গৃহায়ন কর্মকর্তাকে মারধরের জেরঃ কর্মবিরতিতে প্রকৌশলীরা

0

কারেন্ট টাইমসঃ  চট্টগ্রাম গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের এক প্রকৌশলীকে মারধরের জেরে কর্মবিরতি পালন করছেন জাতীয় গৃহায়ন চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রকৌশলীরা। তাদের অভিযোগ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন এক প্রকৌশলীকে মারধর করেছেন।

আজ মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকাল থেকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ কর্মবিরতি পালন করছেন।

এর আগে গতকাল সোমবার দিনগত রাত আটটায় নগর ভবনের তৃতীয় তলায় কনফারেন্স হলে ওই মারধরের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। সকাল থেকে চট্টগ্রাম সার্কেলের অধীনে ১৬টি জেলা কার্যালয়েও কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে বলেও তারা জানান। ঘটনাটি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রাশিদুল ইসলামকে চিঠি দিয়ে অবহিত করেছেন চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল আলম।

মারধরের শিকার ওই প্রকৌশলী হলেন চট্টগ্রাম সার্কেলের সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান পলাশ। তিনি জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ডিপ্লোমা প্রকৌশলী সমিতি চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহ-সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু ডিপ্লেমা প্রকৌশলী পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক।

চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, আমাদের চেয়ারম্যান মন্ত্রীকে ঘটনা জানিয়েছেন। আশা করি মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন। সরকারি কাজ করতে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ায় আমরা নিরাপত্তাহীন বোধ করছি। আমরা সরকারি প্রটেকশন চাই। সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। তিনি বলেন, যেকোনো কাজে সমস্যা হলে সরকারিভাবে সমাধান করা যায়। শারীরিক আঘাত করা নীতিবিরুদ্ধ।

জানা গেছে, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের ভূমিতে সিটি কর্পোরেশনের সড়ক প্রশস্তকরণ নিয়ে কথা বলতে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চট্টগ্রাম সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. শামসুল আলমের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি টিম মেয়রের কার্যালয়ে যান। টিমে আরো ছিলেন উপবিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মো. অলিউল ইসলাম ও উপবিভাগীয় প্রকৌশলী-২ ছোটন চৌধুরী, সহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান পলাশ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন এবং নকশাকারক অশোক কুমার কর্মকার।

সূত্র জানায়, নগরীর হালিশহরে পোর্ট কানেকটিং সড়কে জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ সংস্কারের কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। হালিশহরের বরফকল এলাকায় ড্রেনসহ সড়ক সোজা করতে গিয়ে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রায় ৫০ ফুট জায়গা দখলে নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। এ নিয়েই মূলত সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের বিরোধ শুরু হয়। সেই বিষয়ে কথা বলার জন্য গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের আগ্রহে মেয়র সোমবার সন্ধ্যায় সময় দিয়েছিলেন তাদের।

আশরাফুজ্জামান পলাশ বলেন, মূল নকশায় সড়কটি আছে ১২০ ফুট। কিন্তু কাজ শুরুর পর দেখা গেল, সিটি কর্পোরেশন ১৭০ ফুট জায়গা নিয়েছে। এতে আমাদের জায়গাও ঢুকে গেছে। গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াতো এভাবে কোনো সংস্থার জায়গা অধিগ্রহণ করার নিয়ম নেই। আমরা প্রথমে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীর কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছিলাম। কিন্তু তিনি মেয়রের সঙ্গে কথা বলতে বলেছিলেন। আমরা সোমবার সকালে ফোন করে মেয়রের কাছে সময় চাইলে তিনি সন্ধ্যায় যেতে বলেন।

তিনি বলেন, আমরা সন্ধ্যা ৭টার দিকে সিটি কর্পোরেশন ভবনের দোতলায় মেয়রের অফিসে যাই। মেয়রের সঙ্গে কথা বলার এক পর্যায়ে বাকবিতণ্ডা হলে এসময় মেয়র ক্ষুব্ধ হয়ে গালাগাল করতে করতে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যান। আমাকে চড় মারেন।

আশরাফুজ্জামান আরো বলেন, মেয়র চড় মারার পর ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর সেখানে ছিলেন। তিনি আমার শার্টের কলার ধরে ঘুষি মারতে মারতে কনফারেন্স হলের বাইরে নিয়ে যান। আমাদের সিনিয়র স্যারেরা বারবার অনুরোধ করেও আমাকে মারধরের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন নি। পরে আমরা সবাই সেখান থেকে চলে আসি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ওই ইঞ্জিনিয়ার মেয়রের সঙ্গে বেয়াদবি করেছে। তখন আমি বলেছি, তুমি কার সঙ্গে বেয়াদবি করতেছ, উনি কে তুমি জান? তোমার বাড়ি কোথায়? এসব বলতে বলতে তাকে আমি টেনে বাইরে নিয়ে যাই। কিন্তু মারধর করিনি। এসময় আমি হয়তো উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করেছি। কিন্তু গায়ে হাত তুলিনি।

মেয়র চড় মেরেছেন কি না, জানতে চাইলে কাউন্সিলর জোবায়ের বলেন, ‘মেয়র সাহেব থাপ্পড় তুলেছেন, কিন্তু দেননি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, সেরকম কিছু হয়নি। বকাঝকা করেছি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.