সিটি নিউজ ডেস্ক :: বর্তমানে বাংলাদেশে ধূমপানকারীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ। তবে এ সংখ্যা বাড়ছেই। অন্যদিকে জাপানের বৃহত্তম এবং বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সিগারেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান জাপান টোব্যাকো (জেটি)১৫০ কোটি ডলার (১২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা) দিয়ে বাংলাদেশের আকিজ গ্রুপের সিগারেট তৈরির সব ব্যবসা কিনে নিয়েছে।
গত সোমবার দুই কোম্পানির মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তিও সই হয়ে গেছে। জাপানি এই সিগারেট কোম্পানির এই বিনিয়োগ হবে এ যাবৎকালের মধ্যে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতে একক বৃহত্তম বিদেশি বিনিয়োগ।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, জাপানের টোব্যাকো জায়ান্ট কেন এত টাকা বাংলাদেশের বাজারে ঢালছে?
ঢাকার গবেষণা সংস্থা হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টারের (এইচ ডিআরসি) অর্থনীতিবিদ আসমার ওসমান বলেন, বাংলাদেশে ধূমপায়ীর যে সংখ্যা, সিগারেটের যে বিশাল বাজার এবং ধূমপান নিরুৎসাহে সরকারের যে অনীহা তাতে এই খাতে বিদেশি বিনিয়োগের আগ্রহে অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই।
সিগারেটের কত বড় বাজার বাংলাদেশ?
এইচডিআরসি ২০১৫ সালে বাংলাদেশের ‘তামাক শিল্প এবং কর’ নিয়ে একটি গবেষণা করার সময় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারি বিভিন্ন পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে একটি সমীক্ষা করেছিল।
সেই সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ২৮ শতাংশেরও বেশি সিগারেট পান করেন এবং কমপক্ষে ২১ শতাংশ পুরুষ বিড়ি খায়। পাশাপাশি ২০০৭ সালের অপর এক পরিসংখ্যান বলছে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী কিশোরদের কমপক্ষে দুই শতাংশ ধূমপান করে।
ওসমান আরো বলেন, ‘বলতে পারেন দেশে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমবেশি এক কোটি ৮০ লাখ, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ৪২ শতাংশই ধূমপায়ী।’
এই হিসাবে বর্তমানে বাংলাদেশে বাংলাদেশে সিগারেটের বাজার কমপক্ষে ২০,০০০ কোটি টাকার এবং তা ক্রমাগত বাড়ছে।
‘ধূমপান বৃদ্ধির অন্যতম একটি কারণ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং মানুষের আয় বাড়ার সঙ্গে প্রচুর নিম্ন আয়ের মানুষ বিড়ি ছেড়ে সিগারেট ধরছে।’
জাপান টোব্যাকো এক বিবৃতিতে নিজেরাই বলছে, বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম সিগারেটের বাজার এবং এই বাজার প্রতি বছর দুই শতাংশে করে বাড়ছে।
‘সুতরাং সিগারেট খাতে মুনাফার এমন সুযোগ এবং সম্ভাবনা পৃথিবীর খুব কম দেশেই রয়েছে’, বলছেন অর্থনীতিবিদ আসমান ওসমান।
বাংলাদেশে কমার বদলে কেন বাড়ছে ধূমপায়ী?
বিশ্বের বহু দেশে, বিশেষ করে উন্নত দেশগুলোতে যখন স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে ধূমপায়ীর সংখ্যা ক্রমাগত কমছে, সেখানে বাংলাদেশে তা বাড়ছে কেন?
ওসমান বলেন, ধূমপান নিরুৎসাহিত করার ব্যাপারে সরকারগুলোর নিরুৎসাহ প্রধান কারণ।
‘এমনকী ভিয়েতনাম বা ফিলিপাইনের মতো দেশের সাথেও তুলনা করেন, তাহলেও বাংলাদেশে সিগারেটেরে দাম অনেক কম। রাজস্ব আয় কমার আশঙ্কায় সিগারেট খাতে কর-কাঠামোতে বড় কোনো পরিবর্তন আনতে সরকার একেবারেই আগ্রহী নয়।’
খোদ জাপানেই ধূমপানের ওপর বিধিনিষেধ দিন দিন বাড়ছে। ফলে জাপান টোব্যাকো নজর দিচ্ছে বাইরের দেশে। সিগারেট থেকে বাংলাদেশে সরকারের রাজস্ব আয় কমবেশি ১৫,০০০ কোটি টাকা। রাজস্ব আয়ের একক বৃহত্তম খাত এটি।
‘দামি ব্রান্ডের সিগারেটে করের হার বাড়লেও, অল্প দামের সিগারেটের ওপর কর তেমন বাড়ানো হয় না। আর সে কারণে, সিগারেট এমনকী কম আয়ের লোকজনেরও ক্রয়ক্ষমতার ভেতরেই রয়ে গেছে।’
এছাড়াও ওসমান বলেন, পুরো প্যাকেটের বদলে একটি-দুটি করে খুচরা সিগারেট কেনার সুযোগ বাংলাদেশে রয়েছে যেটি চাহিদা বাড়ার পেছনে আরেকটি বড় কারণ। পৃথিবীর খুব কম দেশে প্যাকেট ভেঙে সিগারেট বিক্রির এই সুবিধা রয়েছে।’
ধূমপান বিরোধী আন্দোলনকারীরা প্যাকেট ভেঙ্গে খুচরা সিগারেট বিক্রি নিষিদ্ধ করার দাবি করে আসছে, কিন্তু সরকার এতে কান দিচ্ছেনা। সুতরাং এসব কারণেই যে বাংলাদেশের সিগারেটের বাজারে আকৃষ্ট হয়েছে জাপান টোব্যাকো, সেটা সহজেই বোধগম্য।