রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে মোবাইল, রাষ্ট্রীয় তথ্য ফাঁসের আশঙ্কা
শহিদুল ইসলাম, উখিয়া (কক্সবাজার): উখিয়ার সরকারি বনভূমিতে অস্থায়ীভাবে আশ্রিত প্রায় দেড় লক্ষ রোহিঙ্গা পরিবারের বসবাস করছে প্রায় ৮ লক্ষ রোহিঙ্গা। প্রতিটি পরিবারের গড়ে ২টি করে মোবাইল ব্যবহার করলেও বাইশটি ক্যাম্পে প্রায় ১৬ লক্ষ মোবাইল ব্যবহৃত হচ্ছে ভূয়া সিমের মাধ্যমে। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সংগৃহিত এসব মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা অপহরণ খুন ধর্ষন মাদব দ্রব্য লেনদেনের মতো অপরাধ প্রবনতায় জড়িয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
আবার অনেকে আরকানের সাথে সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করে এখানকার খবরাখবর প্রেরন করায় রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ফাসেঁর আশংকা রয়েছে বলে মনে করছেন রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দরা। ফলে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হওয়ার ধারনাও করছেন তারা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন। রোহিঙ্গাদের ব্যবহৃত মোবাইলগুলো যাচাইবাছাই করে সিম সরবরাহে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মন্ত্রনালয়ের নিদের্শ রয়েছে।
মোবাইল সিম ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহারের নীতি মালা সংক্রান্ত ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উখিয়া সদরের আমিন সার্ভিস পয়েন্টের মালিক মো: নুরুল আমিন জানান, এনআইডি নম্বর ও ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়া সিম বিক্রি করা নিষেধ। রোহিঙ্গারা এত সিম কিভাবে সংগ্রহ করল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানীর নিয়োগকৃত এজেন্টগুলো ও ক্যাম্প ভিত্তিক, স্থানীয় মোবাইল ব্যবসায়ীরা অবৈধ উপায়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে সিম লেনদেন করায় রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে মোবাইল ছড়িয়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্প এলাকায় কোন প্রকার মোবাইল টাওয়ার স্থাপনের উপর বিধি নিষেধ আরোপ থাকা সত্বেও ক্যাম্পের ভিতরে ৭-৮টি টাওয়ার স্থাপনের নেপথ্যে কে বা কারা যুক্ত রয়েছে তাদের খুজেঁ বের করার দাবি জানান। ক্যাম্পে বিকাল ৫টা থেকে পরদিন সকাল ৭টা পর্যন্ত মোবাইল নেটওয়াক বন্ধ থাকার ব্যাপারে প্রশাসনের নিদের্শ থাকা সত্ত্বেও তা মানা হচ্ছে না। ক্যাম্পে কর্মরত স্থানীয় কর্মজীবি সালাউদ্দিন জানান ক্যাম্পে ২৪ ঘন্টা চালু থাকে। এমতাবস্থায় রোহিঙ্গাদের অনেকে রাখাইনে তাদের আত্বীয় স্বজনের সাথে কথা বলতেও দেখা গেছে।
রেজিঃ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের চেয়ারম্যান রশিদ আহম্মদ জানান, ক্যাম্পে অপরাধ প্রবনতার মাধ্যমে সহিংস্র ঘটনা সৃষ্টি ও অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির লক্ষ্যে মিয়ানমার সরকারের মদদপুষ্ট কতিপয় রোহিঙ্গা মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে মিয়ানমারের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করে এদেশে যাবতীয় তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করছে। এসব রোহিঙ্গাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা না হলে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া আরও বিলম্ব হতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।
নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা বেশে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী প্রত্যাবাসন বিরোধী কাজ করছে। তারা মোবাইল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এখানকার সার্বিক পরিস্থিতি সুনিদিষ্ট স্থানে তুলে ধরছে বলে প্রতিয়মান হয়। তিনি রোহিঙ্গাদের মোবাইল সিমগুলো জব্ধ করে যাচাই বাছাই করার জন্য আহবান জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: নিকারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন। ইতি পূর্বে ক্যাম্পে বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ১০/১২টি মোবাইল দোকান মালিককে আটক করা হয়েছিল। এবার বড় ধরনের অভিযান বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।