ছোট শিশুরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী

0

সিটি নিউজ ডেস্ক :: পথচারীদের সতর্ক হয়ে রাস্তা পারাপারের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বাসচালকরা ওভারটেক করলে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

আজ রোববার সকালে রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজসংলগ্ন এলাকায় আন্ডারপাস নির্মাণকাজের উদ্বোধনের সময় সরকারপ্রধান এসব কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ছোট শিশুরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। পথচারীরা নিয়ম মেনে রাস্তায় চলাচল করবেন। ড্রাইভাররা নিয়ম মেনে গাড়ি চালাবেন। আমি সেই আশা করি।’

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সব সময় চিন্তিত ছিলাম, যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে।’ তিনি বলেন, আমি দেখলাম, রাস্তায় দাঁড়িয়ে শার্ট পরির্তন করছে অথবা স্কুল ড্রেস পরছে। দা, চায়নিক কুড়াল, পাথর বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ব্যাগ থেকে বের হচ্ছে। তখনই চিন্তিত হয়ে পড়লাম।’

শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘এরপর বললাম, আপনারা আপনাদের সন্তানদের ফিরিয়ে নেন। এরপর চলে গেল। সবাইকে ধন্যবাদ জানাই, তারা ঘরে ফিরে গেছে। আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি তাদের।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অফিস আক্রমণ করছে। নেতাকর্মীরা বলল, তারা টিকতে পারছে না। তারা বোঝাতে গেল, তারা বুঝে না। কিন্তু দেখা গেল এরা কারা? এরা তো ছাত্র না। পরে দর্জির দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রচুর স্কুল ড্রেস তৈরি হচ্ছে, আইডি কার্ড বিক্রি হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলেছি। কোনো কোনো মহল গুজব ছড়াচ্ছে, আওয়ামী লীগ অফিস লাশ আছে। ২৫ জনকে নিয়ে দেখানো হলো, তোমরা দেখো তো কোথায় আছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আমিই করে দিয়েছি। সকলের হাতে মোবাইল ফোন। একসঙ্গে ফেসবুক করা যায়, ইন্টারনেট করা যায়, সবই করা যায়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এমন এমন লোক আছে, যাদের ভালো কাজের জন্য একসময় পুরস্কার দিয়েছি। তারাও গুজব ছড়াল। কেউ গুজবে কান দেবেন না। কেউ বলল কান চিলে নিয়ে গেছে। আপনারা কানে দিয়ে দেখেন।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সবাই তাদের কথা মেনে চলেছে। মন্ত্রী ফোন দেয়, আমি বললাম, আপনি নাতি-নাতনিদের কথা শোনেন। তাদের কথা শোনেন।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু যখনই সবাই ফিরে গেল। আমরা তারপর কী দেখি? তরুণ বয়সী ছেলেমেয়ে রাস্তা পার হচ্ছে। পাশেই কয়েক ধাপ পরই ফুটওভারব্রিজ।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি সকলকে বলব, রাস্তা পারাপারের সময় একবার ডানে দেখতে হবে, একবার বামে দেখতে হবে কোনো গাড়ি আছে কি না। যেখানে বাস স্টপিজ, সেখানেই গাড়ি থামাতে হবে। যত্রতত্র গাড়ি থামানো যাবে না। কেউ না মানলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে শাস্তি দিতে হবে। দরকার লাইসেন্স বাতিল করত হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের বদ অভ্যাস আছে। পানি খেয়ে বোতল ছুড়ে মারল, কলা খেয়ে রাস্তায় ফেলে দিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাস ড্রাইভারদের লাইন দিয়ে বাস চালাতে হবে। কোনোভাবে ওভারটেক করলে শাস্তি দিতে হবে। কেউ অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নিতে হবে। ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যাতে বাস, বাসচালককে শনাক্ত করা যায়। প্রত্যেক স্কুল ছুটির সময় ও স্কুল শুরুর সময় একজন করে ট্রাফিক নিয়োজিত থাকবে। স্কুল থেকেও ভলান্টিয়ার নেওয়া হবে, অবশ্যই উঁচু ক্লাসের হবে।’

রমিজ উদ্দিন কলেজের নিহত দুই শিক্ষার্থীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া প্রসঙ্গ শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে বাবা-মায়েরা সন্তান হারিয়েছে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায় না। আমি জানি, আমার বাবা-মা হারিয়েছি।’ কিছুদিন আগে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ২০ লাখ করে অনুদান দেন তিনি।

এরপর কলেজের সামনে আন্ডারপাস নির্মাণকাজের উদ্বোধন ঘোষণা করেন শেখ  হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের সেনাবাহিনী, বিশেষ করে কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড তাদের যে কাজ দিয়েছি, তারা সুন্দর করে দেন। তারা এই প্রকল্পটা তাড়াতাড়ি করে দেবেন, আশা করি। প্রকল্প কাজের শুভ উদ্বোধন আমি ঘোষণা করছি।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ট্রাফিক রুলস মেনে চলতে হবে। নিয়ম মেনে চলতে হবে। আমরা যে কষ্ট পেয়েছি, তোমরা যেন সে কষ্ট না পাও। আগামী দিনের দেশের নেতৃত্ব তোমরাই দেবে। তোমাদের মধ্যে থেকে প্রধানমন্ত্রী হবে, মন্ত্রী হবে, সেনাবাহিনীপ্রধান হবে, নৌবাহিনীপ্রধান হবে, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হবে—অনেকে অনেক কিছু হবে।’

রাজধানী উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মানিক মিয়া এভিনিউয়ে আন্ডারপাস নির্মাণ করা বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। তারা টানা আট দিন রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করে এবং সবাইকে ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.