চট্রগ্রামে নতুন থানা স্থাপনের উদ্যোগ

0

নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় নতুন দশটি থানা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে চারটি নতুন থানার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আরও দু’টি নতুন থানার প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে জেলা পুলিশ। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) পক্ষ থেকেও চারটি থানা বাড়ানোর প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়েছে।

দূরত্বের কারণে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার যেসব এলাকার মানুষ পুলিশের সেবা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নতুন দশটি থানা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

সিএমপির উপ কমিশনার (সদর) ফারুক আহমেদ বলেন, নগরীতে আমাদের এমন কয়েকটি থানা আছে যেগুলোর লোকেশন বসতি থেকে অনেক দূরে আবার জেলার থানার যে লোকেশন তাদের থেকেও দূরে। ওই জায়গাগুলোতে দেখা যাচ্ছে যে ক্রাইম বেড়ে যাচ্ছে। কারণ সেখানে পুলিশের উপস্থিতি কম। এজন্য ওই জায়গাগুলোকে কেন্দ্র করে আমরা নতুন চারটি থানার প্রস্তাব করেছি।

১৯৭৮ সালে ছয়টি থানা নিয়ে শুরু হয়েছিল সিএমপির কার্যক্রম। ২০০০ সালের পর থানার সংখ্যা ১০টি বাড়ানো হয়। ২০১৩ সালে বাড়ানো হয় আরও ৪টি। বর্তমানে মোট ১৬টি থানায় নিয়ে চলা সিএমপি আরও চারটি থানা যুক্ত করতে চায়।

প্রস্তাবিত চারটি নতুন থানার একটি হচ্ছে ভাটিয়ারি। নগরীর আকবরশাহ ও জেলার সীতাকুণ্ড থানার ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত হবে এ থানা। আকবরশাহ থানার ছলিমপুর ইউনিয়নের আংশিক, সীতাকুণ্ড থানার ছলিমপুর ইউনিয়নের আংশিক, ভাটিয়ারি এবং সোনাইছড়ি ইউনিয়নের সম্পূর্ণ অংশ থাকবে ভাটিয়ারি থানার ভেতর। এই থানার আওতায় থাকবে পুলিশের একটি তদন্ত কেন্দ্র। ভাটিয়ারি থানা এলাকার জনসংখ্যা ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৯৩২ জন।

আরেকটা হবে কুয়াইশ থানা। নগরীর চান্দগাঁও ও জেলার হাটহাজারী থানার ৪৩ বর্গকিলোমিটার অংশ নিয়ে গঠিত হবে নতুন এ থানা। হাটহাজারী থানার উত্তর মাদার্শা, দক্ষিণ মাদার্শা, শিকারপুর, বাথুয়া, কুয়াইশ, বুড়িশ্চর নেহালপুর আংশিক এবং চান্দগাঁও থানার ৫ নম্বর মোহরা ওয়ার্ডের কিছু অংশ এ থানার মধ্যে পড়বে। এ থানার আওতায় জনসংখ্যা আছে ৪ লাখ ৭০ জন। থানার আওতায় থাকবে একটি ফাঁড়ি ও দুটি পুলিশ বক্স।

শিকলবাহা থানা। এই থানা স্থাপন করা হবে নগরীর কর্ণফুলী, জেলার বোয়ালখালী ও পটিয়ার থানার ১৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে। এই থানার এলাকা হচ্ছে, বোয়ালখালী থানার পশ্চিম গোমদণ্ডী ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড সম্পূর্ণ। বোয়ালখালী পৌর এলাকার ৭, ৮, ও ৯ নম্বর ওয়ার্ড সম্পূর্ণ। শাকপুরা ইউনিয়নের ১ থেকে ৫ নম্বর ওয়ার্ড সম্পূর্ণ। পটিয়া থানার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের ৪ থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ড সম্পূর্ণ। কুসুমপুরা ইউনিয়নের ১, ২, ৪, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড সম্পূর্ণ। কুলাগাঁও ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদনগর অংশ ব্যতিত বাকি ৯টি ওয়ার্ড সম্পূর্ণ। ৭ নম্বর জিরি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের অংশ (মোহাম্মদনগর ও কটরপাড়া গ্রাম)। শিকলবাহা ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড সম্পূর্ণ এবং নগরীর কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা ইউনিয়নের তিনটি ওয়ার্ড সম্পূর্ণ। এর জনসংখ্যা ৪ লাখ ৭০ হাজার। থানার আওতায় গড়ে তোলা হবে তিনটি ফাঁড়ি এবং একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প।

সিএমপি প্রস্তাবিত সর্বশেষ থানাটি হচ্ছে ফতেয়াবাদ থানা। নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এবং জেলার হাটহাজারীর ১৬ দশমিক ৫৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে নতুন এ থানা স্থাপন করা হবে। এই থানার মধ্যে থাকবে হাটহাজারী থানার ১১ নম্বর ফতেপুর ইউনিয়নের ৬, ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজপট্টি, ভবানিপুর, নেহালপুর, ১২ নম্বর চিকনদণ্ডী ইউনিয়নের খন্দকিয়া গ্রাম, ফতেয়াবাদ, চৌধুরীহাট, বড়দিঘিরপাড়, লালিয়ারহাট, আমানবাজার, সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড এবং ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডের কিছু অংশ। এর জনসংখ্যা ৪ লাখ ৩১ হাজার ৭৪৮ জন। এ থানার আওতায় থাকবে একটি ফাঁড়ি ও একটি পুলিশ বক্স।

সিএমপির উপ কমিশনার (সদর) ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর চারটি নতুন থানা গঠনের প্রস্তাবের বিষয়ে কোন আপত্তি আছে কিনা তা জানতে চেয়ে জেলা পুলিশের কাছে চিঠি দিয়েছে সিএমপি। প্রস্তাবিত চারটি থানার মধ্যে যেহেতু জেলার বড় অংশকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সেজন্য তাদের অনাপত্তি থাকা জরুরি।

তবে অনাপত্তি চেয়ে চিঠি পাঠানোর তিন মাস পেরিয়ে গেলেও জেলা পুলিশের কাছ থেকে এখনও কোন জবাব পায়নি সিএমপি। জেলার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের নগরীর সঙ্গে অন্তর্ভূক্ত হতে আপত্তির কারণে জবাব পাঠানো যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ সূত্র।

এদিকে স্বাধীনতার পরপরই ১৪টি উপজেলায় ১৪টি থানা নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের। চার বছর আগে মিরসরাইকে ভেঙ্গে জোরারগঞ্জ এবং ফটিকছড়িকে ভেঙ্গে ভূজপুর থানা স্থাপন করা হয়। ১৬ থানায় জনবল আছে আড়াই হাজার। বিশাল চট্টগ্রাম অঞ্চলের জনসংখ্যা বেড়ে এখন ৮০ লাখে পৌঁছেছে। এ অবস্থায় সীমিত জনবল দিয়ে জেলার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা পুলিশের পক্ষে দুরূহ হয়ে পড়েছে।

এর সঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেও পুলিশকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই বাস্তবতায় যে চারটি থানার প্রস্তাব ইতোমধ্যে জেলা পুলিশ পাঠিয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে হাটহাজারী থানাকে ভেঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থানা স্থাপন।

বাকি তিনটি হচ্ছে রাঙ্গুনিয়াকে ভেঙ্গে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া, রাউজানকে ভেঙ্গে দক্ষিণ রাউজান এবং পটিয়া থানাকে ভেঙ্গে কালারপোল থানা।

নতুন থানা ছাড়াও জেলা পুলিশ কমপক্ষে আরও আটটি তদন্ত কেন্দ্র ও ফাঁড়ি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, থানার সংখ্যা বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যেই আমরা চারটি থানার প্রস্তাব পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।

সাতকানিয়া এবং বাঁশখালী থানাকে ভেঙ্গে আরও দু’টি নতুন থানা করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই প্রস্তাবও প্রস্তুত করা হয়েছে। শীঘ্রই প্রস্তাব পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

সরকারের পক্ষ থেকে সিএমপির জন্য ইতোমধ্যে অতিরিক্ত এক হাজার ২০০ এবং জেলার জন্য অতিরিক্ত ছয়’শ জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে এসব জনবল এখনও আসেনি। নতুন জনবলের সঙ্গে নতুন থানারও অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সিএমপি কমিশনার মোহা. আব্দুল জলিল মন্ডল।

তিনি বলেন, মানুষ তো প্রথমেই যে কোন বিপদে-আপদে পুলিশের সহযোগিতা চায়। সুতরাং থানার সংখ্যা যদি বেশি হয় তাহলে সেবাটা আমরা একেবারে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে পারব। এজন্য আরও চারটি থানা বাড়ানো খুব জরুরি। নতুন জনবল পেলে থানা বাড়ানো হলেও আর জনবল লাগবে না।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.