প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়নের বিকল্প নেই
সিটি নিউজ ডেস্ক : জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে কাউকে পেছনে রাখা যাবে না। বিশেষত: পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও জীবনমান উন্নয়নে বহুমাত্রিক সক্রিয়তা সৃষ্টির লক্ষ্যে বুধবার ২৪ এপ্রিল সকালে চট্টগ্রাম’র খুলশী থানাধীন ঝাউতলা- সেগুনবাগান সংলগ্ন বস্তি এলাকার সমস্যাসমূহ সরেজমিন উদ্ঘাটনকল্পে পরিদর্শন পূর্বক ওব্যাট স্কুল প্রাঙ্গণে “উন্নয়নে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির অংশগ্রহণ” শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র সভাপতি নোমান উল্লাহ বাহার’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন’র কাউন্সিলর ও ওয়াসা’র বোর্ড সদস্য আবিদা আজাদ, চট্টগ্রাম প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি এম.এ সবুর, ওব্যাট হেল্পার্স’র কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর সোহাইল আক্তার খান, ডেল্টা লার্নিং সেন্টার’র সিইও মোহাম্মদ আলমগীর, এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র সহ-সভাপতি ফরিদ আলম, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন, হালিশহর থানার সাধারণ সম্পাদক এম.এ জলিল, সম্মিলিত সামাজিক সংগঠন পরিষদ’র সাধারণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম, সংবাদকর্মী ইলিয়াছ সুমন, ওব্যাট হেল্পার্স’র প্রজেক্ট অফিসার মো: মোস্তাক, ইকো ফ্রেন্ডস’র সাংগঠনিক সম্পাদক কাইয়ুমুর রশিদ বাবু, সৈয়দ ইয়াছির সামিত, মো: আবু ছিদ্দিক, মো: রাসেল রেজা প্রমুখ।
ওব্যাট হেল্পার্স ও ডেল্টা লার্নিং সেন্টার’র সহযোগিতায় সকাল ৮.৩০টা থেকে বিভিন্ন বস্তি ক্যাম্প পরিদর্শন’র পর আলোচনায় বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ১৩ নং ওয়ার্ডের ঝাউতলা, ওয়ার্লেস কলোনী, সেগুন বাগান, ডিজেল কলোনী, টিটিপি কলোনী এক্সইএন কলোনি ও সর্দার বাহাদুর নগর এ স্বল্প আয়তনের মধ্যে রোহিঙ্গাদের চাইতেও সংকটাপন্ন অবস্থায় প্রায় ৩০ হাজার লোক অমানবিক-মানবেতর জীবন যাপন করছে।
স্বাধীনতার পর থেকে এলাকায় বসবাস, প্রাক্তন সরদার বাহাদুর নগর রেলওয়ে হাই স্কুলেই প্রায় ১৫০টি পরিবারের অর্ধ শতাধিক বছর ধরে বসবাস। পানির প্রচন্ড অভাব, নেই কোন শিক্ষার পরিবেশ। পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা শোচনীয়। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই তাদের বসবাস। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বস্তির ভিতরের ছোট ছোট রাস্তাগুলো পাকা ও ছোট নালাগুলোর কাজ সম্পাদন করেছে।
বেসরকারি সংস্থা ওব্যাট হেল্পার্স উক্ত এলাকার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য শিক্ষা, প্রশিক্ষণ,পানির ব্যবস্থা ও দুস্থদের চিকিৎসার আর্থিক অনুদান, পবিত্র রমজানে খাদ্য সামগ্রী ও কোরবানিতে মাংস বিতরণ করে আসছে। ওব্যাটের সহযোগিতায় যারা শিক্ষিত হয়েছে তারা তাদের কমিউনিটির ছোট ছোট শিশুদের জন্য প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বয়ষ্কদের জন্য বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম স্বেচ্ছায় পরিচালনা করছে।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার পথে অধিকার ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠির চরম দারিদ্রতা নির্মূল পূর্বক সার্বিক জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন অন্যতম চ্যালেঞ্জ। বর্তমান সমাজে বৈষম্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। বেশিরভাগ সম্পত্তি মুষ্টিমেয় মানুষের নিকট পুঞ্জীভূত হচ্ছে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক জিডিপি বৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন সূচকে অগ্রগতি, অবকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বিশেষত বিপুল জনগোষ্ঠির নানা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়া নিশ্চিত হলেও বস্তি এলাকায় বসবাসরত প্রান্তিক জনগোষ্ঠির সামষ্টিক উন্নয়নে আমাদের দ্রুত সমস্যা নিরসনের সমাধান যাত্রায় চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বিকল্প নেই।
পরিশেষে এসডিজি ইয়ুথ ফোরাম’র নেতৃবৃন্দ এসডিজি বাস্তবায়নকল্পে উন্নয়নের যে চলমান প্রক্রিয়া সেটি টেকসই ও সামষ্টিক অর্থে অর্থবহ করে তুলতে বঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সময়োপযোগী মানসম্মত শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, বসবাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি, শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী বহুমাত্রিক প্রশিক্ষণের সুযোগ প্রসার, নিরাপদ পানি নিশ্চিতকরণ, জনসংখ্যা অনুপাতে স্বাস্থ্য সম্মত পয়ঃনিষ্কাশন প্রভৃতির দ্রুত উন্নতিতে রাষ্ট্রের সুদৃষ্টি ও বেসরকারি সংস্থা সমূহের ভূমিকা জোরদার করার উদাত্ত্ব আহবান জানান।