বাঙালি জাতির জীবনে মুক্তিযুদ্ধ একটি উজ্জ্বল ইতিহাস- ঢাবি উপাচার্য

0

চট্টগ্রাম : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিকী বলেছেন, বাঙালি জাতির জীবনে মুক্তিযুদ্ধ একটি উজ্জ্বল ইতিহাস। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা বিশ্বের ইতিহাসে এক নতুন দিগন্ত উম্মোচনকারী অধ্যায়। পরাধীনতার নাগ পাস থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য কত কঠিন সংগ্রাম আর আত্মদান করতে হয়েছে, জানে তা বাঙালি। কিন্তু এই অবদান চিত্র ক্রমশ ধূসর হয়ে আসছে। “বাঙালির ইতিহাস নাই ” বলে একালের সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র আক্ষেপ করেছিলেন।

আর আজ বাঙালিকে দুঃখ করতে হয়-মুক্তিযুদ্ধের একটি পূণাঙ্গ ইতিহাস ৪৫ বছরেও রচিত হয় নি। সেই ত্রিশের দশকের বিপ্লবীদের স্মরণে গানের মত। ‘মুক্তির মন্দির সোপান তলে, কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে।‘ বাংলাদেশের স্বাধীনতা তথা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কেবলই অশ্রজলে লেখা। তথ্য গবেষণা সমৃদ্ধ তেমন কোন কাজ হয়নি বলে একালের প্রজন্ম জানে না সঠিক ইতিহাস, সঠিক তথ্য। অথচ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা যাবে না বলে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বার বার উচ্চারিত হয়। কিন্তু তাদের উপলবদ্ধিতে আসে না যে ইতিহাস রচিত হয়নি বলেই বারবার বিকৃতির শিকার হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

ইতিহাস ভুলিয়ে দেয়ার কাজটি হয়েছে দু’যুগেরও বেশি সময় ধরে। আর সে কারণেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ইতিহাস পৌছে নি। রচনার কাজ প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে পড়ে। তিনি আজ নগরীর নজরুল স্কয়ার ডিসি হিল প্রাঙ্গনে বঙ্গবন্ধু বইমেলা ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসবের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি আরো বলেন পঁচাত্তরের পরবর্তী সামরিক জান্তাশাসক জিয়াউর রহমান তার উত্তরসুরিরা একদিকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার পথটি রুদ্ধ করে দিয়ে বিকৃত এক ইতিহাসকে উপস্থাপন করেছিল এমনকি তারা গণহত্যাকারী পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে হানাদার হিসেবে উচ্চারণেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, নানা বিভ্রান্তি বেড়াজাল ও বিভ্রমের কুয়াশায় মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ও আদর্শ এবং অঙ্গীকারকে ভুলুণ্ঠিত করে পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশকে যেভাবে ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল তাতে হানাদারদের ধূসর যুদ্ধাপরাধীরাও সমাজ, রাজনীতিতে, ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছিল। ৭১ এর পরাজিত শক্তিরা ক্ষমতার অলিন্দে বসে জনমত থেকে মুক্তিযুদ্ধের সবকিছু মুছে দিতে পেরেছিল এবং মুক্তিযোদ্ধাদের হয়রানি, নির্যাতন, গ্রেফতার. গুম হত্যা সবই চালিয়েছিল সামরিক জান্তা শাসক ও একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা।

আজ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার রাষ্টীয় ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানে সম্মানিত এবং মূল্যায়ন করছেন। দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন। বাংলাদেশকে বিশ্বের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত করে বাঙালি জাতির সম্মান রক্ষা করছে।

বঙ্গবন্ধু বইমেলা ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব উদযাপন পরিষদের কো-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিকের সভাপতিত্বে ও মেলার প্রধান সমন্বয়কারী সংষ্কৃতিকর্মী খোরশেদ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন রাঙ্গুনীয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো: আলী শাহ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অরুণ চন্দ্র বণিক, সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি ড. মাহমুদ হাসান, সাপ্তাহিক স্লোগান সম্পাদক মো: জহির, রাজনীতিবিদ স্বপন সেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামী লীগ নেতা দীপঙ্কর চৌধুরী কাজল, মেলা পরিষদের কার্যকারী মহাসচিব সুমন দেবনাথ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত, এডভোকেট টিপু শীল জয়দেব, সংস্কৃতিকর্মী সুজিত দাশ অপু।

আলোচনা সভার শুরুতেই চট্টগ্রামের আলোকিত মানুষ বরণ্য সঙ্গীত শিল্পী আবদুল গফুর হালির স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিকাল ৩টায় দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন সোসাইটি সঙ্গীত বিদ্যালয় একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন বেতানর ও টেলিভিশন ও নব প্রজন্মের শিল্পীবৃন্দ। আলোচনা সভা শেষে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন নিত্যম একাডেমী, বৃন্দ আবৃত্তি পরিবেশন করেন তারুণ্যের উচ্ছাস, শব্দনোঙর আবৃত্তি সংগঠন, বিশেষ সঙ্গীতানুষ্ঠান পরিবেশন করেন বাংলাদেশ টেলিভিশন বেতার শিল্পীবৃন্দ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.