আওয়ামীলীগ কমিটিতে শীগ্রই পরিবর্তন

0

সিটিনিউজবিডি :      ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বলে দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে। আগামী ২৯ ডিসেম্বর বর্তমান কমিটির মেয়াদ ফুরিয়ে যাচ্ছে।  একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবার জাতীয় কাউন্সিলে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসতে পারে। দলের সভাপতিমণ্ডলীতে ফিরতে পারেন বাদপড়া প্রবীণ নেতারা। ব্যর্থতার দায়ে বাদ যেতে পারেন বর্তমান কমিটির বেশ কয়েকজন তরুণ নেতা।

তবে ডিসেম্বরে কাউন্সিল হওয়ার প্রস্তুতি চললেও এখনও ২১ জেলার সম্মেলন করা যায়নি। অন্যদিকে ৫২ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও সেখানে কেবল জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, কোনো জেলাতেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়নি। যদিও দলীয় নেতারা বলছেন, ডিসেম্বরের আগেই বাকি জেলাগুলোর সম্মেলন শেষ করা হবে।

জাতীয় কাউন্সিলকে নিয়ে দলের ভেতরে গুঞ্জন আছে যে, সংগঠনের কলেবর বাড়তে পারে। দলের সভাপতিমণ্ডলীর ১৪ জনের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর বর্তমান সদস্য সংখ্যা হচ্ছে ১৫। সূত্রগুলো বলছে, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা বেড়ে ২০ জন হতে পারে। একইভাবে বর্তমান তিনজন যুগ্ম সম্পাদকের স্থলে পাঁচজন হতে পারে। সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা ২৯ থেকে বেড়ে ৩৫ হতে পারে।

দলটির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর। ওই কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার আগের কাউন্সিল হয় ২০০৯ সালের ২৬ জুলাই। ওই সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হন এবং সংগঠনের নতুন সাধারণ সম্পাদক হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

২০০৯ সালের জাতীয় কাউন্সিলে বেশিরভাগ তরুণকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। তবে বাস্তবে তরুণ নেতারা তেমন সফলতা দেখাতে পারেননি বলে দলের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা স্বীকার করেছেন। দলের প্রভাবশালী নেতা আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও প্রয়াত আবদুর রাজ্জাককে সভাপতিমণ্ডলী থেকে বাদ দিয়ে উপদেষ্টা কমিটিতে নেওয়া হয়। ২০০৮ সালে দল ক্ষমতায় আসার পর তাদেরকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়নি। তবে দেখা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংঘাতের সময় সামনে আসেন আমির হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদ। তাদেরকে নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী করা হয়। দলের একাধিক সূত্র বলছে, এখন দলের শীর্ষ নেতৃত্বও মনে করেন, ওই সময়ের রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণে প্রবীণ নেতাদের ভূমিকা ছিল ইতিবাচক। সূত্রগুলো বলছে, আগামী কাউন্সিলে আবার সভাপতিমণ্ডলীতে ফিরছেন আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদ।

দলের সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের ব্যাপক গুঞ্জন শোনা গেলেও সম্প্রতিকালে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের রাজনৈতিক তত্পরতা বেড়ে যাওয়ায় সে আলোচনা আপাতত থমকে আছে। প্রকাশ্যে ঘোষণা না দিলেও চাউর আছে ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আগ্রহীদের একজন। তবে ডিসেম্বরে কাউন্সিলের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের জেলাগুলোয় সম্মেলন শেষ করা যায়নি। এখনও জেলা সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নিজের জেলা গোপালগঞ্জে। এখানে জেলা কমিটির সভাপতি আবু মিয়া মারা গেছেন আরও কয়েক বছর আগে। সংগঠন চলছে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দিয়ে।

ঢাকা বিভাগের ১৯টি জেলার মধ্যে এখনও সম্মেলন বাকি ৯টি জেলায়। মাত্র ১০টি জেলায় সম্মেলন শেষ করা সম্ভব হয়েছে। রাজশাহী বিভাগের নয়টি জেলার মধ্যে সবক’টিতে সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রংপুর বিভাগে নয়টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে একটি, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪টি জেলার মধ্যে চারটি, বরিশালের সাতটির মধ্যে তিন জেলা, সিলেট বিভাগে একটি, খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে একটি জেলার সম্মেলন বাকি রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জে সর্বশেষ দলীয় কাউন্সিল হয়েছিল ১৯৯৭ সালে। ওই সময় নাজমা রহমানকে সভাপতি ও একেএম শামীম ওসমানকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু ২০০২ সালে ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে এসএম আকরামকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। তবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের সঙ্গে মনোমালিন্য হলে ২০১১ সালের ১ নভেম্বর আকরাম পদত্যাগ করেন। ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ ওই অর্থে অভিভাবকহীন। কবে এ জেলার সম্মেলন হতে পারে-এমনটা বলতেও পারছেন না কেউ। একদিকে শামীম ওসমান ও অন্যদিকে ডা. সেলিনা হায়াত আইভীকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে আছে জেলার তৃণমূল পর্যন্ত।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জেলা কিশোরগঞ্জে সম্মেলন হয় না ১৬ বছর ধরে। এ জেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দু’জনই ভারপ্রাপ্ত। ১৯৯৭ সালে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক গোলাপ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এলে স্পিকার নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। একই বছর মারা যান সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক গোলাপ। তারপর থেকে দীর্ঘ ছয় বছর ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি চলছে। অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার আগে দল থেকে পদত্যাগের পর এ কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম। তিনি সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের চাচা। সেখানে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমএ আফজাল।

সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, এলজিআরডি মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ ও কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রহমান এমপির নিজ জেলা ফরিদপুরে প্রায় দেড় যুগ সম্মেলন হয় না। জাতীয় কাউন্সিল বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী দল, নিয়মিত জাতীয় কাউন্সিল একটি গণতান্ত্রিক দলের অন্যতম ধারা। যথাসময়ে দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি জানান। সংগঠনের কলেবর বৃদ্ধির বিষয়ে বলেন, এমন কোনো আলোচনা এখনও হয়নি; সংগঠন প্রয়োজন মনে করলে হতে পারে বলে তিনি জানান। যেসব জেলার সম্মেলন এখনও হয়নি সেগুলোর সম্মেলন জাতীয় কাউন্সিলের আগেই সম্পন্ন হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.