ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফাঁসলেন ওসি হিমাংসু
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ অবশেষে অন্যকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফাঁসলেন। চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার (ওসি) হিমাংসু দাশকে জেলা পুলিশ লাইনে বদলি করা হয়েছে। শিক্ষানবীশ আইনজীবী সমর কৃষ্ণ
চৌধুরীকে অস্ত্র ও ইয়াবা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে বিতর্কের মুখে তাকে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে এলওআর এ বদলী করা হয়েছে।
শনিবার বিকেল তিনটার দিকে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) নুরে আলম মিনা বদলির এই আদেশ জারি করেছেন। এসপি নুরে আলম মিনা বলেন, প্রশাসনিক কারণে নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ওসি হিমাংসু দাশ রানাকে পুলিশ লাইনে বদলি করা হয়েছে। সাময়িকভাবে ওই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওসি’র দায়িত্ব পালন করবেন।
সূত্র মতে, এসপি’র আদেশে ওসি হিমাংসুকে প্রশাসনিক কারণে জেলা পুলিশ লাইনে এলওআর (লাইন অর্ডিনারি রিজার্ভ) পদে বদলির কথা বলা হয়েছে। পুলিশ বিভাগে এটি গুরুত্বহীন পদ হিসেবে বিবেচিত। সাধারণত বিভাগীয় শৃঙ্খলা-ভঙ্গের জন্য শাস্তিমূলক প্রক্রিয়া গ্রহণের আগে এই ধরনের পদে বদলি করা হয়।
সূত্র জানায়, শিক্ষানবীশ আইনজীবী সমরকে ফাঁসানোর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে বোয়ালখালী থানার তিন পুলিশ কর্মকর্তা এতে জড়িত থাকার প্রমাণ পায় জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি। অভিযুক্তরা হলেন : ওসি হিমাংশু দাশ রানা, এসআই আতিকুর রহমান ও এসআই আরিফুল ইসলাম।ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১৯ জুলাই আরিফুর এবং ১১ আগস্ট আতিকুরকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
জানা গেছে, এসপি নুরে আলম মিনা ওসি হিমাংসুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজি) কাছে সুপারিশ পাঠান। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্ব প্রক্রিয়া হিসেবে হিমাংশুকে পুলিশ লাইনে বদলি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মে বোয়ালখালী থানা পুলিশ সমর চৌধুরীকে নগরীর লালদিঘি এলাকা থেকে আটক করে। এরপর তাকে গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের দক্ষিণ সারোয়াতলী গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। তার গ্রামের বাড়ি থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে দাবি করে পুলিশ বোয়ালখালী থানায় দুটি মামলা দায়ের করে। শুধু মামলা করেই ক্ষান্ত হননি ওসি হিমাংসু তার হাতে অস্ত্র দিয়ে বিছানার নীচে ইয়াবা রেখে অস্ত্র ও ইয়াবা দিয়ে ছবি তুলে গণমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। সমর চৌধুরী থাকেন শহরে আর অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার করলেন তার গ্রামের বাড়ীর বিছানার নীচ থেকে। কি অদ্ভূদ ব্যাপার। আর এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় সমর চৌধুরীকে।
গ্রেপ্তারের পর থেকে সমরের পরিবার দাবি করে আসছিল, তাদের গ্রামের লন্ডনপ্রবাসী যুবক সঞ্জয় দাশের সঙ্গে তার প্রতিবেশী স্বপন দাশের জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ আছে। স্বপন দাশকে আইনি পরামর্শ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সঞ্জয় দাশ পুলিশকে ব্যবহার করে সমরকে দুটি মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন।
পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি এস-এম-মনিরুজ্জামানের প্ররোচনায় ওসি হিমাংশু কুমার দাশের ইন্ধনে সমর চৌধুরীকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছিল সমরের পরিবার।
এই গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় ওঠে। প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার প্রতিনিধিরা। ওসি হিমাংসু সমর চৌধুরীর বাড়ি সারোয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদে একটি সভায় গিয়ে গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়েন ।
গত ২ জুলাই সমরের মেয়ে অলকানন্দা চৌধুরী ও তমালিকা চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে তার বাবার মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এরপর ১২ জুলাই সমর জামিনে মুক্তি পান। জামিনে মুক্ত হয়ে সমর গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাকে ক্রসফায়ারে দিতে চেয়েছিল। সমরকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে বিতর্কে পড়া ডিআইজি মনিরুজ্জামানকে গত জুলাই মাসে বদলি করা হয়।
সমর চৌধুরীর মেয়ে তমালিকা চৌধুরী আজকে তার ফেইসবুকে বলেন, বোয়ালখালী থানার ওসি হিমাংসু দাশ এই নামটি আমাদের পুরো পরিবারের জন্য একটা দুঃস্বপ্ন। গত কয়েক মাস ধরে এই লোকটার জন্য আমাদের সুখের পরিবারে নেমে এসেছিল অমানিশার অন্ধকার। বাবাকে ধরে নিয়ে যাবার পর থেকে প্রতিটা মুহুর্ত কেটেছে আতংকে। বাবা তথা আমাদের সবার জীবন নরকে পরিনত করে দিয়েছিল।
লন্ডন প্রবাসী সঞ্জয় দাশ এর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা খেয়ে আমাদের নিরপরাধ বাবাকে ক্রসে দিতে চেয়েছিল হিমাংসু। সেই ২৭ মের রাতের ঘটনা মনে পড়লে এখনো বাবা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সমস্ত বর্বর পুলিশদের শুধু বদলী নয় কঠোর শাস্তি চাই।
অন্য একটি সুত্র জানায়, ওসি হিমাংসুর রয়েছে নগরী কিংবা জেলার সন্ত্রাসীদের সাথে বেশ সখ্যতা। নগরীর সিআরবির জোড়া খুনের মামলার আসামী অজিতের সাথে রয়েছে তার ছবি। পুলিশের এক অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওসি হিমাংসু টাকা পেলে এমন কোন কাজ নাই করতে পারে না। বাঁশখালীতে তার সময়কালে ইয়াবা পাচারের নিরাপদ রুট করে দেন। তার এসমস্ত দুনম্বরী কাজের কারনে তার সময়কার বেইচমেন্টরা সবার পদোন্নতি হলেও তার কোন পদন্নোতি হয়নি।