নিজস্ব প্রতিবেদক::খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ চট্টগ্রাম সরকারী চারুকলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর রীতা দত্ত বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর আরাধ্য সোনার বাংলা গড়তে আজকের শিশু ও কিশোরদের কল্পনার জগতকে প্রসারিত করতে হবে। তাদের মন হবে, অসীম আকাশের মত উদার। তাদের চিন্তান ও মননকে কিছুতেই শৃঙ্খলিত করা যাবে না।
তিনি গতকাল সকালে বিশ্ব শিশু দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম জেলা শিশু একাডেমী আয়োজিত প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। শিশু-কিশোরদের উপর একাডেমিক বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বইয়ের ওজন তাদের শরীরের ওজনের চেয়ে বেশি। অভিভাবকরা চান, তাদের সন্তানরা পরীক্ষায় প্রথম হোক। এই প্রথম হওয়ার মধ্যে কোনো লাভ নেই। মনে রাখতে হবে, মাশরাফি-সাকিব-মুশফিক, কৃষ্ণা ও সালমারা কখনো পরীক্ষায় প্রথম হননি।আজ সারা বিশ্ব তাঁদের চেনে।
তিনি শিশু-কিশোরদের চারুকলা চর্চার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, ছবির ভাষা চিরন্তন। অক্ষর-জ্ঞান সবার আগেই শিশুরা ছবিতে মনের ভাব প্রকাশ করে। অথচ দুঃখের বিষয়, জে.এস.সি-তে ছবি আঁকার পাঠ তুলে দেয়া হয়েছে। এতে আমাদের সন্তানদের মানস জগতের ক্ষতি হলো। এই আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা উচিত। বিশেষ অতিথির ভাষণে শিশু সাহিত্যিক নাছের রহমান বলেন, আজকের শিশু আগামীদিনের পরিণত মানুষ। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-বিজ্ঞান সব ক্ষেত্রে আগামী বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে আজকের শিশুরাই। তাই শিশুরা পিতা-মাতার পরম আরাধনার ধন হলেও, প্রকৃতপক্ষে তারা রাষ্টেরই সম্পদ।
বিশ্ববিবেক জাতিসংঘকেও শিশুদের নিয়ে ভাবতে হয়, শিশু অধিকার সনদ প্রণয়ন করতে হয়। বিশ্ব পরিমন্ডলে শিশুর অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ ঘোষণা করে। এটি শুধু সনদ নয়, মানবাধিকার দলিল। বাংলাদেশ এ সনদে অনুস্বাক্ষরকারী প্রথম ২২টি দেশের অন্যতম। গুরুত্বপূর্ণ এর সকনদের গর্বিত অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশ শিশুদের আলোকিত নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে স্বক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।
ইলমার নির্বাহী পরিচালক নারী নেত্রী জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, সকল শিশুর জন্য সব সুযোগ ও সমঅধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে জাতির সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলাই এসব প্রচেষ্টার প্রধান লক্ষ্য। বিশেষ করে গ্রামের মেয়ে শিশুদের এগিয়ে চলার বড় বাঁধা বাল্যবিবাহ। বাল্যবিবাহে মেয়ে শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। এ বিষয়ে সরকার সচেতন রয়েছে। আইন হয়েছে বাল্যবিবাহ রোধে। তবে শুধু সরকারী পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। শিশুর যাবতীয় অধিকার বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পিতা-মাতা, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সকলের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন অত্যন্ত জরুরি। বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, বঙ্গবন্ধুর মন ছিল শিশুদের মতই সারন্যে ভরা। শিশুদের মনের কথা তিনি বুঝতেন।
অথচ একটি অপশক্তি শিশুদের মন থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলতে চেয়েছিল, কিন্তু তা সম্ভব হয় নি। শিশু প্রতিনিধি সানজিদা রহমান মিম এর সভাপতিত্বে স্বাগতা বড়–য়া নদী’র সঞ্চালনায় ‘শিশু পেলো অধিকার, খুলবে নতুন বিশ্বদ্বার’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে অনুষ্ঠিত বিশ্ব শিশু দিবসের আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা শিশু একাডেমরি পরিচালক ও সংগঠক নার্গিস সুলতানা। শিশুদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন, শিশু আমনত আবরার। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত পাঠ করেন- শিশু প্রতিনিধি মঈনুদ্দিন, পবিত্র গীতা পাঠ করেন- মিশন চক্রবর্ত্তী।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন শিশু একাডেমির লাইব্রেরিয়ান কুমকুম বড়–য়া, কর্মকর্তা আবদুল খালেক, প্রশিক্ষক নৃত্যশিল্পী শুভ্রা সেনগুপ্তা, সোমা বোস, ফজল আমিন শাওন, সংগীত শিল্পী শহিদুল্লাহ কাউসার, অনামিকা তালুকদার, চিত্রকলা প্রশিক্ষক তানভীরুল ইসলাম নাহিদ, অভিনয় শিল্পী নাজমুন নাহার সেজুতি প্রমুখ। আলোচনা সভা শেষে বিশ্ব শিশু দিবসে শিশুদের নিয়ে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ র্যালী শিশু একাডেমি থেকে বেরিয়ে ২নং গেইট, প্রবর্তক মোড় হয়ে শিশু একাডেমিতে ফিরে এসে দুপুরে শিশুদের নিয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অনাথ শিশুদের মাঝে পুষ্টিকর উন্নতমানের খাবার বিতরণ করা হয়।