নিজস্ব প্রতিবেদক:: চারিদিকে থই থই পানি। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, আবার কোথাও বুক ছুঁই ছুঁই পানি। এ যেন এক বহমান নদী। দৃশ্যত এমন পরিস্থিতি এখন চট্টগ্রামের। রসিকতা করে এখন কেউ কেউ বন্দরনগরীকে চট্টগ্রাম নদী বলছেন। তবে এ নদীতে শুধু নৌকা চলে না, চলে রিকশা, অটোরিকশা, বাস-মিনিবাসসহ নানা যানবাহন।
এই পরিস্থিতিতে ভাসছে ঘর-বাড়ি, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ ও ছোট-বড় বহুতল ভবন। ভাসছে গাছপালা, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি।
দুই দিনের বৃষ্টিতে নগরীর খুলশি ও অক্সিজেনের পাহাড়ি এলাকা ছাড়া ৪১ ওয়ার্ডের সবকয়টি এলাকায় পানিতে তলিয়ে। গত সোমবার মধ্যরাতের পর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত টানা ভারী বর্ষণে ডুবে যায় বন্দরনগরীর এসব এলাকা। এরপর থেমে থেমে ভারী বর্ষণে বহমান নদীতে পরিণত হয় চট্টগ্রাম।
আজ মঙ্গলবার ভোর থেকেও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে থেমে থেমে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস বলছে, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত ভারী বর্ষণ হতে পারে। বৃহস্পতিবার নাগাদ বৃষ্টি একটু কমে আসতে পারে বলে জানান আবহাওয়াবিদ বিশ্বজিৎ চৌধুরী।
মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামে ১৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া সীতাকুন্ডে ১২৯, রাঙামাটিতে ১২১, কক্সবাজারে ১০৩ ও কুতুবদিয়ায় ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।
দুই দিনের বৃষ্টিতে কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এলাকা মোহরা, হামিদচর, চর রাঙামাটিয়া, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, কাপাসগোলা, বাদুরতলা, বহদ্দারহাট, বাস টার্মিনাল, কাপ্তাই রাস্তার মাথা, খাজা রোড, মিয়াখাননগর, প্রবর্তক মোড়, মেহেদীবাগ, ষোলশহর ২ নং গেট, মুরাদপুর, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, ছোটপুল-বড়পুল, গোসাইলডাঙ্গা, বৃহত্তর হালিশহর, হালিশহরের অনেক এলাকা এখন পানির নিচে। এসব এলাকার প্রধান সড়কের কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর, আবার কোথাও বুক ছুঁই ছুঁই পানিতে তলিয়ে গেছে।
বৃহত্তর হালিশহর ছাড়াও আগ্রাবাদ, বেপারিপাড়া, হাজিপাড়া, মোল্লাপাড়া, সিডিএ আবাসিক এলাকায় প্রধান সড়কগুলো কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব বিভিন্ন এলাকায় ডিঙি নৌকায় মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছতে দেখা যায়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রাংক রোডের মনসুরাবাদ এলাকায় ডুবে যাওয়ায় দূরপাল্লার সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে কয়েকশ যানবাহন আটকা পড়ে তীব্র যানজট লেগে আছে। অফিসপাড়া খ্যাত আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এলাকায় পানি জমে যাওয়ায় অফিসগামী কর্মকর্তা-কর্মচারী, পথচারী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম-হাটহাজারি সড়কের মুরাদপুর থেকে আতুরার ডিপো পর্যন্ত এবং কাপাসগোলা রোড, কেবি আমান আলী রোড, নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটি, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনের কে বি ফজলুল কাদের চৌধুরী রোড, প্রবর্তক মোড়, শুলকবহরসহ প্রায় সব এলাকা জলমগ্ন।
মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল খালেক বলেন, ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজের কারণে সড়কের বিশাল অংশজুড়ে টিন দিয়ে ঘেরা দিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া মুরাদপুর থেকে সিএনবি কলোনি পর্যন্ত সড়কজুড়ে খানাখন্দে ভরা। কোমর পানির কারণে দুপুরে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়েছে। এসময় ভাঙাচোরা সড়কে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হোঁচট খেয়ে চলতে হচ্ছে।
ইপিজেডের ভেতরে বৃষ্টির পানি হাঁটু ছাড়িয়ে গেছে জানিয়ে মোহাম্মদ সুজন বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ইপিজেডের ভেতরের হাঁটু জল পেরিয়ে আগ্রাবাদ, লালখান বাজার হয়ে কর্নেলহাট এসেছি। অনেকে এখনো অফিসে আটকে আছে।’