চট্টগ্রামে এমপি’দের কর্মকান্ডে তৃনমুলের ক্ষুদ্ধ

0

গোলাম শরীফ টিটু,সিটি নিউজ : চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের তৃণমুল বর্ধিত সভায় বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সভাপতি-সাধারন সম্পাদকদের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে ক্ষোভ আর বঞ্চনার কথা। গত ৫ মে অনুষ্ঠিত এ সভায় আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন,’ আপনারা সবাই আছেন, শুধু একজন মানুষ আমাদের মাঝে নেই-যার কথা আমি বলছি-এই চট্টগ্রামের মাটিতে তিনি একপিস। যার তুলনা তিনি নিজেই,এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী’। তিনি মহিউদ্দিন চৌধুরীর গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে আবেগঘন বক্তব্যটি রাখেন।

তিনি স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বলেন,’ তিনি কারো কাছে মেয়র, কারো কাছে জননেতা আবার কারো কাছে দলীয় নেতা হিসেবে স্থান করে নিয়েছিলেন। তিনি চট্টলার অবিসংবাধিত নেতা হিসেবে সবার অন্তরে বেঁচে থাকবেন আজীবন। তার কোন বিকল্প হতে পারে না। সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মৃত্যুর পর এটাই নগর আওয়ামী লীগের বড় কোন দলীয় সভা। যেখানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে নগর নেতাদের সুশৃঙ্খল উপস্থিতি ছিল দেখার মত। সভার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তৃনমুলের সব নেতার বক্তব্যেই ঘুরে ফিরে এসেছে মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। এ সভায় ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তৃনমুলের নেতৃবৃন্দ।

নগরীর লেডিস ক্লাবের এই সভায় কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সামনে তৃনমুল নেতাদের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে তাদের দুরত্বে চিত্র এবং ভেতরে বাইরে গ্রুপিং ও কোন্দলের কথা। কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমদ বলেন,’ চট্টগ্রামের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন সংসদীয় আসন কোতোয়ালী। এই আসনের সংসদ সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। উনার সাথে গত নির্বাচনের পর কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোন দেখা সাক্ষাত হয়নি।

আজকে দলের সধারন সম্পাদকের মাধ্যমে আমরা নেত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি আগামী নির্বাচনে যেন এই আসনে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়। বায়েজিদ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সগির আলম সগির বলেন,’ ডাল নেই তলোয়ার নেই-নিধি রাম সর্দ্দার’এর মত আমাদের অবস্থা। আমাদের থানা ও ওয়ার্ড কমিটির কোন কাজ নেই। সভা ডাকলে আসি আর রাজপথে থাকি। থানা আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য দেয়া ছাড়া আর কোন কাজ থাকে না। এই থানার অধীনে ৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩টি ওয়ার্ডে কমিটি হয়েছে। বাকি একটির হয়নি। থানা কমিটির অগোচরে এসব ওয়ার্ড কমিটিগুলোর অনুমোদন দেয়া হয় মহানগর কমিটি থেকে।

সগির আলম আরো বলেন,’ থানা কমিটির কোন সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে না। এসব কারনে দলের প্রতি আগ্রহ কমছে নেতৃবৃন্দদের। বন্দর থানার সভাপতি নুরুল আলম বলেন,’আমার থানায় সব ওয়ার্ডে একটি করে কমিটি হলেও গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডে দুটি কমিটি। এই বিষয়টি সমাধান করা দরকার। ইপিজেড থানার আহবায়ক হারুনুর রশিদ বলেন,’আগামী নির্বাচনে আমরা আমাদের এলাকায় কোন হাইব্রীড় নেতাকে চাইনা। যারা তৃনমুলের খোঁজখবর রাখেন এমন নেতাকে আমরা চাই। এই থানা এলাকায় ৪৩ ও ৪৪ সাংগঠনিক ওয়ার্ড করার ফলে সাংঘর্ষিক ঘটনা ঘটছে। জামালখান ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব আবুল হাসেম বাবুল বলেন, জামালখান ওয়ার্ডে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের কোন কমিটি নেই।

এসব কারনে এই ওয়ার্ডে দলের অবস্থান নাজুক। তিনি এই ওয়ার্ডে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার জন্য নগর ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছে দাবী জানান। পশ্চিম মাদারবাড়ি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী বক্স অভিযোগ করে বলেন,’আমরা আমাদের এমপিকে নির্বাচিত করেছি। কিন্তু আমাদের এমপিকে আমরা কোন কাছে পাচ্ছি না। তিনি আমাদের কোন খোঁজখবর রাখেন না। আগামীতে দলের ত্যাগীদের মনোনয়ন দেয়ার আহবান জানান তিনি। বক্সিরহাট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফয়জুল্লাহ বাহাদুর বলেন, ওয়ার্ডের সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ় নয়। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের কোন কার্যক্রম নেই। তিনি বলেন,’১১ সংসদীয় আসনের আওতাধীন এই ওয়ার্ডটি অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন।

এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যের সাথে তৃনমুলের কোন যোগাযোগ নেই। আগামীতে এই আসনে যেন তৃনমুলের মতামতের ভিত্ত্বিতে একজন যোগ্য রাজনীতিককে মনোনয়ন দেয়া হয়। একাধিক নেতা তাদের বক্তব্যে বলেন,’ অনেক নেতা এমপি হয়ে মহানগরে নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করেছেন। তৃনমুলের সাথে এসব নেতার কোন সম্পর্ক থাকে না। আগামীতে মনোনয়নের ক্ষেত্রে এসব নেতাদের বিষয়ে সজাগ থাকার অনুরোধ জানান তৃনমুলের নেতারা। তৃনমুলের বর্ধিত সভা শুরুর এক পর্যায়ে সময় স্বল্পতার কারনে তৃনমুল নেতাদের বক্তব্য দিতে না দেয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন সভায় আগত বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানা আওয়ামী লীগের নেতারা। এ সময় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম মাইক নিয়ে বলেন,’মিডিয়ার জন্য প্রধান অতিথি ওবায়দুল কাদের আগে বক্তব্য দেবেন। তাঁর বক্তব্যের পর আবার তৃনমুল নেতাদের সুযোগ থাকবে। এরপর তৃনমুল নেতারা শান্ত হন।

ওবায়দুল কাদের তাঁর বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের ভেতরে বিভিন্ন সমস্যা ও সংকট নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন,’ মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ৬টি ওয়ার্ডে দুটি করে কমিটি আছে। অনেক থানায় পুর্নাঙ্গ কমিটি নেই। এই তথ্য নেত্রীর কাছেও আছে। সাংগঠনিক শৃঙ্খলা আনতে তিনি এক মাসের সময় বেঁধে দেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যের শেষে তৃনমুলের নেতারা আবার বক্তব্য রাখার সুযোগ চান। এর পর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, যেহেতু দলের সাধারন সম্পাদক সাংগঠনিক সকল বিষয়ে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তাই নতুন করে বক্তব্য দেওয়ার খুব একটা প্রয়োজন নেই।

বিশেষ করে প্রধান অতিথির ব্ক্তব্যের পর বক্তব্য দেয়া বেমানান। এরপর তৃনমুল নেতাদের মাঝে বক্তব্য রাখার আগ্রহ থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুরোধে নিবৃত হন তারা। নগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন তৃনমুল নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন,’আমাদের দলের সাধারন সম্পাদক নগরীর ওয়ার্ড ও থানা কমিটি পুর্নাঙ্গ করাসহ সকল অসম্পুর্ন কাজ সম্পন্ন করার জন্য এক মাসের সময় দিয়েছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.