ঘুষ দুর্নীতি মানি লন্ডারিং অপরাধ ছাড়া অন্য বিষয়ে দুদকের হাত বাঁধা

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ জানিয়েছেন, তার প্রতিষ্ঠান কেবল ঘুষ ও দুর্নীতিসম্পৃক্ত মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ বিষয়ে এককভাবে কাজ করতে পারে। অন্যান্য বিষয়ে তার হাত বাঁধা রয়েছে।

আজ সোমবার (২৫ ফেব্রুয়ারী) সেগুন বাগিচার প্রধান কার্যালয়ে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুদকের কৌশলপত্র-২০১৯ এর ওপর এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা জানান।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, অনেকেই বলেন মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে যাচ্ছে। আর এই ব্যর্থতার জন্য আমাদের দিকে অঙ্গুলি তোলা হয়। বাস্তবতা হচ্ছে, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংশোধন করে এ বিষয়ে মামলা পরিচালনার একক দায়িত্ব দুদকের হাতে থেকে নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সিআইডি, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ একাধিক সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দুদকের হাতে কেবল ঘুষ ও দুর্নীতি সম্পৃক্ত মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ তদন্তের ক্ষমতা রয়েছে। বাকি ২৬টি অপরাধ সংশ্লিষ্ট মানি লন্ডারিংয়ের তদন্ত অন্যান্য সংস্থাসমূহের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদক এই সমাজের বাইরের কোনো অংশ নয়। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, বিগত তিন বছরে সরকার, রাজনৈতিক দল কিংবা কথিত ক্ষমতাবানরা কেউ দুদককে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেননি। আমরা নিজেরা নিজেদের প্রভাবিত ভাবতে পারি। বাস্তবতা হচ্ছে, কেউ আমাদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করার সাহসও পাননি।

তিনি বলেন, আমরা কেউ-ই ধোয়া তুলসির পাতা নই। তবে, আমরা আমাদের ভুলটা স্বীকার করি। দুর্বলতা অস্বীকার করি না। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দেশের সিংহভাগ অর্থ পাচার হয়ে থাকে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং চ্যানেলে। আমরা রাজস্ব বোর্ডের কাছে ওভার ইনভয়েসিংয়ের তালিকা চেয়েছি। প্রয়োজনে তালিকা ধরে আইনি ব্যস্থা নেয়া হবে।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং সেক্টর নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, একক সেক্টর হিসেবে সর্বোচ্চ মামলা এবং গ্রেপ্তার হয়েছে ব্যাংকিং সেক্টরে। কমপক্ষে ১২০ জন ব্যাংক কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান, এমডি, জিএমসহ উচ্চ পদের কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আবার সরকারের সচিব, যুগ্ম-সচিব, মহাপরচিালক পদমর্যাদার কমকর্তাদেরও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা কৌশলগত কারণেই গ্রেপ্তার কম করছি।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, বেসিক ব্যাংকের ৫৬টি মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে আরও মামলাও হতে পারে। ব্যাংকার, ব্যবসায়ী যারা আসামি, তারাও দ্রুত মামলার চার্জশিট চান। আমরা চেষ্টা করছি। তবে, ব্যাংকের টাকাটা কিন্তু জনগণের। জনগণের টাকা ব্যাংকে ফিরে আসুক এটা জনগণ চায়। আপনারা জেনে খুশি হবেন, বেসিক ব্যাংকের প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকা ব্যাংকে নগদ জমা হয়েছে। কমিশনের মামলার কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে চুরি হওয়া কয়েক হাজার কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। আমরা অপরাধীদের পেছনে নিরবচ্ছিন্নভাবে আইনি অভিযান অব্যাহত রাখব। কাউকেই ছাড় দেব না।

তিনি বলেন, দুদক অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অধিকতর শক্তিশালী। কারণ, এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গীকার আমাদের কাছে এসেছে। দেশের সরকার প্রধান বলেছেন— দুর্নীতি সমস্যা। এর লাগাম টেনে ধরতে হবে এবং একে দমন করতে হবে। আশা করি, সকলের সম্মিলিত সহযোগিতায় দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে সক্ষম হব।

মতবিনমিয় সভায় সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার মো. জমির বলেন, বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থায় দুদকের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বচ্ছতা না থাকলে দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হয় না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুদকের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রে সততা ও নিষ্ঠার পরিবশে সৃষ্টি করতে হবে। কোচিং বাণিজ্যের মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্র এখন পয়সা উপার্জনের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শিক্ষার মানের চরম অবনতি ঘটছে। যদি সক্ষম এবং দক্ষ শ্রমশক্তি না থাকে তাহলে এদেশে কাঙ্ক্ষিত মাত্রার বিনিয়োগ আসবে না।

বাংলাদেশকে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে জানিয়ে মো. জমির বলেন, সরকারি স্কুল-কলেজে দুদকের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য সেক্টরে প্যাথলজিক্যাল টেস্টের কমিশনের অর্থ চিকিৎসকদের পকেটে যাচ্ছে। এখানে স্যাডো এরিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দুদকের এদিকেও নজর দেয়া উচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন বলেন, দুদকের মিশনে দুর্নীতির গতি প্রকৃতি নির্ণয় থাকা উচিত। কাজের মধ্যে স্বচ্ছতার দৃশ্যমান মানদণ্ড থাকবে। স্বচ্ছতা আপেক্ষিক। তাই এর একটি মানদণ্ড থাকা উচিত। কমিশনের প্রতি মানুষের ভয় ও শ্রদ্ধা থাকলে দুর্নীতি প্রতিরোধ কিছুটা সহজ হবে।

তিনি স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা খাতে দুদকের দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, চিকিৎসকদের প্যাথলোজিক্যাল টেস্ট এবং ঔষধের স্যাম্পল মাইন বোমের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলাম মজুমদার বলেন, দুদকের উচিত মেগাখাতের দুর্নীতি দমনে অধিকতর মনোনিবেশ করা। তিনি দুদকের মতো সার্বিকভাবে সরকারে একটি কৌশলপত্র প্রণয়নের সুপারিশ করেন।

বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, দুদকের প্রতি মানুষের ক্ষোভ কিংবা হতাশা থাকতেই পারে। কারণ, আমরা অতীতে রাষ্ট্রের মধ্যে ছিলাম না। রাষ্ট্র কি জানতাম না, সিটি কি জানতাম না। সবই আমাদের কাছে নতুন। তাই রাতারাতি সবকিছু আশা করলে হতাশ হতেই হবে। তবে, আশার কথা রাষ্ট্র ধীরে ধীরে দৃঢ় হচ্ছে। রাষ্ট্র আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে সংহত হচ্ছে।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.