পরিবেশ ধ্বংস করে দেশ উন্নয়ন অসম্ভব
সিটি নিউজ,চট্টগ্রাম : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় সুনির্দিষ্ট দাবী নির্বাচনী ইশতেহারেও সংযুক্তির দাবীতে গ্রীণ অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে চুয়েটের প্রাক্তন ভিসি প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, এখন থেকে পরিবেশ সম্মত মাস্টার প্ল্যান গ্রহন করে উন্নয়ন কার্যক্রম না করলে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তর করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, দেশে সুষম উন্নয়ন করতে এখন থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে ব্যবহারিক পরিবেশ শিক্ষা বাধ্যতা মূলক করতে হবে।
পলিথিন নিষিদ্ধ, জলাশয়, ফসলি জমি সুরক্ষিত রেখেই দেশে উন্নয়ন করতে হবে। এই সব কাজ করতে হলে আগামি নির্বাচনি ইশতেহারে প্রত্যেক দল ও প্রার্থীকে সুপারিশকৃত দাবীসমূহ সংযুক্ত করতে হবে। ১৭ নভেম্বর শনিবার দুপুর বারটায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, সাংবাদিক ও পরিবেশ কর্মী আলীউর রহমান। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৫ বছরে দেশের ৬৫ হাজার হেক্টর বনভূমি কমেছে।
এর মধ্যে গত পাঁচ বছরেই কমেছে ১৩ হাজার হেক্টর। আর ১৯৯০ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দেশের কৃষিজমি কমেছে ১১ লাখ ৪৫ হাজার হেক্টর। ‘স্টেট অব দ্য ওয়ার্ল্ডস ফরেস্ট-২০১৬’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের ২০০টি দেশের মধ্যে ১৭টি দেশের কৃষিজমি ও বনভূমি দুই-ই কমেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের নাম শীর্ষে রয়েছে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানা নির্মাণে ব্যবহারের কারণে প্রতিদিনই কমছে কৃষি জমি। দিনে দুই হাজার বিঘা জমি কৃষি থেকে অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে।
একইভাবে হারিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন ৯৬ বিঘা জলাভূমি। সেসব জলাভূমিও ভরাট করে ভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১১ বছরে ২৬ লাখ ৫৫ হাজার ৭৩১ একর কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ায় কমে গেছে ধান চাষ। নদী গবেষকরা বলছেন, ষাটের দশকে সাড়ে সাতশ’ নদী ছিল বাংলাদেশে। বর্তমানে এ সংখ্যা কমে মাত্র ২শ’ ৩০টিতে দাঁড়িয়েছে। ৫০ বছরে হারিয়ে গেছে ৫২০টি নদী। বর্তমানের ২৩০ নদীর মধ্যে ৫৯টি আন্তর্জাতিক। এগুলোর মধ্যে ৫৪টি ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এসব নদীর উৎসমুখে বিভিন্ন স্থানে ব্যারেজ নির্মাণ কিংবা পানির প্রবাহে বাধা দেওয়ায় বাংলাদেশে ঢোকার পর এসব নদীতে পানির পরিমাণ একেবারেই কমে যায়।
লিখিত বক্তব্যে নির্বাচনি ইশতেহারে সংযুক্ত করার সুপারিশ সমূহ হচ্ছে
১। ৩ ফসলি জমিতে যে কোন ধরণের উন্নয়ন পরিকল্পনা বন্ধ করতে হবে।
২। নদী খাল বিল জলাশয় রক্ষায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। নদী, খালের স্বাভাবিক গতিতে বাধা সৃষ্টি হয় এমন কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করা যাবে না।
৩। মহানগরী এবং জেলা, উপজেলা শহর, প্রতিটি গ্রামে ফসলি জমি ও জলাশয় ভরাট করে আবাসিকসহ যেকোন স্থাপনা নির্মান বন্ধ করতে হবে। ভিটিভূমির বাইরে কোন প্রকার স্থাপনা নির্মান করতে জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নেয়াটা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৪। সংরক্ষিত বনাঞ্চল যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে নাগরিকসাধারণের মধ্যে বৃক্ষ রোপন ও বৃক্ষ রক্ষায় আগ্রহ সৃষ্টিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি বৃক্ষ নিধনের সাথে যুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির উদ্যোগ থাকতে হবে। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে বৃক্ষ সুরক্ষার বিধি নিশ্চিত করতে হবে।
৫। উন্নয়ন বরাদ্ধে পরিবেশ রক্ষায় সুনির্দিষ্ট বাজেট ও তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৬। নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌ যোগাযোগ আছে এমন জেলায় সকল প্রকার পন্য নৌ পথে পরিবহনের অবকাঠামো সৃষ্টি করে নৌ পথে পণ্য পরিবহন উৎসাহিত করতে হবে। এতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর চাপ কমার ফলে যানজট বন্ধ হবে। এতে জ্বালানি সাশ্রয় ও পরিবেশ দূষণ কম হবে।
৭। দেশের নদ-নদী,সমুদ্র উপকূল রক্ষায় ‘নদী ও উপকূলীয় মন্ত্রণালয়’ সৃষ্টি করতে হবে।
৮। পরিবেশ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সমূহে পরিবেশবিশেষজ্ঞদের নিয়োগদান নিশ্চিত করতে হবে।
৯। ব্যাংক, বীমা, আর্থিক বিণিয়োগ বিণিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও এসএমই অর্থায়নে গ্রিন ব্যাংকিং ও পরিবেশ বান্ধব বিনিয়োগ আরো বেশি উৎসাহিত করতে হবে।
১০। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ব্যবহারিক পরিবেশ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
১১। নদী, জলাশয়, সমুদ্র, বনাঞ্চল রক্ষায় গবেষণার জন্য বার্ষিক বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
১২। নবায়নযোগ্য শক্তি (সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট, বায়ু চালিত বিদ্যুৎ (উইন্ড মিল) জলবিদ্যুৎ) আগামী পাঁচ বছরে মোট উৎপাদনের ২৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
১৩। আর্ন্তজাতিক জলবায়ু তহবিল থেকে অধিক অর্থ আদায়ের ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। আর্ন্তজাতিক তহবিল থেকে প্রাপ্ত অর্থ দেশের পরিবেশ রক্ষায় ব্যয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
১৪। ‘কৃষি জমি কমে গিয়ে অনুৎপাদন খাতে চলে যেতে থাকলে জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কৃষি খাতে ভূমির সর্বো”চ ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। কৃষকদের পেশায় টিকিয়ে রাখতে প্রনোদনা বৃদ্ধি করতে হবে।
১৫। কর্ণফুলীকে জাতীয় নদী ও হালদাকে বিশেষায়িত নদী করতে হবে।
১৬। পলিথিন নিষিদ্ধ করে পচনশিল পাটের বা বিকল্প ব্যাগ ব্যহহার সুনিশ্চিত করতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থি’ত ছিলেন, কর্ণফুলী গবেষক, অধ্যাপক ড. ইদ্রিচ আলী, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সহ-সভাপতি কাজী আবুল মনসুর, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসীন চৌধুরী, পরিবেশ সংগঠন পবা সভাপতি সাংবাদিক আবছার মাহফুজ, গ্রিন ক্লাব গ্লোবাল এর সভাপতি সাংবাদিক সরওয়ার আমিন বাবু, মানব সম্পদ উন্নয়ন সংস্থা মাকস এর সভাপতি ফোরকান আবু, সংগঠক মামুন চৌধুরী প্রমুখ। বিজ্ঞপ্তি