রোহিঙ্গা গণহত্যার এক বছর: বিচার দাবীতে সমাবেশ
শহিদুল ইসলাম,উখিয়া : মিয়ানমারের ২৪টি সীমান্ত চৌকিতে স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলার জেরধরে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ধর্ষণ ও নৃশংস হামলার এক বছর। গত বছরের এদিনে এই সন্ত্রাসী হামলার সুত্রধরে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী, সীমান্তরক্ষী, নৌসদস্য ও উগ্র রাখাইনদের হাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু ধর্ষণ এবং নৃশংস হত্যাকান্ডের শিকার হয়। তাদের বর্বরতা থেকে বাঁচতে বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রায় ১১লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নেয়। রোহিঙ্গা ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের সুবিচার দাবীতে টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা বস্তির রোহিঙ্গারা।
জানা যায়, ২৫ আগষ্ট সকাল ৯টা হতে সীমান্ত জনপদ টেকনাফের রইক্ষ্যং পুটিবনিয়া, হ্নীলার আলীখালী, লেদা, নয়াপাড়া, শালবন, জাদিমোরা, দমদমিয়ায় ও বাহারছড়ার শামলাপুর বস্তিতে রোহিঙ্গারা মিছিল-সমাবেশ করেছে। ক্যাম্পে নিয়োজিত আইন-শৃংখলা বাহিনীর চাপে তারা কোণঠাসা হয়ে থাকলেও পুটিবনিয়া এবং শালবনে রোহিঙ্গাদের বিরাট বিক্ষোভ মিছিল তাদের ক্যাম্প আভ্যন্তরীণ সড়ক সমুহ প্রদক্ষিণ করেন।
এরপর নির্দিষ্ট স্থানে সমাবেশ করে। এতে রোহিঙ্গারা সরকারী বাহিনীর হাতে নারী ধর্ষণ, শিশু ও নিরীহ রোহিঙ্গা হত্যাকারীদের আর্ন্তজাতিক আইনের আওতায় এনে সুবিচার দাবী করা হয়। এছাড়া নিরাপত্তা, নাগরিক সুবিধা, ফেলে আসা সম্পত্তি ফেরত ও রাষ্ট্রের অংশ-গ্রহণমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ দিলে বাংলাদেশে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে যেতে আগ্রহী বলে মত প্রকাশ করেন।
এদিকে একটি মহলের দাবী, ক্যাম্প অভ্যন্তরে আশ্রয় নেওয়া আরসা গ্রুপ সদস্যদের প্ররোচনা ও উস্কানিতে এসব হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২০১৭ ইং সালের ২৫ আগষ্ট রাতের প্রথম প্রহরে মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম রাজ্যের পাহাড়ের পূর্ব পাশে রাশিদং, রাজারবিল, বড়ছড়া, আন্দাম, ধুপমাইল, কুল্লুং, শীতাইক্যা, মন্ডুর মেরুল্লা, হাসছুরাতা, বাগঘোনা, তালাসখ, রাবাইল্যা, ঝিমংখালী, কুয়াংছিপং, তুমব্রু, ক্যাংবং, বুচিদংস্থ টংবাজার, মিংনিশি, পীরখালী, মগডিল, বলী বাজার, ফৈরা বাজার, কুয়ারবিল, মন্ডুর হাইন্ডার পাড়াসহ ২৪টি এলাকার সীমান্ত চৌকি ও সেনা ঘাটিতে স্বশস্ত্র হামলার ঘটনা ঘটে। এই সময় হামলাকারী ও সরকারী বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি এবং সংঘর্ষের সুত্রপাত হয়ে পুরো এলাকায় ছড়িয়ে থেমে থেমে লড়াই চলতে থাকে। ব্যাপক ভারী অস্ত্রের ব্যবহার ও বিকট শব্দে সীমান্তের মানুষ চরম আতংকিত হয়ে পড়ে। এই ঘটনার জন্য সংখ্যালঘু মুসলিমদের দায়ী করে।
এরপর হতে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী, সীমান্ত রক্ষী, নৌ সদস্য ও উগ্র রাখাইনদের যৌথ হামলায় হাজার নারী ধর্ষণের শিকার হয় আর অসংখ্য মানুষ নৃশংসভাবে হত্যার শিকার হয়। কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় অগণিত মানুষকে। শেষ পর্যন্ত প্রাণ রক্ষায় উখিয়া-টেকনাফের সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশু বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্ষপূর্তিতে আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ের নিকট রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রীয় ছত্র-ছায়ায় নারকীয় হত্যাযঞ্জের সুবিচার দাবী করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।
এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার রবিউল হোসেন বলেন এই বিষয়টি সরকারের নজরে রয়েছে। তবে এই ঘটনায় কেউ ক্যাম্পের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে।