সীমান্ত পথে আসছে কোরবানির পশু

0

সিটিনিউজবিডি :  আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশু সহজলভ্য করতে ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, ভুটান থেকে গরু আমদানির তত্পরতা চলছে। ইতোমধ্যে মিয়ানমার থেকে গরু আসা শুরু হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জেলার সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন গরু আসছে। তবে ভারতীয় গরু আসতে শুরু করায় শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন কুষ্টিয়ার খামারি ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, সীমান্ত পথে গরু এলে দেশে গরু মোটাতাজাকারী চাষিরা ব্যাপক লোকসানে পড়বেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, কোরবানির জন্য এবার দেশীয় গরু মোটাতাজাকরণের সংখ্যাও আগের বছরের চেয়ে কয়েক লাখ বেশি করা হয়েছে। কোরবানির গরু নিয়ে মানুষের যে শঙ্কা রয়েছে তা শিগগিরই কেটে যাবে।

কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার সবচেয়ে বড় পশুর হাট বালিয়াপাড়ার ব্যবসায়ী ইদবার আলী জানান, ‘কয়েক সপ্তাহ ধরে আমরা শুনে আসছি ভারত, নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার থেকে গরু আসবে। কিন্তু বিভিন্ন বড় হাটের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে-তারা জানিয়েছেন ভারত থেকে এখনও গরু আসা শুরু করেনি। কিছু ব্যবসায়ী নেপাল ও ভুটান থেকে গরু আমদানির চেষ্টা করছেন। এছাড়াও কুষ্টিয়া, যশোর ও সাতক্ষীরা সীমান্তে ভারত থেকে গরু ঢোকাতে সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করছেন ব্যবসায়ীরা। ভারত থেকে গরু আসা শুরু করলে দেশি গরু চাষিরা ব্যাপক লোকসানে পড়বেন। গ্রামের হাটগুলোতে কৃষক ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে সে আশঙ্কা রয়েছে।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সীমান্তগুলো দিয়ে ভারতীয় গরু আসা শুরু হয়েছে। তবে সেটি গত ২ থেকে ৩ মাসের তুলনায় অনেক কম। গতকাল চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাসুদপুর, মনোহরপুর, রঘুনাথপুর, জহুরপুর, বিভীষণ, রোকনপুর সীমান্তগুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিদিন গড়ে প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার গরু-মহিষ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বাখেরআলী বিটে গরু ব্যবসায়ী সালাম আলী জানান, বেশিরভাগ গরু চলে যাচ্ছে ঢাকা-চিটাগাংয়ে। খামারিরাই বেশি গরু কিনছে। কিন্তু বর্ডার দিয়ে প্রতিদিনই গরু আসে না। তবে গত কয়েকদিন থেকে মোটামুটি গরু আসছে। সীমান্তে বিএসএফের তত্পরতার ওপর গরু আসা নির্ভর করে।

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, সীমান্তে রাখালদের দেখামাত্র গুলির আতঙ্কে গরু আসা এক ধরনের বন্ধ হয়ে গেছে। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে সীমান্তের ওপারে হাজার হাজার গরু জড়ো করে রেখেছে সে দেশের ব্যবসায়ীরা। আর সুযোগ বুঝে সীমান্ত পেরিয়ে দেশের অভ্যন্তরে গরু আনার চেষ্টা করছে বংলাদেশি গরু ব্যবসায়ীরা। সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত স.ম. মোরশেদ জানান, ঝুঁকির কারণে কোনো গরুর রাখাল এখন আর গরু আনতে ভারতে যেতে সাহস পাচ্ছে না। তিনি জানান, সাতক্ষীরা সীমান্তে বর্তমানে গরু-মহিষ আসা বন্ধ রয়েছে।

কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে মিয়ানমার থেকে গরু, মহিষ ও ছাগল আসতে শুরু করেছে। টেকনাফের গরু ব্যবসায়ী আবু সৈয়দ জানান, আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর ঘাটতি মেটাতে মিয়ানমার থেকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ করিডোরে প্রচুর পরিমাণে গরু, মহিষ ও ছাগল আনছেন। টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ করিডোর ব্যবসায়ী মো. নুরুল হক জানান, প্রতিবছরের মতো এবারও মিয়ানমার থেকে গবাদি পশু আমদানি করা হচ্ছে। তবে এ সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। টেকনাফ শুল্ক স্টেশনের কাস্টম সুপার হুমায়ুন কবির জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে করিডোরে ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে প্রচুর গবাদি পশু আমদানি শুরু করেছেন। তাদের আরও বেশি গবাদি পশু আমদানি করার জন্য উত্সাহিত করা হচ্ছে।

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, জেলার ৫২৩টি খামারে ও কৃষক পর্যায়ে অন্তত ৭১ হাজার গরু মোটাতাজা করা হয়েছে। বছরখানেক ধরে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির গরু নিবিড় পরিচর্যায় প্রতিটিই এখন যথেষ্ট মোটাতাজা। তা এখন বিক্রির অপেক্ষায়। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন হাটে গরু কেনাবেচা শুরু হয়েছে। তবে আসন্ন কোরবানিতে পশুর কিছুটা সঙ্কট হলেও সেটি সঠিকভাবে কাটিয়ে উঠতে পারলে দেশে গরু উত্পাদন বাড়বে বলে জানিয়েছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি উত্পাদন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।

তিনি জানান, দেশে গরু উত্পাদন বাড়াতে হবে। সেজন্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। দেশের পরিবেশে টেকসই জাতেরগুলো কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে উত্পাদন বাড়াতে হবে। সে সঙ্গে উন্নত জাতের কৃত্রিম প্রজননের পাশাপাশি দেশের নিজস্ব জাতগুলো নিয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন। গবাদি পশুর জন্য পুষ্টিকর খাদ্য ও টিকার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক অজয় কুমার রায় জানান, উত্পাদন বাড়াতে ইতোমধ্যে বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভারত থেকে গরু আসছে না সেটি জেনে চাষিরা উত্পাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। আশা করি, দেশি উত্পাদিত গরুতে এবারের চাহিদা পূরণ হবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদফতর জানিয়েছে, গত বছর কোরবানি হয়েছিল ৭০ লাখ পশু। এ বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯৬ লাখ। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে বর্তমানে গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৩৬ লাখ এবং ছাগলের সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। সারাদেশে গরুর খামার রয়েছে ৫০-৬০ হাজার। এছাড়া দেশের প্রতিটি উপজেলায় গড়ে ৫০-৭০টি ছোট ছোট খামার গড়ে উঠেছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.