বিদেশি চ্যানেলের ওপর কর বসানোর উদ্যোগ

0

অর্থ ও বাণিজ্য, সিটি নিউজ :: বাংলাদেশে যেসব বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করা হয়, সেগুলোর ওপর কর বসানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনায় তার ইংগিত পাওয়া গেছে। এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে আগামী বছর থেকে দেশে প্রচলিত বিদেশি চ্যানেলগুলোকে কর হিসেবে অর্থ গুণতে হবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বিদেশি চ্যানেলে ন্যূনতম ফি, কর ও মূসক থেকে বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বেশি আয় হতে পারে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ বিদেশি চ্যানেল দেখতে অভ্যস্ত।

কিন্তু ওইসব বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচারের ক্ষেত্রে কোনো তদারকি না থাকায় সেভাবে ফি আদায় হচ্ছে না। এছাড়া বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপন থেকে মূসক আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।

এ অবস্থায় ওই চ্যানেলগুলোকে করের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। তবে তার আগে বিদেশে বাংলাদেশি চ্যানেল সম্প্রচারে কী পরিমাণ ফি, কর ও ভ্যাট দিতে হয় তা জানতে চেয়েছে এনবিআর।

বাংলাদেশে সম্প্রচার হয় এমন বিদেশি চ্যানেলে দেশীয় বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছিল টেলিভিশন চ্যানেল মালিক, কলাকুশলী ও বিজ্ঞাপনদাতাদের সংগঠন মিডিয়া ইউনিটিও। কিন্তু কোনোভাবেই তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

বিষয়টি গত মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায়ও তুলে ধরা হয়। একইসঙ্গে বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচারে ফি নির্ধারণ এবং কর ও ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব করা হয়।

টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স (অ্যাটকো) ওই সময় জানায়, কিছু বিদেশি চ্যানেলের বাংলাদেশে প্রচার করা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশি বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। এসব বিজ্ঞাপন ওই দেশে না দেখিয়ে কেবল বাংলাদেশি দর্শকদের দেখানো হয়, যা বেআইনি।

ওই সময় এনবিআর চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া জানান, বিদেশি চ্যানেলে বাংলাদেশি কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রচারে বিধিনিষেধ ও কর আরোপ করা হবে। বিষয়টি এনবিআর নজরদারি করবে।

সরকারের এই উদ্যোগটি আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলো। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এ প্রস্তাব সংক্রান্ত একটি চিঠি তথ্য সচিবকে পাঠানো হয়েছে।

যাতে বলা হয়- অ্যাটকো বাংলাদেশে সম্প্রচার করে এমন বিদেশি চ্যানেলের ওপর করারোপের প্রস্তাব করেছে। এ প্রস্তাব বিবেচনায় নিয়ে বিদেশে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশি চ্যানেলগুলো কী পরিমাণ চার্জ বা ফি প্রদান করে তা জানা প্রয়োজন।

সেজন্য বছরে কত কোটি টাকা বাংলাদেশি চ্যানেলগুলো বিদেশে ফি হিসেবে দেয়, তা এনবিআরকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী এনবিআর বাংলাদেশে সম্প্রচার স্বত্ব নেয়ার ক্ষেত্রে বিদেশি চ্যানেলের ওপর ন্যূনতম ফি নির্ধারণ করবে।

এর আগে কয়েক বছর টিভি মিডিয়ার পক্ষ থেকে সরকারের কাছে এ ধরনের প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু তা আলোর মুখ দেখেনি। অ্যাটকোর প্রস্তাবে বলা হয়, দেশে প্রায় পাঁচ কোটি টিভি গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতি বছর প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা আদায় হয়।

এর ওপর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিলে প্রায় তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা সরকারের আদায় হওয়ার কথা। এই টাকার একটি বড় অংশ বিদেশি চ্যানেলগুলোর কাছ থেকে আসার কথা। কিন্তু সরকার তা পায় না।

ক্যাবল টিভি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশে ২৭২টির মতো চ্যানেল দেখা যায়। এর মধ্যে ৪০টির মতো চ্যানেল বাংলাদেশ কিনে দেখায়। এ সব চ্যানেলের সবগুলোই ভারতীয়।

তারা বলছেন, বাংলাদেশে সব মিলিয়ে বছরে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা এ খাত থেকে ভারত চলে যাচ্ছে। ফলে বড় অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

উল্লেখ্য, গত মাসে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও একটি অনুষ্ঠানে বিদেশি চ্যানেল বিশেষ করে ভারতীয় টিভি চ্যানেলেরও ওপর কর বসানো হবে বলে স্পষ্ট করেন। এখন দেখার বিষয়- প্রস্তাবটি আসলে কবে নাগাদ বাস্তবায়ন হচ্ছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.