হালিশহর-আগ্রাবাদ এলাকার ওয়াসার পানিতে জন্ডিসের জীবাণু নেই: মেয়র

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :: বৃহত্তর হালিশহর আগ্রাবাদসহ আশে পাশের এলাকার ওয়াসার সরবরাহকৃত পানিতে জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার মত কোন ক্ষতিকারক জীবাণু পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আজ বৃহষ্পতিবার দুপুরে কর্পোরেশনের কেবি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে এ তথ্য প্রকাশ করেন।

এসময় কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব,মো. সাইফুদ্দিন খালেদ সাইফু, শৈবাল দাশ সুমন,চসিক প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী, চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন কবির, চট্টগ্রাম ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী ইফতেখার উল্লাহ মামুন প্রমূখ উপস্থি ছিলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম ও বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ওয়াসার পানি পান করে হালিশহর আগ্রাবাদ ও আশে পাশের এলাকার মানুষ জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর প্রেক্ষিতে  কর্পোরেশন সরবরাহকৃত ওয়াসার পানিতে জন্ডিস ও মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক কোন জীবানু আছে কিনা তা নির্ণয়ে  চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন চট্টগ্রাম ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. হুমায়ুন কবির ও চট্টগ্রাম ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী ইফতেখার উল্লাহ মামুন।

কর্পোরেশন গঠিত তদন্ত কমিটি বাংলাদেশ কাউন্সিল অব সাইন্টিফিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (বিসিএসআইআর) এর সহায়তায় হালিশহর-আগ্রাবাদসহ আশপাশের এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করে বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বাসভবনের ১৪টি স্পট থেকে সংরক্ষিত রিজার্ভারের পানি ও ওই এলাকার ওয়াসার সরবরাহকৃত পানি রিজার্ভারে সংরক্ষণের পূর্বে সংযোগ লাইন থেকে নিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে দেখার ব্যবস্থা নেয়। যাতে ১৪ টি আবাসিক বাসভবনের সংরক্ষিত রিজারর্ভারের পানিতে জীবনু পাওয়া  গেলেও ট্যাংকে সংরক্ষণের পূর্বে ওয়াসার সংযোগ লাইনের সংগৃহীত পানির নমুনায় জন্ডিস আক্রান্ত হওয়ার কোন জীবানু পাওয়া যায়নি।

এছাড়াও ওয়াসার সংরক্ষিত বাটালীপাহাড় রিজার্ভার ও নাসিরাবাদ রিজার্ভারের পানির নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষা করে দেখা হয়। তাতেও জন্ডিস,কলেরা কিংবা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার মত কোন জীবানুর উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তবে কিছু কিছু জায়গার আবাসিক বাসভবনে রিজার্ভারের পানিতে ক্ষতিকারক ক্লোরিফর্ম পাওয়া যায় যার মাত্রা ছিল ১১’শ সিএফইউ বা ১’শ এমএল।

যেসমস্ত জায়গার আবাসিক বাসভবনের রিজার্ভারের পানিতে এই ক্ষতিকারক ক্লোরিফর্ম পাওয়া যায় সেগুলো হলো ফইল্যাতলীর খালেদা ভিলা,হালিশহর আবিদের পাড়ার পেয়ার আলী কুঞ্জে, আগ্রাবাদ সিডিএ এর ১৭ নং রোডের হাউস নং ১০৮, একই এলাকার হাউস নং-০২/৪ ইত্যাদি।

সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন হালিশহর আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দাদের আতংকিত না হয়ে  চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে তাদের নির্দেশিত পন্থায় রিজার্ভারে পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহারের আহবান জানান। এতে পানি বাহিত রোগ জন্ডিস, ডায়রিয়া ও কলেরার ঝুঁকি কমবে।

এরপূর্বে ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী ইফতেখার উল্লাহ মামুন আবাসিক গৃহের রিজার্ভারের পানি সংরক্ষণ ও জীবাণু মুক্ত করণে তাদের নির্দেশিত পদ্ধতি সম্পর্কে উপস্থিত সংবাদ কর্মীদের অবহিত করেন, যা রিজার্ভার জীবানুমক্ত করণের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি হলো রিজার্ভারের উপরের ঢাকনা খুলে ৩০ মি. অপেক্ষা করতে হবে। রিজার্ভারে অর্ধেক পরিমাণ পানি  দিয়ে পূর্ণ করতে হবে এবং ভিতরে একটি সিড়ি নামাতে হবে। যার মাধ্যমে ভিতরে লোক নামতে পারে। রিজার্ভারে ড্রেন আউট ভাল্ব বন্ধ রাখতে হবে এবং জীবানুমুক্ত করার সময় এ পানি যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে সেইদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

রিজার্ভারের জীবানুমুক্ত করন রুলস অনুযায়ী  (টেকনিক্যাল পাবলিকেশন বিআরএ ৩৫৩,কেমিস্ট্রি অব মডার্ণ ওয়াটার ক্লোরিনেশন বাই এটিপালিন) ওই রিজার্ভারের প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মি.গ্রাম ক্লোরিন অর্থাৎ ১’শ মি.গ্রা.ব্লিচিং পাওডার মিশাতে হবে। এইভাবে পুরো রিজার্ভারের আয়তন যেনে প্রতি ঘন মিটার বা ১ হাজার লি. আয়তনের রিজার্ভারের জন্য ১’শ মি.গ্রা  ব্লিচিং পাউডার হিসেবে পুরো রিজর্ভারের আয়তনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্লিচিং পাউডার দিতে হবে। এই ব্লিচিং পাউডার প্রতিবারে ২ কেজি করে ১টি ১৫ লি. এর বাকেটে পানি দ্বারা ভালভাবে গুলাইয়া নিতে হবে। তা ২ মিনিট মিশ্রনের পর মিশ্রিত ব্লিচিং পাউডারের দ্রবণ অন্য একটি বাকেটে দিয়ে রিজার্ভারে ঢেলে দিতে হবে। এইভাবে প্রতিবারে ২ কেজি করে প্রয়োজনীয় ব্লিচিং পাউডার পানিদ্বারা মিশ্রিত করে রিজার্ভারে ঢেলে দিতে হবে। রির্জার্ভারের ভিতর সিড়ি দিয়ে একজন লোক নেমে সাবমার্সিবল পাম্পের মাধ্যমে হোজ পাইপ দিয়ে পুরো রিজার্ভারের ভিতর  অংশ ব্লিচিং পাউডার যুক্ত পানি ছিটাইয়া দিতে হবে এবং ৪ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। ৪ ঘন্টা পরে রিজার্ভারের ব্লিচিং পাউডার গুলানো পানি রিজার্ভারের আউটলেইট ভাল্ব খুলে বাইরে ফেলে দিতে হবে। এইভাবে আরো ২ বার বাইরে থেকে পরিস্কার পানি দিয়ে রিজার্ভারের ভিতরের অংশ ভালভাবে পরিস্কার করে ৩য় বারে পানি দিয়ে ব্যবহার করা যাবে।

এইভাবে প্রতি ৪ মাস অন্তর আন্ডারগ্রাউন্ড এবং ওভার হেড রিজার্ভার জীবাণুমুক্ত করা হলে গ্রাহক যে পানি পাবে তা জীবাণুমুক্ত থাকবে বলে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.