লন্ডনের দিকে ছুটছেন বিএনপি নেতারা

0

সিটিনিউজবিডি : দেশ ও প্রবাসের বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে একে একে লন্ডনের দিকে ছুটে চলেছেন বিএনপির নেতারা। এই স্রোতে দলের অনেক যোগ্য ও ত্যাগী নেতাও যেমন রয়েছেন, তেমনি রয়েছেন সুবিধাবাদী সুযোগ সন্ধানী নেতাও। বিএনপি চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের সামনে তারা হাজির হয়ে বিভিন্নভাবে নিজেকে উপস্থাপন যেমন করছেন, তেমনি দেশে নিজেদের বলয় ও সাধারণ নেতাকর্মীদের কাছে গুরুত্ব জাহির করাকেও অনেকে মিশন হিসেবে নিয়েছেন।

বিএনপি সূত্রে জানা যায়, চোখ ও পায়ের চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘদিন ‘বিচ্ছিন্ন পরিবারের’ পূনর্মিলনের উদ্দেশ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৬ দিনের সফরে লন্ডনের উদ্দেশ্যে গত মঙ্গলবার দেশ ছেড়েছেন। আগামী ১ অক্টোবর তার দেশে ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে তিনি চিকিৎসার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করবেন।

সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের সফর সঙ্গী হিসেবে ওই দিন তার সঙ্গে লন্ডন গেছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও গত সিটি নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। আগে থেকেই ব্যাঙ্ককে অবস্থান করা আরেক উপদেষ্টা বিশিষ্ট শিল্পপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টু দুবাই বিমান বন্দর থেকে দলীয় প্রধানের সফর সঙ্গী হন। ঢাকা থেকে গত মঙ্গলবার অর্থনীতি বিষয়ক একটি সেমিনারে যোগ দিতে দিল্লি যান চেয়ারপারসনের আরেক উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। তিনিও শনিবার দিল্লী থেকে লন্ডনে পৌঁছেছেন। এরমধ্যে অবশ্য ড. মঈন খান গতকাল শনিবার দেশে ফিরে এসেছেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের অনেকেই এখন লন্ডনে। আবার কেউ-কেউ রয়েছেন লন্ডনের পথে। এই তালিকা প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে।

জানা যায়, দলীয় প্রধানের যুক্তরাজ্য সফর ও সেখানে প্রায় দু‘সপ্তাহ অবস্থানকে কেন্দ্র করে প্রবাসী নেতারাও ছুটে চলেছেন লন্ডনের দিকে। অনেকেই দীর্ঘদিন পর একে মনে করছেন দলীয় প্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ হিসেবে। বিশেষ করে অন্য কোনোভাবে না হোক অন্তত ঈদকে কেন্দ্র করে তার ও তার ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত হবে। ঈদ পরবর্তি শুভেচ্ছা বিনিময়ে সালাম বিনিময়ের সুযোগে অন্তত নিজেদের কথা দলীয় প্রধানকে বলা যাবে।
সেই আশায় ইতোমধ্যেই দলে দলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রবাসী নেতারা লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড়াল দিচ্ছেন। অনেকে পৌছেও গেছেন। ইউরোপ, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ৫টি দেশ ও সুদূর মধ্যপ্রাচ্য থেকেও প্রবাসী নেতারা নেত্রীকে এক নজর দেখা ও সাক্ষাতের আশায় সেখানে ছুটে যাচ্ছেন।

নেতাকর্মীরা বলছেন, তারেক রহমান বিএনপির ভবিষ্যৎ কান্ডারী। বিএনপি চেয়ারপারসন দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়ে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। এ সফরে তিনি তারেকের সঙ্গে দল পুনর্গঠন ও দলের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করবেন; এটাই স্বাভাবিক। এছাড়া দল পুনর্গঠনে ত্যাগী ও পরীক্ষিতরা অগ্রাধিকার পাবেন এবং সুবিধাবাদীরা বিপাকে পড়বেন বলেও মনে করেন তারা। এজন্য দলে যে শুদ্ধি অভিযান চালানো প্রয়োজন তা বর্তমান সফরেই সম্পন্ন হবে বলেও বিশ্বাস নেতাকর্মীদের। এছাড়া অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নতুন কমিটিতে কারা কারা আসবেন তাও চূড়ান্ত হবে। সেই বিশ্বাস থেকেই দলে দলে নেতাকর্মীরা লন্ডনের উদ্দেশ্যে ছুঁটে যাচ্ছেন।

স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশ নরওয়ে বিএনপির সভাপতি বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা বাদল ভূইয়া এ সম্পর্কে বলেন, আমরা প্রবাসীরা দলের জন্য সব সময় কিছু ইতিবাচক ভূমিকা রাখার চেষ্টা করি। চেষ্টা করি দেশের বর্তমান ‘ভোটারবিহীন অবৈধ সরকারের’ বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিরোধী দলের রাজনীতিতে বাধা দেওয়ার অপচেষ্টাগুলো বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশসমূহের কাছে পৌঁছে দিতে। ইউরোপসহ অন্যান্য উন্নত রাষ্ট্রসমূহের সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রী, পদস্থ কর্মকর্তা ও মানবাধিকার সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত করে বিভিন্ন প্রামাণ্য তথ্য-উপাত্তও আমরা সরবরাহ করে থাকি, যাতে দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তারা মহাজোট সরকারকে চাপ সৃষ্টি করেন। আর এসব আমরা করে থাকি, সম্পূর্ণ নিজেদের উদ্যোগে। প্রবাসে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ খরচ করে। দল বা কোনো নেতার সহযোগীতা আমরা যেমন কখনও পাই না, তেমনি এসব আমরা চাইও না। বিএনপির প্রতি নিজেদের ভালবাসা থেকে আমরা এসব করে থাকি। শুধু চাই দলের কাছে একটু ন্যুনতম সন্মান ও স্বীকৃতি।

বাদল বলেন, একথা বলতে দ্বিধা নেই, দেশে গেলে আমরা দলের কাছ থেকে তেমন কোনো সন্মান পাই না। বিশেষ করে ম্যাডামের (চেয়ারপারসন) গুলশান কার্যালয়ে আমরা নানাভাবে চেষ্টা করেও ওনার সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগটুকুও কখনও পাই না। সেখানকার কিছু অসাধু নেতা নামধারীরা আমাদের এ সুযোগটুকু দেন না। তাই আমরা লন্ডনে এসেছি। এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই। আমরা আশা করি ম্যাডামের সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারব। মন খুলে দুটো কথাও বলতে পারব।

মধ্যপ্রাচ্য বিএনপির সমন্বয়কারী ও সৌদি আরব বিএনপির সভাপতি আহমদ আলী মুকিব, সুইডেন বিএনপির সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ ঝিন্টু, ডেনমার্ক বিএনপির এক অংশের সভাপতি আহমেদুল হক কর্নেল, আরেক অংশের সভাপতি গাজী মনির আহমেদ, ফিনল্যান্ড বিএনপির একাংশের সভাপতি জামান সরকার মনির, আরেক অংশের সভাপতি কামরুল হাসান জনি, জার্মান বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজাসহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে প্রবাসী বিএনপি নেতাদের অনেকেই ইতোমধ্যে সেখানে ছুটে গেছেন; অনেকে পথে রয়েছেন।

এসব নেতা ছাড়াও লন্ডনে দলীয় চেয়ারপারসনের সফর উপলক্ষে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যুক্তরাজ্যে আসছেন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, আন্তর্জাতিক-বিষয়ক সম্পাদক এহসানুল হক মিলনসহ আরও অনেকে।

এদিকে, নেতাদের বানের পানির মতো লন্ডনের উদ্দেশ্যে ছুটে যাওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে ব্যাপক আলোচনা। এর পক্ষে-বিপক্ষে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।

বিএনপির অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী মুন্নি চৌধুরী মেধা তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, দলের অনেক বড় বড় কাতলা মাছ লন্ডন গিয়া তেলের বোতল নিয়া মালেক ভাইর টাক মাথায় মাখতাছে। বেচারা যেকোন দিন তেল খাইয়া মরে। তেলের রাসায়নিক প্রতিফলন হিসেবে, ছবিতে বেশ চকচকা দেখা যায়।এসব রুই কাতলা লন্ডন যাবার প্লেন ভাড়া, বড় বড় হোটেল ভাড়া দিতে পারে কিন্তু এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের মামলার খরচ চালাইতে পয়সা থাকে না। এরা সার্টিফিকেট সংবলিত নেতা হলে কি হবে তা জাতি জানতে চায়?????

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা মাহতাব উদ্দিন জিমি তার ওয়ালে লিখেছেন, ‘রবরবে অবস্থা লন্ডন। দেশ নেত্রী ও তারেক রহমানের সামনে। দলের অতি সামান্য কর্মীরও এটা সহজে অনুমেয়, আজ অবধি দলের কোন কর্মসূচিতেই যেসকল নেতারা বিন্দু মাত্র আলো ছড়াতেও ব্যর্থ হয়েছে; তারা এখন লন্ডনে নিজের পারফর্মেন্সের হাইভোল্টেজ সোঅফে ব্যস্ত। তারা এখন নিজেদের গত ৯ বছরের রাজনৈতিক আন্দোলন লাইফের সবচেয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। লন্ডনের মোবাইল কোম্পানি ও লন্ডন বিএনপির নেতাদের ইনকামিং কল হঠাৎ বেড়েছে। দেশ নেত্রী ও তারেক রহমানের খাবার টেবিলে নাম নেয়ার জন্য বা নাম পাঠাবার জন্য আশা ভরসার সঙ্গে টাকাও অদৃশ্যলোকে ঘুরপাক খাচ্ছে।
জিমি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে আরও লিখেছেন,
প্রিয় তারেক রহমান-

আপনি একনাগাড়ে দীর্ঘ আট বছর দেশের বাইরে। লন্ডন থেকে ফোনালাপে দলের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। তাছাড়া ‘ভাইয়ার লোক’ বলে পরিচিত যাদের সঙ্গে আপনি যোগাযোগ করার কথা, তারা দলের কর্মকান্ডের সঙ্গে কতটা জড়িত আর কতটা ল্যাং মারামারির সঙ্গে- সেটা অবশ্যই আপনি আরেকটু বিবেচনা করে দেখবেন।

লাখ লাখ টাকা খরচ করে যারা লন্ডনে গিয়ে আপনার সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করেন, তারা যে দলের নিবেদিতপ্রাণ, আদর্শবাদী, ত্যাগী নেতাকর্মী নন তা বলাই বাহুল্য। সৎ, ত্যাগীরা ‘নেতা-দর্শনে’ এত টাকা পাবে কোথায় বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।

জিমি আরও লিখেছেন, যারা যান, দলের লড়াকু মাঠকর্মী, তৃণমূল সংগঠনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ কতটুকু তা সহজেই বোধগম্য।
আর যারা বিভিন্ন পর্যায়ে নেতা বানানোর জন্য, এমন কি মনোনয়নের জন্যও ‘আপনার’ কাছে যাদের নাম সুপারিশ করবেন, তারাও যে কি যোগ্য, আদর্শবাদী, ত্যাগী, জনপ্রিয় তাও তৃণমূলের দিকে তাকিয়ে আরেকটি বার বিবেচনা করবেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.