ফণী’র আঘাত মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ  ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ আরও ঘণীভূত হয়ে বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছে।

আগামী শনিবার (৪ মে) এই ভয়াবহ ঘূণিঝড় আঘাত হানতে পারে ভারতের ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায়। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সারাদেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সব দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজ নিজ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে মহান মে দিবসসহ সকল ছুটি।

আজ বুধবার (১ লা মে) বিকেলে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে জরুরি সভা আহবান করে দূর্যোগ মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্ততি নেওয়ার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বৈঠক শেষে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা সম্ভাব্য সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সংশিষ্টদের।

তিনি বলেন, আবহাওয়া দফতর পূর্বাভাস অনুযায়ী ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ যে সব জেলায় আঘাত হানতে পারে বলে দিয়েছে, সেই সব জেলায়ও জেলা প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। এসব জেলা প্রশাসক জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ইতোমধ্যেই দুর্যোগ মোকাবিলায় ৫৬ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে জরুরি ভিত্তিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, ফায়ার সার্ভিস ও হাসপাতালগুলোকে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলাগুলোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের পাশাপাশি উপজেলা ও উপকূলীয় অঞ্চলগুলোয় জারি করা হয়েছে সতর্কতা। কেন্দ্রীয়ভাবে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) ও উপকূলীয় জেলায় ১৯টি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

জেলা-উপজেলায় অবস্থিত সাইক্লোন শেল্টারগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেখানে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নেই, সেখানে স্কুল কলেজ, মাদ্রাসাকে যেন প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়, সেভাবে ব্যবহার উপযোগী করে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় জরুরি প্রয়োজন মেটাতে চাল ও নগদ টাকার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঝড়টির অবস্থানের প্রসঙ্গে আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।

ঝড়টি বুধবার (১ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর বা উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

পরবর্তী নিদের্শ দেওয়া না দেওয়া পর্যন্ত ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। পাশাপাশি দূরবর্তী সাগরে মাছ শিকারের ট্রলার ও নৌকা চলাচলে নিষেধাজ্ঞা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় শেল্টারহাউসগুলো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক ছামছুদ্দিন আহমেদ জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ এখন গভীর সমুদ্রে বাংলাদেশ থেকে এক হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এটি যেভাবে এগিয়ে আসছে, তা অব্যাহত থাকলে শুক্রবার (৩ মে) আঘাত হানবে ভারতে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গে। তারপর উপকূল ঘেঁষে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে চলে যাবে। সেক্ষেত্রে ঝড়টি শনিবার (৪ মে) খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর উপকূলে আঘাত হানতে পারে।

তিনি আরও জানান, ঘূর্ণিঝড়টি যদি গতিপথ পরিবর্তন করে তাহলে সরাসরি বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানবে। তখন খুলনা সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এলাকায় ওপর দিয়ে বয়ে যাবে ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.