মুস্তাফা নূরউলের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :: জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলামের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আজ বৃহস্পতিবার (১০ মে) পৃথক শোকবার্তায় তারা এ শোক প্রকাশ করেন।

এক শোকবার্তায় বঙ্গভবন প্রেস উইং জানায়, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান ও মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।

এদিকে আরেক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এই বিশিষ্ট সাহিত্যিকের মৃত্যুতে দেশ ও জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হলো। ভাষা আন্দোলন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে তিনি সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকেন।

ষাটের দশকের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, একষট্টি’র প্রবল প্রতিকূলতার মধ্যে রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকী উদযাপনসহ সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ‘সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’ আন্দোলনেও তিনি অনন্য অবদান রেখেছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৭১ সালে লন্ডনে পিএইচডি গবেষণারত অবস্থায় মহান মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে জনমত গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।

বুধবার (৯ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নিজ বাসায় বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন খ্যাতিমান এ সাহিত্যিক ও জাতীয় অধ্যাপক মুস্তাফা নূরউল ইসলাম।

অধ্যাপক নূরউল ইসলামের বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তিনি দুই ছেলে, দুই মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অনেক গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

তার মৃত্যুর খবর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস । তার মৃত্যুতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর শোক জানিয়েছেন।

অধ্যাপক নূরউল ইসলামের পরিচর্যাকারী সাজেদুর রহমান জানান, গত এপ্রিল থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন। বুধবার রাতে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তার প্রবাসী তিন ছেলে-মেয়ে দেশে ফিরলে দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানান সাজেদুর রহমান। তার মরদেহ অ্যাপোলো হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়েছে।

অধ্যাপক নূরউল ইসলামের জন্ম বগুড়ায়, ১৯২৭ সালে ১ মে। কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে গ্রাজুয়েশনের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাস করেন নূরউল ইসলাম। পরে লন্ডন ইউনিভার্সিটির প্রাচ্যভাষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র সোয়াস থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

মুস্তাফা নূরউল ইসলামের কর্মজীবন শুরু পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে। এরপর ১৯৫১ সালে তিনি সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন দৈনিক সংবাদে। দুই বছর পর করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় যোগ দেন।

স্বাধীনতার আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন তিনি এবং সেখানে কয়েক বছর শিক্ষকতা করেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে অধ্যাপক নূরউল ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন এবং বাংলা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৭৪ সালে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদে যোদ দেন অধ্যাপক নূরউল ইসলাম। এরপর ১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক তিনি। তবে সামরিক সরকারের সঙ্গে মতভিন্নতার কারণে বাংলা একাডেমির চাকরি ছেড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান। ১৯৯২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি।

এ ছাড়া জাতীয় জাদুঘর পরিচালনা পর্ষদের তিন মেয়াদে চেয়ারম্যান, নজরুল ইনস্টিটিউটের ট্রাস্টি বোর্ডের তিন মেয়াদে সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।

অধ্যাপক নূরউল ইসলাম সুন্দরম সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। সাহিত্য ও শিল্পকলায় অসাধারণ অবদানের জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করা হয় তাকে। এ ছাড়া তিনি একুশে পদকও লাভ করেছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.