন না ধরায় তাদের মধ্যে শুরু হয় উদ্বেগ। ওই সময় তার পিতা ওয়াদুদ মিয়া বলেন, ’আমার ছেলের সাথে কোনভাবেই যোগাযোগ করতে পারছি না।

আগে ওসি সাহেব একবারেই ফোন ধরতেন, আমাদের নিরাপত্তার খবর নিতেন। এখন ফোন ধরছেন না। ডিবি অফিসেও যোগাযোগ করেছি কেউ কোন সহযোগিতা করছে না। বলছেন, উপরের অফিসাররা বলতে পারবেন। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি খোলাসা করে সাংবাদিকদের বলেন,’ কয়েকজন আসামীর সামনে মুখোমুখি করে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন,’ বাবুল আক্তার একজন পুলিশ কর্মকর্তা। ওই এলাকার অনেককেই তিনি চেনেন, যাদের আটক করেছি তাদের সনাক্ত করার জন্য বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এদিকে বাবুল আক্তারের পরিবারের উদ্বেগকে কাজে লাগিয়ে কতিপয় অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো কল্পকাহিনী রচনার নির্লজ্জ প্রতিযোগিতা শুরু করে! কোন কোন নিউজ পোর্টালে পুলিশের চৌকষ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার ও তার মৃত স্ত্রীকে জড়িয়ে এমন কাহিনী রচনা করে, যা কোন ভদ্রলোকের পক্ষে লেখা সম্ভব নয়। জানিনা কোন তথ্যের ভিত্ত্বিতে তারা গুরুর রচনা লিখে চলেছে। তবে ওসব ওনলাইন নিউজ পোর্টালের কারনে সাংবাদিক হিসেবে আমিও বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি। দেশে অবাধ তথ্য প্রবাহের সুযোগে গুটিকয়েক ব্যক্তি কেন গোটা সাংবাদিক মহলকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে !

জানা যায়, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মাহবুব আলম বলেন,’সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহাার এ হত্যা মামলার বিষয়ে বাবুল আক্তারের সাথে কথা বলার জন্য রাতে তার কক্ষটি চেয়ে নেন। পরে সিএমপি কমিশনার নিজে বাবুল আক্তারকে ফোন করে সেখানে আসতে বলেন। বাবুল আসার পর তারা দীর্ঘক্ষন কথা বলেন। বাবুলের কাছে থাকা তথ্য এবং পুলিশের কাছে থাকা তথ্য মিলিয়ে দেখেন এবং মামলার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। সে সময় সে সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও দুজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। বাদী হিসেবে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসা করা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘসময় চট্টগ্রামে চাকরী করেছেন, তাঁর জানা তথ্যগুলো পুলিশ চাইতেই পারেন।

এ সুযোগে অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো এবং পেজবুকে কতিপয় ব্যক্তিদের প্রচারনা দেখে বিস্মিত হয়েছি। পরদিন ২৫ জুন শনিবার বাবুল আক্তার বাসায় ফিরে সাংবাদিকদের বলেন,’তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার মিতু হত্যার তদন্তের বিষয়ে আলোচনা করতে তাকে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ’আমাকে গ্রেফতার করা হয়নি, যারা তদন্ত করছেন তারা বিভিন্ন বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা করেছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.