যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে নতুন দিগন্তের উন্মোচন প্রধানমন্ত্রীর

0

সিটিনিউজবিডি :   দুটি ‘লার্জ প্যাট্রল ক্রাফ্ট’ (এলপিসি) নির্মাণকাজ শুরুর মাধ্যমে গতকাল দেশে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হল। এটি বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে খুলনা শিপইয়ার্ডে কবুতর ও বেলুন উড়িয়ে এলপিসি দুটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।

একই অনুষ্ঠানে তিনি নৌবাহিনীর জন্য কন্টেইনার ভেসেল উন্মুক্ত করেন।

খুলনা শিপইয়ার্ড বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য বর্তমানে বড় ও ছোট যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ এবং সংস্কারের পাশাপাশি সমুদ্রগামী বড় ও মাঝারি জাহাজ তৈরি করছে। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আগামীতে আমরা উন্নত ও আধুনিক যুদ্ধজাহাজ রফতানির সক্ষমতা অর্জনে সক্ষম হব। এ ছাড়া মংলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দীগরাজ নৌ-ঘাঁটিতে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী বছরের মাঝামাঝি নৌবাহিনীতে দুটি সাবমেরিন যুক্ত করা হবে।

এ প্রেক্ষাপটে খুলনা শিপইয়ার্ড হচ্ছে বাংলাদেশের কৌশলগত সম্পদ। এর আরও উন্নয়ন ও গতিশীলতায় তার সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ ছাড়া তিনি বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ড শিল্প হিসেবে ব্যবসার পাশাপাশি সামাজিক কল্যাণেও অবদান রাখছে।

খুলনা শিপইয়ার্ডের অনুষ্ঠানে নৌবাহিনীপ্রধান ও খুলনা শিপইয়ার্ডের পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ভাইস অ্যাডমিরাল ফরিদ হাবিব এবং শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর এম খুরশিদ মালিক বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী খুলনা শিপইয়ার্ডে পৌঁছলে বিমানবাহিনীপ্রধান ও খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকে স্বাগত জানান। বিএনএস তিতুমীর নৌ-ঘাঁটি থেকে খুলনা শিপইয়ার্ডে যাওয়ার পথে হাজার হাজার মানুষ রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে জাহাজের চাহিদা বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে শুরু করেছে। এখন অনেক দেশ খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। মংলায় জয়মনি গোলে স্থায়ী সম্পদের ব্যবহার দেশে জাহাজ তৈরি শিল্পকে আরও সম্প্রসারিত করবে। তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভেসেল নির্মাণ, প্রয়োজনীয় ড্রেজিং ও অন্যান্য যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণে সক্ষমতা ও বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তোলা অপরিহার্য।

সরকারের ১৯৯৯ সালে নৌবাহিনীকে খুলনা শিপইয়ার্ড হস্তান্তরের উদ্দেশ্য আজ সফল হয়েছে। পাঁচটি যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের পর, এখন লার্জ প্যাট্রল ক্রাফ্ট নির্মাণকাজের মাধ্যমে এই সংস্থা দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়াল। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, নৌবাহিনীর নৌ-কল্যাণ ফাউন্ডেশনের জন্য খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের নবনির্মিত আধুনিক কন্টেইনার ভেসেল এই ইয়ার্ডের বিকাশমান কারিগরি ও প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা আরও সমৃদ্ধ করবে এবং তা জাতীয় অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখবে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ নৌরুটে কন্টেইনার জাহাজে বিশেষ করে চট্টগ্রাম, পানগাঁও ও মংলা বন্দর থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সহজেই পণ্য পরিবহন করা যায়। প্রধানমন্ত্রী এই প্রচেষ্টায় পাশে রয়েছে এমন বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমি আশা করি আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোর সঙ্গে এ ধরনের যৌথ উদ্যোগ দীর্ঘদিনের বিদ্যমান সম্পর্ক আরও সংহত করবে এবং একইসঙ্গে এ ধরনের উদ্যোগের ফলে কার্যকর প্রযুক্তি হস্তান্তর সম্ভব হবে।

শ্রমিকদের সুখ, সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে তার সরকার সর্বদা সক্রিয় রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সংশোধনীর মাধ্যমে শ্রম আইন-২০০৬ সময়োপযোগী করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে এই শিপইয়ার্ড আপনার, তাই এই শিপইয়ার্ড কার্যকর ও অব্যাহত শান্তিপূর্ণ রাখা আপনার পবিত্র দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুলনা শিপইয়ার্ড দেশের জন্য যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে পথিকৃতের ভূমিকা পালন করছে, পাশাপাশি বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত করার প্রক্রিয়া হিসেবে বিদেশ থেকেও যুদ্ধজাহাজ আমদানি করা হচ্ছে।

প্রত্যাশার অধিক অর্জনের কৃতিত্বের জন্য শিপইয়ার্ড সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১৫ বছরের কঠোর পরিশ্রম, আন্তরিক প্রচেষ্টা ও দক্ষ কর্মতত্পরতার ফলে এ ধরনের সাফল্য এসেছে। তিনি বলেন, আপনারা পুনরায় প্রমাণ করেছেন, সঠিক নির্দেশনা ও ব্যবস্থাপনায় আপনারা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন। এর জন্য গোটা জাতি গর্বিত এবং আপনাদের আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোনো রুগ্ণ শিল্প বেসরকারিকরণ না করার জন্য তার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বরং এই শিল্পের জমি উন্নয়ন করা হবে এবং কলকারখানা স্থাপনের জন্য বেসরকারি খাতকে আহ্বান জানানো হবে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, খুলনা শিপইয়ার্ডের অবস্থান কেবল বাংলাদেশেই নয়—আন্তর্জাতিক পরিসরেও স্থান করে নেবে। তিনি দেশে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই শিপইয়ার্ডে ড্রেজার ও ফেরি তৈরির জন্য পরামর্শ দেন।

নৌবাহিনীতে ২টি সাবমেরিন যুক্ত হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে একটি অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, ২০১৬ সালের মাঝামাঝি নৌবাহিনীতে দুটি সাবমেরিন যুক্ত হবে। শেখ হাসিনা বলেন, সাবমেরিনের জন্য ঘাঁটি ও অন্যান্য অবমাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। একইসঙ্গে খুলনা নদী অঞ্চলে পূর্ণাঙ্গ নৌবহর কার্যক্রম চালুর ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল মংলায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দীগরাজ নৌ-ঘাঁটিতে একটি ‘অয়েল ফ্লিট ট্যাঙ্কার’ কমিশনিং এবং দুটি ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট ইউটিলিটি (এলসিইউ) ও দুটি ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট ট্যাঙ্কার সংযুক্তকরণ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেওয়ার সময় এ কথা বলেন।

এতে দেশে নির্মিত প্রথম অয়েল ফ্লিট ট্যাঙ্কার খানজাহান আলী এবং এলসিইউ জাহাজ সন্দ্বীপ ও হাতিয়া… এবং দুটি ল্যান্ডিং ক্রাফ্ট ট্যাঙ্কার—এলসিটি-১০৩ ও এলসিটি-১০৫ যথাক্রমে নৌবাহিনীতে কমিশনিং ও সংযুক্ত হয়।

প্রধানমন্ত্রী মংলা নৌ-ঘাঁটিতে পৌঁছলে বিমানবাহিনীপ্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল ফরিদ হাবিব এবং খুলনা নৌ-অঞ্চলের কমান্ডার তাকে স্বাগত জানান। নৌবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার জানায়। তিনি গার্ড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ঐতিহ্য অনুসারে ‘শিপ বেল’ বেজে ওঠে এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.