চন্দনাইশে গরু চুরির হিড়িক : জনমনে আতংঙ্ক
নিজস্ব সংবাদদাতা,চন্দনাইশ : চন্দনাইশে গরু চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় এলাকাবাসীরা নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। বিশেষ করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে এবং গুলি করে আহত করে গরু চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সৃষ্টি হয়েছে। গত ১৫ দিনে কয়েক দফা গরু চুরির ঘটনা ঘটে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পৌরসভার নাথ পাড়ার অমূল্য নাথের ৩টি, ২৫ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ট্রাক থামিয়ে ৮টি মহিষ ছিনতাই, ২১ ফেব্রুয়ারি জামিরজুরী থেকে ডা. নুরুদ্দীনের ১টি, আলমগীরের ২টি, পূর্ব দোহাজারী শাহাদাত হোসেনের ১টি গাভী, ২টি ছাগল, মায়ারাম দীঘির বিধবা মহিলার ১টি গরু, ১টি ছাগল চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। এ সময় গৃহকর্তা আশরাফ মিয়া বাঁধা দিলে তাকে গুলি করে আহত করা হয়।
সম্প্রতি চন্দনাইশ পৌরসভা ও বরকল এলাকায় এক রাতে ৯টি গরু চুরি করে নিয়ে গেছে চোরের দল। এ সময় গরু চোরদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে বরকলে ৪ জন গুলিবিদ্ধ, ২ জন আহত ও ১ জনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে জনতা।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, গত ১ মার্চ গভীর রাতে অস্ত্রধারী ৮/১০ জন গরু চোরের দল উপজেলার বরকল কানাইমাদারী ছদুরু বাড়ীতে কুলছুমার গোয়াল ঘরে হানা দেয়। চোরের দল এ সময় কুলছুমার ২টি ষাঁড় ও ২টি গাভী চুরি করে পিকআপে উঠায়। এ সময় কুলছুমা টের পেয়ে শোর চিৎকার শুরু করে। আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে চোরের দল এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে। এ সময় তাদের ছোঁড়া গুলিতে কানাইমাদারীর কামাল উদ্দীনের স্ত্রী কুলছুমা আক্তার (৩৬), মৃত এয়াকুব নবীর ছেলে আজিজুল হক (৪৫), মৃত ফয়জুর রহমানের ছেলে জিয়াউ রহমান (৩৫), আবদুর রহিমের ছেলে খোরশেদ আলম (৩২) গুলিবিদ্ধ হয়।
এদের মধ্যে বাপ্পী ও রফিককে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হলেও, অপর ৪ জনকে চন্দনাইশ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তারা চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এ সময় চোরের দল একই এলাকার মৃত আবুল হাশেমের ছেলে নজরুল ইসলাম (৩০), নুরুল আমিনের ছেলে রায়হান চৌধুরী বাপ্পী (২৬) কে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করে আহত করে। গরু ৪টির আনুমানিক মূল্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বলে জানা যায়। কুলছুমা আক্তারের সনাক্ত মতে একই এলাকার মো. আয়ুবের ছেলে মোজাম্মেল হোসেন (৩৫) কে আটক করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করে।
এদিকে থানা বাউন্ডারের পাশে চন্দনাইশ হাজি পাড়ার ছিদ্দিক আলী, মোহাম্মদ আলী ও নাছির উদ্দিনের ৩টি ষাঁড় চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। যার আনুমানিক মূল্য ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এ সময় চোরের দলকে দেখতে পেলে একই এলাকার সামশুল আলম (৫৫) কে মুখের মধ্যে পিস্তল ঠেকিয়ে চুপ থাকতে বলে পিকআপ ভর্তি গরু নিয়ে পালিয়ে যায় চোরের দল। অপরদিকে চন্দনাইশ পৌরসভার পূর্ব জোয়ারা হাজী আবদুল মন্নানের গোয়াল ঘরের তালা ভেঙ্গে ২টি ষাঁড় চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। যার আনুমানিক মূল্য ১ লক্ষ টাকা।
এদিকে ১৯ ফেব্রুয়ারি জামিরজুরী থেকে ৮টি , ২০ জানুয়ারি মুরাদাবাদ সেলিমের খামার থেকে ৩টি অষ্ট্রেলিয়ান গরু চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। এ ব্যাপারে সেলিমের দায়ের করা মামলায় একই এলাকার মৃত আবদুল খালেকের ছেলে নুরুল ইসলাম বালা (৩৫) এবং রাখাল বালক বাঁশখালীর শাহাদাত হোসেন (২০) কে আটক করা হয়। পরবর্তীতে ৩১ জানুয়ারি শাহাদাত হোসেন গরু চুরির ঘটনা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দেয়। সে থেকে কাঞ্চননগর এলাকায় গরু চুরি বন্ধ হলেও চন্দনাইশ সদর, দোহাজারী, বরকল সহ বিভিন্ন এলাকায় গরু চুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতংকে রয়েছে কৃষক ও জনমনে।