সড়কে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির জন্য ওয়াসা দায়ী- সওজ

0

এম. রমজান আলী, রাউজান :: চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের রাউজান অংশ এক দীর্ঘ মৃত্যুফাঁদ। এই জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কের চট্টগ্রাম প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) গেইট সম্মুখ হতে মদুনাঘাট বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়ক জুঁড়ে সহস্রাধিক খানাখন্দকে পরিপূর্ণ। এতে করে যান চলাচলে বাড়ছে সীমাহীন জনদুর্ভোগ।

প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা, হচ্ছে সময়ের অপচয়, নষ্ট হচ্ছে গাড়ির যন্ত্রাংশ, যাত্রীদের গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া, গাড়ির ঝাকুনিতে পথেই মারা যাচ্ছে রোগী, প্রসুতি মা গাড়িতে করছে সন্তান প্রসব। এই সড়ক দিয়ে যাতায়তকারী রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, হাটহাজারী, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির কাপ্তাই সহ দেশের বিভিন্ন অ লের প্রায় অর্ধকোটি মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগ করছেন এই নরকীয় যন্ত্রণা। এই জনদূর্ভোগ সৃষ্টির জন্য ওয়াসা কতৃপক্ষের দায়িত্বের অবহেলাকে দায়ী করছেন সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।

জানা যায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার’ প্রকল্পের পাইপলাইন সংস্থাপনের জন্য চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি, কাজের দীর্ঘসূত্রতা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়সারা মনোভাব কারণে রাঙ্গুনিয়ার গোডাউন হতে মোহরা রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রায় ২৬ কিলোমিটার সড়ক জুঁড়ে অগণিত খানাখন্দকে বিপর্যস্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠেছিল।

গত বছরের নভেম্বরের রাউজান-রাঙ্গুনিয়াবাসী অতি দুর্ভোগে অতিষ্ট হয়ে ওয়াসা কতৃপক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে পড়েছিল। ঐসময় আন্দোলনকারীরা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে এম ফয়জুল্লাহ ও প্রকল্প প্রধান ইয়াকুব সিরাজদৌল্লাহ’র পদত্যাগ ও রাস্তা সংস্কারের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন ও ওয়াসা অফিস ঘেরাওয়ের আল্টিমেটাম দিয়েছিল। তখন ওয়াসা কর্তৃপক্ষ জনরোষে পড়ে সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করলেও অদৃশ্য কারণে রাউজান অংশে কাজ বন্ধ রাখে। এতে করে ধীরে ধীরে সড়কটিতে খানাখন্দকের পরিমান বেড়েই চলেছে। ফলে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীসাধারণ গন্তব্যের পানে ছুটে চলছে। বিগত ছয় বছর যাবৎ ওয়াসার পাইপলাইন সংস্থাপন কাপ্তাই সড়কে যাতায়তকারীদের দুঃখে পরিণত হয়েছে।

 সড়কটি সংস্কারের বিষয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ, চট্টগ্রাম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আহমেদ দৈনিক ভোরের কাগজকে বলেন, আমি নিজে পরিদর্শন করেছি, সড়কটির পাহাড়তলী, নোয়াপাড়াসহ বিভিন্ন অংশে বেহাল দশা। মানুষের চলাচলের উপযোগী নয়।

২০১৩ সাল হতে চুক্তি অনুযায়ী সড়কটি সম্পূর্ণ দায়ভার এককভাবে ওয়াসার কর্তৃপক্ষের। তাদের দায়সারা কাজের কারণে এই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাদের বারবার চিঠি দিলেও তারা এত কোন কর্ণপাত করে না। সর্বশেষ ১৭-১৮দিনে পূর্বেও সড়কটি সংস্কারের ব্যাপারে চিঠি দেওয়া হয়েছিল।

সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, মদুনাঘাট বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র হতে হয়ে চট্টগ্রাম প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)’র সম্মুখ পর্যন্ত সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কের পশ্চিম হতে মদুনাঘাট, জিয়াবাজার, বৈজ্জ্যাখালী, মিয়ারঘাটা, নোয়াপাড়া সিএনজি স্টেশন, নোয়াপাড়া কলেজ, আমেনা বশর বয়স্ক পূর্ণভাসন কেন্দ্র, পথের হাট, মিয়া মার্কেট, ব্রাহ্মণহাট, কালুমরার টেক, ধরের টেক, গশ্চি নয়াহাট, দমদমা, রাউজান পিংক সিটি -২, পাহাড়তলী বাজারের রাউজান-রাঙ্গুনিয়া সার্কেল কার্যালয় চুয়েট পর্যন্ত সড়কটি অগণিত খানাখন্দকে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে পাহাড়তলী বাজারের পশ্চিম হতে চুয়েট পর্যন্ত ছোট ছোট একাধিক গর্ত ছাড়াও ডোবা সদৃশ প্রায় পনেরটি গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্ত যেন  একেকটা মৃত্যুকুপ। এই অংশ গুলোতে বিটুমিনের অস্তিত্বও নেই। বৃষ্টির পানিতে সড়কটি কাদা-পানিতে একাকার হয়ে যায়। পায়ে হেঁটে চলার উপায় নেই। এমনকি গাড়ি চলাচলে বেশ বিঘ্নতা ঘটছে। যাত্রীসহ গাড়ি হেলেদুলে চলছে। যাত্রীরা দুর্ভোগ সহ্য করতে না পেরে গালমন্দ করছে। এছাড়া সড়কের দক্ষিণাংশে পাইপ সঞ্চালনের পর দায়সারা ইট সলিং করে দীর্ঘ সময় ফেলে রাখার ফলে ধেবে গিয়ে উঁচু-নিচু হয়ে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কের এই অংশটি গাড়ি চলাচলের উপযোগী না হওয়ায় চালকেরা তুলনামূলক ভাল অংশে গাড়ি চলাতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে।

এই ব্যাপারে ওয়াসার প্রকল্প পরিচালক ইয়াকুব সিরাজদৌল্লাাহ বলেন, আমাদের পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ হয়ে গেছে দুই একটা ক্রচিং এর কাজ চলছে। অল্প সময়ের মধ্যে শেষ হবে। এছাড়া বৃষ্টির জন্য সংস্কারের কাজ বিঘ্ন ঘটছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.