সোহরাওয়ার্দীতে শোকরানা মাহফিলঃ দোয়া চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃঃ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশের কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক আলেম-ওলামা সমাজের কাছে দোয়া চেয়েছেন।

আজ রবিবার (৪ নভেম্বর ) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত শোকরানা মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি, যে আজকে এই শোকরানা মজলিসের আয়োজন করেছেন। এবং কষ্ট করে আপনারা এখানে এসেছেন। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে যাঁরা এই অনুষ্ঠানকে সফল করার জন্য সহযোগিতা করেছেন, সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। সেইসঙ্গে আপনাদের দোয়া চাই, সামনে নির্বাচন আছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যদি ইচ্ছা করেন, নিশ্চয়ই তিনি আবার বাংলার মানুষের খেদমত করার সুযোগ আমাদের দেবেন। আর যদি আল্লাহ না চান, দেবেন না। আমার কোনো আফসোস থাকবে না। কারণ আমি এ সবকিছু আল্লাহর ওপরেই ছেড়ে দিয়েছি।’

কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে এই সনদের জন্য তারা চাকরি পাবে। দেশে-বিদেশে কাজ করতে পারবে। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। এই সুযোগটা আমরা এই কওমি মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের জন্য করে দিতে পেরেছি। তাদের জীবনটা সুন্দর হবে। এবং সুন্দরভাবে তারা বাঁচতে পারবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশে শান্তি থাকলেই, উন্নতি হবে। উন্নতি থাকলেই সবাই লাভবান হবে। এবং আপনারা দেখেছেন, আমাদের উন্নতি ওই তৃণমূলে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত। আমরা চাই, বাংলাদেশে কোনো মানুষ ভিক্ষা করবে না। প্রত্যেক মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করব। যার কামাই করার তৌফিক নাই, যিনি অসুস্থ বা প্রতিবন্ধী অথবা বয়োবৃদ্ধ, তাদেরকে আমরা ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তাদের বিনা পয়সায় খাদ্য আমরা সরবরাহ করছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের কাছে অনেক সহায়, আজকে আমরা খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি। আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ।’

আমি আবারও একটু বলব, পিতা-মাতা ভাই সব হারিয়েছি। আমি নিঃস্ব রিক্ত, আমি এতিম। আমরা দুটি বোন আছি। আমাদের জন্য একটু দোয়া করবেন। আমাদের ছেলেমেয়ে-নাতিপুতির জন্য দোয়া করবেন। তাঁরা যেন সুন্দরভাবে সুস্থভাবে থাকতে পারে। আর দোয়া করবেন বাংলাদেশের জনগণের জন।

আজ কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির স্বীকৃতি দিয়ে সংসদে আইন পাস হওয়ায় এই ‘শোকরানা মাহফিল’-এর আয়োজন করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে প্রধান অতিথি হিসেবে মাহফিলে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে এই মাহফিল শুরু হয়। এর আগেই আলেমদের সমাগমে একপ্রকার জনসমুদ্রে পরিণত হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।

ঢাকাসহ সারা দেশের কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বাস, ট্রেন, লঞ্চে করে ভোর থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে রওনা দেন। রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, মোহাম্মদপুর, গুলিস্তান, শাহবাগসহ বিভিন্ন জায়গায় মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শোকরানা মাহফিলে অংশ নিতে যেতে দেখা গেছে। টিএসসি ও মাজারগেট দিয়ে মাহফিল স্থানে প্রবেশ করেছেন সারা দেশ থেকে আসা বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। পরে সমাবেশ থেকে ইমাম-মোয়াজ্জেমদের জন্যে ভাতার দাবি তোলা হয়।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। থানা পুলিশ, মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি), সাদা পোশাকের গোয়েন্দা পুলিশ ছাড়াও আয়োজক আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের স্বেচ্ছাসেবীরা নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর চারপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও এপিবিএনের সদস্য মোতায়েন করা হয়। শাহবাগ ও টিএসসি মোড়ে প্রস্তুত রাখা হয় পুলিশের সাঁজোয়া যান। ইউনিফর্মের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন।

শাহবাগ, মৎস্য ভবন, হাইকোর্টের সামনের এলাকা, দোয়েল চত্বর, টিএসসি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রতিটি প্রবেশপথে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এ ছাড়া প্রতিটি প্রবেশপথে বসানো হয় আর্চওয়ে। মেটাল ডিটেক্টর ও হাতে তল্লাশির মধ্য দিয়ে সভাস্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানের কারণে রাজধানীর শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবন, দোয়েল চত্বর এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে সব ধরনের যানবাহন প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। তবে ভেতরে সীমিত আকারে যান চলাচল করে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.