নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার বার্মিজ সেনাবাহিনীর

0

আন্তর্জাাতিক ডেস্ক:: মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর জাতিগত নিধনের আভ্যন্তরীণ তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। এতে এ সংকটের জন্য সেনাবাহিনীর প্রতি যে অভিযোগ তা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা হয়েছে। বিবিসির সংবাদ।

এ তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বার্মিজ সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে হত্যা করা, তাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া, নারীদের ধর্ষণ এবং সম্পত্তি লুটপাট করার অভিযোগ আমলে নেয়নি তারা।

যদিও জাতিসংঘ সাম্প্রতিক জঘন্যতম এ বর্বর নিধনযজ্ঞকে “পাঠ্যপুস্তকের উদাহরণ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত” বলে অভিহিত করেছিল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পরে এ প্রথম কোন তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে মিয়ানমার। তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, প্রতিবেদনটির মাধ্যমে সেনাবাহিনী এক ধরণের “হোয়াইটওয়াশ”র চেষ্টা চালিয়েছে।

ফেসবুকে পোস্টের একটি বিবৃতিতে  সামরিক  কর্তৃপক্ষ বলেছে যে, “তারা কয়েক কয়েক হাজার গ্রামবাসীর সাক্ষাতকার নিয়েছেন যারা এ ধরণের কর্মকাণ্ডের কথা অস্বীকার করেছেন। একইসাথে তারা সেনাবাহিনীর সাথে ঐক্যমত পোষণ করেছেন। তাদের মতে-“নির্দোষ গ্রামবাসীদের” ওপর গুলি চালানো হয়নি, নারীদের ওপর কোন ধরণের “যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ” করা হয়নি, কোন গ্রামবাসীকে হত্যা করা হয়নি, গ্রামবাসীদের কাছ থেকে কোন রৌপ্য, স্বর্ণ, যানবাহন বা গবাদি পশু চুরি যায়নি, মসজিদে আগুন লাগানো হয়নি, কাউকে হুমকি ধামকি দিয়ে বের করে দেয়া হয়নি এবং কোন বাড়িঘরে ঢুকে অগ্নিসংযোগ করা হয়নি।”

এ প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে বাঙ্গালি হিসেবে উল্লেখ করে তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে দাবী করা হয়। ঘরবাড়ি অগ্নিসংযোগের জন্য তাদেরকে দায়ী করা হয়। বলা হয়, এসব সন্ত্রাসীদের ভয়ে এসব হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে গেছে এবং তাদের অনেককে হত্যা করা হয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একজন মুখপাত্র বলেন,  ‘এর মাধ্যমে সামরিক বাহিনী পরিষ্কার করে দিয়েছে যে জবাবদিহিতা নিশ্চতকরণের ব্যাপারের এতে কোনধরণের ইঙ্গিত নেই।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘এখন এ ধৃষ্টতাপূর্ণ নির্যাতনগুলির বিচার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলির পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’

গত আগস্টের শেষ সপ্তাহে সীমান্ত চৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার পর রাখাইন অঞ্চলে সেনাবাহিনী ও স্থানীয় উগ্রবাদী বৌদ্ধ সম্প্রদায় সমবেত অভিযান ও হামলায় চালায় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর। গণহত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়ন ও নির্যাতন থেকে বাঁচতে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষ প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে আসে তারা। জাতিগত নিধনের পাশাপাশি জ্বালিয়ে দেয়া হয় রোহিঙ্গাদের প্রতিটা গ্রাম। সেইসাথে সাম্প্রতিক সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন শরণার্থী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এ অঞ্চলে।

জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ অধিকাংশ শক্তিশালী রাষ্ট্র, মানবাধিকার সংগঠনের চাপে পড়লেও মিয়ানমান এ হত্যাযজ্ঞ থেকে নিজেকে নিবৃত করেনি। আন্তর্জাতিক মহল বারবার দেশটির স্টেট কাউন্সিলর সু চিকে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর জাতিগত নিধন বন্ধ করার আহবান করলে তিনি তাকে গুরুত্ব দেননি। এমন কি কোন মানবাধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘের প্রতিনিধিকে এই অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি মিয়ানমার সরকার।

এ ছাড়াও সর্বশেষ পরিস্থিতি অনুযায়ী এখনো প্রতি সপ্তাহে দেশটি থেকে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে বাংলাদেশের কক্সবাজারে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.