কাজী জাফর আর নেই

0

সিটিনিউজবিডি :  জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টায় রাজধানী গুলশানের বাসায় তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কাজী জাফর হৃদরোগসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তিনি তিন মেয়ে, স্ত্রী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

 কাজী জাফর আহমদের নামাজে জানাজা শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে। জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়ও তার আরেকটি জানাজা হতে পারে। তার ব্যক্তিগত সহকারী গোলাম মোস্তফা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

কাজী জাফরের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে সমবেদনা জানাতে গুলশানের বাসায় দলের নেতা-কর্মীরা ছুটে যান। তার বাসায় রয়েছেন দলের মহাসচিব প্রাক্তন মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. টিআই ফজলে রাব্বী, আহসান হাবিব লিংকন, এসএমএম আলম প্রমুখ।

কাজী জাফর আহমদ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির একাংশের চেয়ারম্যান ছিলেন। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে তিনি ‘নির্বাচন বর্জনের’ পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজের অনুসারীদের নিয়ে এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগ করে আলাদা দল গঠন করেন। যোগ দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের নেতৃত্বাধীন খালেদা জিয়ার জোটে। তিনি এই জোটের শীর্ষনেতাদের অন্যতম ছিলেন।

কাজী জাফর আহমদ ১৯৩৯ সালের ১ জুলাই কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের চিওড়া কাজী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মেধাবী ছাত্র হিসেবে তিনি খুলনা জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স ও এমএ (ইতিহাস) পাস করেন। তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে এমএ এবং এলএলবি কোর্স সম্পন্ন করার পরও জেলহাজতে থাকায় আর পরীক্ষা দিতে পারেননি।

কাজী জাফর আহমদ ১৯৫৯-৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বিভিন্ন সময়ে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৬২-৬৩ সালে অবিভক্ত পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬২ সালে সামরিক শাসন ও শরীফ শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে কাজী জাফর আহমদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ছাত্রজীবন শেষে তিনি শ্রমিক রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৭ সাল থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি ছিলেন। ১৯৭২-৭৪ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তখন ছিলেন ন্যাপের চেয়ারম্যান। এরপর ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি ইউনাইটেড পিপলস পার্টির (ইউপিপি) প্রথমে সাধারণ সম্পাদক ও পরে চেয়ারম্যান হিসেবে সক্রিয়ভাবে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্ব ও জাতীয় রাজনীতিতে বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন। কাজী জাফর ১৯৭৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিপরিষদের শিক্ষামন্ত্রী হন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টির জন্মলগ্ন থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৬-৯০ সালে তিনি জাতীয় পার্টির সরকারে পর্যায়ক্রমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বন্দর-জাহাজ ও নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের উপপ্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির রাজনৈতিক উপদেষ্টা, ১৯৮৯-৯০ সালে বাংলাদেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬-৯৬ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের উপনেতা ও ১৯৮৯-৯০ সালে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা ছিলেন। ১৯৮৬-৯৬ পর্যন্ত পরপর তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৯৯-২০০০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন সিডনিতে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে দক্ষিণ এশীয় ভূমণ্ডলীয় রাজনীতি বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।

খালেদা জিয়ার শোক

কাজী জাফর আহমদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার এ তথ্য জানান।

তিনি জানান, জাফর আহমদের মৃত্যুতে দেশ একজন বরেণ্য রাজনীতিবিদকে হারাল। খালেদা জিয়া মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

 

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.