বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ রণকৌশলে অসাধারণঃ অনুপম সেন

0

সিটি নিউজ, চট্টগ্রামঃঃ  একুশ পদকপ্রাপ্ত. আন্তর্জাতিক সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. অনুপম সেন বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাধারার পরিচয় দিয়েছেন। রণকৌশলের দিক থেকে এই ভাষণ অসাধারণ। এই বক্তৃতা এখনো মানুষকে শিহরিত করে।

৭ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ বিশ্বের ১০টি ভাষণের অন্যতম। মাত্র ১৮ মিনিটের এই ভাষণটি ছিলো বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে অমোঘ নির্দেশনা এবং জেগে ওঠার মন্ত্র। মহাকাব্যিক এই ভাষণে একটি কথাও কম ছিলো না, বেশি ছিলো না। সেদিনের উত্তাল জনতরঙ্গে সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনায় যা অনিবার্য তা-ই বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছিল।

তিনি বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, চট্টগ্রাম জেলা আয়োজিত নগরীর জেলা  শিশু একাডেমী মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের মূল্যায়নমূলক “বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের জেগে ওঠার মন্ত্র“ শীর্ষক কথামালা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, অবৈজ্ঞানিক দ্বি-জাতি তক্তের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টির পরপরই যখন আমাদের ভাষা-সংস্কৃতি উপর হামলা সেদিন বঙ্গবন্ধু প্রথম উপলব্ধি করেছেন এই রাষ্ট্র কাঠামো জাতিগত বৈষম্য ও নিপীড়নমূলক। তাই এই রাষ্ট্রে বাঙালিদের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভভ নয়। প্রয়োজন বাঙালির স্বাধীন আবাস ভূমি।

এই লক্ষ্যপূরণে লড়াই-সংগ্রাম-আন্দোলনের ধাপ অতিক্রম করে মুক্তিসনদ ৬-দফা ঘোষণা করেন। তিনি এও জানতেন পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠী ৬-দফা মেনে নেবে না। ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে ৬-দফা একদফায় পরিণত হয়। তাই বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে শেষ বাক্য ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতিপর্ব।

তিনি আরো বলেন, ইউনেস্কো ৭ই মার্চের ভাষণটিকে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় এটা আজ সারা বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে অমূল্য রতন ও জেগে ওঠার মন্ত্র। তাই আজ আমরা গর্বিত। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মতই ৭ই মার্চ তাৎপর্যগতভাবে বিশ্বজনীন।

মূখ্য আলোচকের ভাষণে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, একটি অনিশ্চিত ও উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটি মহান মুক্তির সংগ্রামকে যৌক্তিক পরিণতির এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠে। বজ্রকণ্ঠে দৃপ্ত ঘোষণা ‘আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবানা’ বাঙালিকে সাহস ও শক্তিতে উজ্জীবিত করেছিলো।

সভাপতির ভাষণে সংগঠনের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য, সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষক নিয়াজ মোর্শেদ এলিট বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণটি বাঙালিকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছিলো এবং ভাষণটির ফলে নিরস্ত্র বাঙালি সশস্ত্র হয়েছিলো। পৃথিবীতে আর কোন নজীর নেই, একটি মাত্র ভাষণে কোন জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার।

সংস্কৃতিকর্মী নাজমুন নাহার সেজুতি’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধু ভাষণের কথামালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারন সম্পাদক সংস্কৃতিকর্মী মোহাম্মদ খোরশেদ আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল চৌধুরী, পাহাড়তলী থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার কামাল উদ্দিন, নগর যুবলীগের সদস্য সুমন দেবনাথ,

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল বশর, আকবর শাহ থানা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু সুফিয়ান, সাংস্কৃতিক সংগঠক শওকত আলী সেলিম, কুমকুম বড়ুয়া, আবদুল খালেক। এতে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী মুজিবুর রহমান, তানভীরুল ইসলাম নাহিদ, বিপ্লব চৌধুরী, বাবলু দাশ, কৃষ্ণা বিশ্বাস, কাজী শামীমা আলম, পীযুষ সরকার প্রমুখ।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বিশ্ব প্রামান্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত হওয়ায় জেলা শিশু একাডেমী থেকে এক বর্ণাঢ্য আনন্দ র‌্যালী প্রবর্তক মোড় হয়ে পুনরায় শিশু একাডেমী মিলনায়তনে এসে শেষ হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.