সিটিনিউজ ডেস্ক:: দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিয়ম-বিশৃঙ্খলা নিয়ে সংসদে সরকারি এবং বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। রবিবার (১০ জুন) ২০১৭-১৮ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনার সময় এ সমালোচনা করা হয়।
ক্ষমতাসীন দলের এমপি আলী আশরাফ ঋণখেলাপিদের আইনের আওতায় আনার দাবি করে বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতকে সুষ্ঠু শৃঙ্খলার মধ্যে আনা প্রয়োজন। না হলে আর্থিক খাত ভেঙে পড়বে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীকে পদক্ষেপ নিতে হবে। ঋণখেলাপিদের, অর্থ পাচারকারীদের ধরেন।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের লুটপাট থেকে বেরিয়ে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে না পারলে বিনিয়োগকারীরা আকৃষ্ট হবেন না। লুটপাটকারীদের ধরেন, মানুষের কনফিডেন্স ফিরে আসবে। সুশাসন নিশ্চিত হবে। দৃঢ়হাতে এগুলো করতে হবে। আপনাদের তো সদিচ্ছার অভাব নেই।’
অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মানুষের কল্যাণ করতে হবে। বিশাল বিশাল অবকাঠামো করবেন, কিন্তু খেতে তো দিতে হবে। বাইরের বিনয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে।’
স্বতন্ত্র সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখে। কিন্তু মানুষ ভীত হয়ে গেছে। ঋণের নামে টাকা পাচার করে। লাখ লাখ হাজার কোটি টাকা বিদেশে গেছে। ঋণখেলাপি কারা অনেকেই জানেন।’
প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যাংক, বীমাসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট ট্যাক্স আড়াই শতাংশ কমানোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এটা হলে ব্যাংক বলতে আর কিছু রাখবে না। এক পরিবার থেকে চারজন পরিচালক রেখেছেন। আবার তাদের ট্যাক্স কমিয়ে দেওয়া হলো। যে টাকা খেলাপি সেই টাকা আদায়ের জন্য কী করা যেতে পারে? ভবিষ্যৎ সরকার না, কমিশন আপনিই (অর্থমন্ত্রী) করেন। ভারতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক সরকারকে টাকা দেয়। আর আমরা ব্যাংককে ক্যাপিটাল দেই। তারা পারছে আমরা কেন পারবো না?’
জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ সুলতান মাহমুদ গজনীর সোমনাথ মন্দির লুটের ইতিহাস তুলে ধরেন বলেন, ‘ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। আল্লাহর দরবারে বিচার হবে। কাদের টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। তুঘলকি আমল নাকি? মাহমুদ গজনীর সোমনাথ মন্দির লুটের পর আর এত বড় লুট হয়নি। যা হয়েছে আমাদের ব্যাংকে।’
অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ডাকাতদের কেন সুযোগ দিলেন? তাদের কেন প্রটেকশন দিলেন? সারচার্জ নেন। মাঝে মাঝে মেসেজ আসে ১০-২৫ টাকা নিয়ে নেয়। ইনভ্যালিড সারচার্জ। এখন প্রতি মুহূর্তে টাকা কাটে। এই টাকা লুট হয়। ব্যাংকওয়ালারা কি ভোট দেবে? সাধারণ মানুষের দিকে তাকালেন না। নির্বাচনের আগে বড়লোকরা দেশ ত্যাগ করবে, লিখে রাখেন। গরিবরা, মজুররা ভোট দেবে। বড়লোকদের পাবেন না। পাসপোর্ট দেখেন না কেন? সব তো হাতে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সোনালী, ফারমার্স, রূপালী ব্যাংক লুট হলো। জনগণ কী বিচার পাইলো? কিছুই পাইলো না। ব্যাংক দিলেন, জনগণ লগ্নি করে। আর সেই টাকা লুট হবে। মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছেন। ভোট বাড়াচ্ছেন না। তেলা মাথায় তেল দিচ্ছেন। ল্যাজ নাড়া কুকুরদের বিশ্বাস করবেন না। তাদের পাশে পাবেন না। বঙ্গবন্ধুও পাননি। মোসাহেব পালছেন। ৯৮ হাজার কোটি টাকা কে নিয়েছে? ফারমার্স ব্যাংক কেন নিলামে তোলেন না? ২৪ হাজার টাকার জন্য কৃষককে ধরা হয়। ভুয়া বাজেট দিয়ে গান গেয়ে… । ভোট নষ্ট করার বাজেট।’
চলতি অর্থবছরের বাজেট সম্পর্কে ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘আমরা কী চাইছি আর অর্থমন্ত্রী কী দিলেন। কিছুই পেলাম না। কিছুই নাই। গরিবকে মারলেন আর ধনীকে উৎসাহিত করলেন। ব্যাংক ডাকাতদের উৎসাহিত করলেন। দেশের সর্বনাশ করলেন।’
জাতীয় পার্টির পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘২/৩ বছর ধরে আমরা বারবার ব্যাংক লুট নিয়ে কথা বলে যাচ্ছি। লুটকারীরা টাকা নিয়ে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী মানুষের করের টাকা দিয়ে মূলধন সরবরাহ করে যাচ্ছেন। সেখান থেকে আবার কিছু মানুষ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। অর্থমন্ত্রী ব্যাংক সংস্কারে কমিশন করার কথা বলেছিলেন। বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বললেন করবেন না। সংস্কার কমিশন গঠিত হলে কারা লুটপাট করেছে, কীভাবে করেছে সব বেরিয়ে আসতো। নিশ্চয়ই অর্থমন্ত্রী এটা প্রকাশ করতে চান না।’