ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিকম্পে চার শতাধিক মানুষের মৃত্যু

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: প্রায় ৪০০ মানুষের মরদেহকে পেছনে রেখে হন্যে হয়ে জীবনের খোঁজে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ইন্দোনেশিয়া। সিএনএন জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ২৯ জনের নিখোঁজ থাকার ঘটনা চিহ্নিত করা গেছে। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন অর্ধসহস্রাধিক মানুষ। বিদ্যুৎ ও ফোনের নেটওয়ার্কহীন অবস্থায় হাসপাতাল থেকে যে কোনও ধরনের সহযোগিতার জন্য আকুল আবেদন জানানো হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় আশঙ্কা করছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

২৮ সেপ্টেম্বর শুক্রবার ইন্দোনেশিয়ার সুলাবেসি দ্বীপে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। শহরটিতে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষের বসবাস। সেখানে কম্পনের পর ছোট্ট শহর পালুতে আছড়ে পড়ে প্রলয়ঙ্করী সুনামির ঢেউ। সুউচ্চ ঢেউ লণ্ডভণ্ড করে দেয় উপকূলীয় এলাকা। শুক্রবারের কম্পন ও সুনামির পর শনিবার উপকূলে সন্ধান মিলেছে বহু মরদেহের। ভূমিকম্প-সুনামির ধাক্কায় আহ্ত হয়েছে শত শত মানুষ। আহত বিপুল সংখ্যক মানুষকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। অনেককে খোলা আকাশের নিচে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

পালুর আনডাটা হাসপাতালের পরিচালক এক টুইটার বার্তায় জানিয়েছেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের হাসপাতালে বিদ্যুৎ নেই। রাস্তাগুলো সব বন্ধ হয়ে আছে। টেলিফোন নেটওয়ার্ক কাজ করছে না। যে কোনও ধরনের সহায়তার জন্য আমরা হাত পেতে আছি। আমাদের তাঁবু দরকার, নার্স দরকার, ওষুধ দরকার।’

ভূমিকম্প-সুনামির তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি। উপদ্রুত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধার কার্যক্রম। শুক্রবারের ভূমিকম্প ও সুনামির পর শনিবার সকালেও উপকূলীয় পর্যটন এলাকায় ৯ দশমিক ৮ ফুট পর্যন্ত উঁচু ঢেউ পরিলক্ষিত হয়েছে।

জাকার্তায় এক সংবাদ সম্মেলনে ইন্দোনেশিয়ার দুর্যোগ প্রশমন সংস্থা (বিএনপিবি)-এর মুখপাত্র সুতোপো পুরো নাগ্রহ বলেন, সুনামির ফলে উপকূলে বহু মরদেহের সন্ধান মিলেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে এ পর্যন্ত ৩৮৪ জনের মৃত্যুর কথা জানা গেলেও প্রাণহানির প্রকৃত সংখ্যা এখনই বলা যাচ্ছে না। এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকাল ৫ টার দিকে সুলাবেসি দ্বীপে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ওই ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। এর আগে অঞ্চলটিতে মাঝারি মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়। দ্বিতীয় কম্পনের পর শুরু হয় সুনামির ভয়াবহতা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, লোকজন চিৎকার করছে। আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু স্থাপনা।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সুনামির আঘাতে ভবন ধস ও নৌযান ভাসিয়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। ইন্দোনেশিয়ার আবহাওয়া ও ভূপ্রকৃতিবিদ্যা বিভাগের প্রধান জানান, পালুতে সুনামি আছড়ে পড়েছে। ভূমিকম্পের পর বেশ কয়েকটি আফটার শক হয়। এরপরই সুনামি আছড়ে পড়ে। তিনি বলেন, সুনামিটি ছিল দেড় থেকে দুই মিটারের। তা শেষ হয়ে গেছে। তবে পরিস্থিতি এখনও বিশৃঙ্খল। মানুষজন রাস্তায় দৌড়াদৌড়ি করছে। ভবন ধসে পড়েছে এবং নৌযান সাগরে ভেসে গেছে।

ভূমিকম্পের পরপরই সুনামির সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। পরে এক ঘণ্টার মধ্যেই তা প্রত্যাহার করা হয়। সতর্কতা প্রত্যাহারের পরই সুনামি আছড়ে পড়ে। এর তাণ্ডবে ভেঙে পড়ে উপদ্রুত এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, বন্ধ হয়ে যায় স্থানীয় বিমানবন্দর। মার্কিন জিওলজিক্যাল সার্ভে প্রথমে জানিয়েছিল, কম্পনের মাত্রা ৭ দশমিক ৭। তবে পরে জানানো হয়, রিখটার স্কেলে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার কম্পন ধরা পড়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইন্দোনেশিয়ার পাশাপাশি জাপানেও জারি করা হয় সুনামি সতর্কতা।

ভূমিকম্পপ্রবণ দেশগুলির মধ্যে প্রথম সারিতেই ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থান। ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট দেশটির লম্বক দ্বীপে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে ৪৬০ জনেরও বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে। ২০০৪ সালের প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের জেরে সুনামি আছড়ে পড়ে অন্তত ১৩টি দেশে। ওই সুনামিতে উপদ্রুত দেশগুলোতে দুই লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এর মধ্যে শুধু ইন্দোনেশিয়াতেই মৃতের সংখ্যা ছিল এক লাখ ২০ হাজার। সূত্র: সিএনএন, রয়টার্স।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.