জঙ্গি সংগঠন মুনিরিয়া তবলীগ কমিটি নিষিদ্ধের দাবি

0

সিটি নিউজ,চট্টগ্রাম :    রাউজান কাগতিয়ার জঙ্গি সংগঠন মুনিরিয়া যুব তবলীগ কমিটি নিষিদ্ধ করা, আহলে সুন্নাত সদস্য সচিব বরেণ্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার এর বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং রাউজানের ত্রাস পীর নামধারী সন্ত্রাসী ভ- মুনিরুল্লাহসহ মুনিরিয়া তবলীগের চিহ্নিত উগ্রবাদি জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত সমন্বয় কমিটি আজ বৃহস্পতিবার ২০ জুন দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস.রহমান হল (২য় তলায়) সংবাদ সম্মেলন করেছে।

আহলে সুন্নাত সমন্বয় কমিটি কেন্দ্রীয় সদস্য আল্লামা নূর মোহাম্মদ আল-কাদেরী লিখিত এতে বক্তব্য পাঠ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বাংলাদেশে ইসলামের শান্তির বাণী প্রচার-প্রসার করেছেন মহান আউলিয়া কেরাম ও হক্বানী পীর-মাশায়েখ।

দেশে সূফিবাদী পীর-আউলিয়ারা গড়েছেন অহিংস ইসলামী মতাদর্শ ভিত্তিক সম্প্রীতির সমাজব্যবস্থা। এ অহিংস ইসলামধর্মকে কলঙ্কিত করছে একশ্রেণির উগ্রবাদি ভ-পীর। তৎমধ্যে অন্যতম রাউজানের কাগতিয়ার পীর নামধারী এক সন্ত্রাসী প্রতারক মুনিরুল্লাহ। যার ক্যাডারবাহিনীর অত্যাচারে ক্ষুদ্ধ হয়ে সর্বস্তরের জনতা আজ গণআন্দোলনে নেমেছে। মুনিরিয়া যুব তবলীগের মত সন্ত্রাসী-জঙ্গী গোষ্ঠীর কারণে সূফীবাদ ও ত্বরিকত কলংকিত হচ্ছে।

তারা রাউজানকে জিম্মি করে দীর্ঘদিন যাবত মানুষের জমি জবর দখল থেকে শুরু করে তাদের ভন্ডামির বিপক্ষদের খুন-জখম-অপহরণসহ এমন কোন সন্ত্রাসী কর্মকা- বাকি নাই, যা তারা করে নাই। তাদের ত্বরিকতের নামে ভন্ডামির প্রতিবাদ করায় দুই দশক আগে প্রবীণ আলেম অধ্যক্ষ মুফতি মফজল আহমদ নঈমীকে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করেছিল তারা।

তাদের গাউসুল আজম দাবির বিপক্ষে বক্তব্য রাখায় এক দশক আগে ছিপাতলী কামিল মাদ্রাসার প্রধান মুফাস্সির আল্লামা শফিউল আলম নিজামীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছিল। আর এই ঘটনার গণপ্রতিবাদ সভা থেকে ফেরার পথে রাউজান উত্তর সর্তার গ্রামের কিশোর ছাত্রসেনা কর্মী নঈমুদ্দিনকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল। এমন কোন সপ্তাহ মাস ছিলনা যখন মুনিরিয়া যুব তবলিগের রাউজান ১নং অফিসে ধরে নিয়ে গিয়ে সর্বসাধারণকে আহত করা হয়নি। অথচ, কয়েক’শ ঘটনায় জড়িত এসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিচারের বাণী নিরবে নিভৃতে কেঁদেছে-তাদের কিছুই হয়নি। বরং মামলার বাদী-সাক্ষীরাই পূনরায় জুলুমের শিকার হয়েছে। ফলে সন্ত্রাসীদের সাহস আরো বেড়ে যায় এবং এরা আরো বেপরোয়া হামলার মত ঘটনায় জড়িত হতে থাকে একের পর এক।

গত ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ওরা গহিরা মোবারকখিলের মাহফিলে ৫০/৬০ জন সন্ত্রাসীদের মোটর সাইকেল বহর নিয়ে মিলাদ মাহফিলে অস্ত্র প্রদর্শন করে জোরপূর্বক প্রবেশ করে এবং মাহফিলের প্রধান বক্তা এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ারের উপর বক্তব্যরত অবস্থায় সশস্ত্রভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ সময় তিনিসহ মাহফিলের বেশ কয়েকজন আলেম ও কর্মি আহত হয়। এ ঘটনার বিচার চেয়ে করা রাউজান থানার মামলা নং ১৮(৪)২০১৯ এ কয়েকজন আসামি গ্রেপ্তার হলেও সব ঘটনার মূল ইন্ধন ও নির্দেশদাতা মুনিরুল্লাহ সহ অধিকাংশই এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে, ফলে ভুক্তভোগি রাউজানবাসী সহ চট্টগ্রামের নিরীহ জনতার নিকট কাগতিয়া সন্ত্রাসভীতি এখনো দূর হয়নি, বিধায় এখনো অনেকে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস পাচ্ছেনা। যদিও বিগত কয়েকমাস পূর্বে তাদের বেপরোয়া সাহস বৃদ্ধির অনিবার্য পরিণামে আওয়ামীলীগ নেতা মুজাম্মেল হক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল আনোয়ারের উপর হামলার প্রেক্ষিতে, রাউজানের এম পি মহোদয় তাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান পেয়ে সর্বস্তরের রাউজানবাসী একমঞ্চে এসে কাগতিয়ার ভ-ামি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লাগাতার দুইমাসেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

রাউজান প্রশাসন সমন্বয় কমিটির সভায় তাদের জঙ্গী-সন্ত্রাসী এবং ভন্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে দমনের উপর গুরুত্ব দিয়েছে। ফলে ইতোমধ্যে এই কয়েকমাসে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু নতুন মামলা রুজু হয়েছে বটে – যা প্রকৃত ঘটনার তুলনায় সামান্যই বলা যায়। বিশেষত এদের বিরুদ্ধে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সম্প্রতি আশুলিয়া থেকে গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গী সূফিয়ান খাঁন ইরফান মুনিরিয়া তবলীগের ২৫ নং শাখার সক্রিয় কর্মি হিসেবে চিহ্নিত হবার প্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আর একাত্তরে এই ভন্ডপীর কর্তৃক পরিচালিত কাগতিয়া এশাতুল উলুম মাদ্রাসায় যে রাজাকারের ঘাঁটি ছিল, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই রাজাকার ক্যাম্প কাগতিয়া মাদ্রাসা দখলের জন্য ১৯৭১ এর ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল। আর এ যুদ্ধে রাজাকারদের গুলিতে শহীদ হন রাউজানবাসী বীর মুক্তিযোদ্ধা মুসা খাঁন -যা কারো অজানা নয়।

তারা জামাত-শিবিরের ক্যাডারদের সাথে নিয়ে খুন, গুম, অপহরণ, রগকাটা, জবর-দখলসহ নানা অপকর্ম করে রাউজানকে জিম্মি করে রেখেছিল এতদিন। এখন মানুষ প্রশাসনের নিরপেক্ষতার আশ্বাস পেয়ে যখন তাদের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে এবং ভুক্তভোগীরা মামলা করতে এগিয়ে আসছে, তখন তারা পাল্টা মিথ্যা মামলা দায়ের করে মামলার বাদী, সাক্ষী এবং আন্দোলনকারীদের দমানোর কৌশল নিয়েছে। এরা এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ারের দায়ের করা রাউজান থানার মামলা নং ১৮ (৪)২০১৯ এর প্রেক্ষিতে এখন তাঁকেই প্রধান আসামি করে এবং রাউজানের আহলে সুন্নাতনেতা অধ্যক্ষ মৌলানা ইলিয়াস নূরীকে ২নং আসামি দিয়ে, তাদের রাউজান মোহাম্মদপুর অফিস লুট ও চুরির মত হাস্যকর মিথ্যা অভিযোগ করে।

বিগত ১৪ মে’১৯ইং বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং ৪ চট্টগ্রাম (আমলী আদালত রাউজান) এ বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জয়ন্ত রাণী রায় এর নিকট মামলা দায়ের করেন। মামলা নং সি আর ১১১/২০১৯ (রাউজান)। যে মামলাটি বর্তমানে সহকারী পুলিশ সুপার (পিবিআই) চট্টগ্রাম এর তদন্তাধীন। তারা এই মিথ্যা মামলাটি করে ক্ষান্ত হয়নি, বরং বিগত ১৫ মে ২০১৯ ইং একই বিজ্ঞ আদালতে আরেকটি মিথ্যামামলা দায়ের করে। মামলাটির সত্যতা না পাওয়ায় বিজ্ঞ আদালত মামলাটি দায়ের করার দিনই খারিজ করে দেন। এমনকি মামলার সাক্ষী মুহাম্মদ আবদুস সালামের পুত্র মুহাম্মদ রায়হান বিজ্ঞ নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট হলফনামা মূলে তার অজান্তে, মিথ্যা, ভূয়া ও ভিত্তিহীন মর্মে এই মিথ্যামামলায় সাক্ষী করা হয়েছে মর্মে জানান। এডভোকেট মোছাহেব উদ্দীন বখতেয়ার আহলে সুন্নাতের পাশাপাশি দেশের অন্যতম তরিকত ভিত্তিক সংগঠন গাউছিয়া কমিটি বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।

ইসলামের সঠিক মতাদর্শ প্রচার-প্রসারে যিনি নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে এধরণের মিথ্যা মামলা হাস্যকর। তাই তার বিরুদ্ধে আনীত সি আর ১১১/২০১৯ মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করা না হলে সুন্নি জনতা এই ভন্ডদের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনকে দেশব্যাপি ছড়িয়ে দিতে বাধ্য হবে। তাই এই জঙ্গী সংগঠন নিষিদ্ধসহ ভন্ডপীর মুনির ও তার সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে ৭১’র রাজাকার ক্যাম্প খ্যাত কাগতিয়া মাদ্রাসাটি এই জঙ্গীদের হাত থেকে উদ্ধার করে স্থানীয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনার, কিংবা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি মেনে এই কাগতিয়া মাদ্রাসাকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে তাদের কোটি কোটি টাকার উৎস সন্ধানের গণদাবিকে আহলে সুন্নাত সমন্বয় কমিটি সমর্থন করছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা’আত সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক মাওলানা এম.এ মতিন, সদস্য সচিব এডভোকেট মোছাহেব উদ্দীন বকতেয়ার, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নীয়া আলীয়ার মুহাদ্দিস আল্লামা আশরাফুজ্জামান আলকাদেরী, এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রফেসর সৈয়্যদ জালাল উদ্দিন আল-আজহারী, মাওলানা রেজাউল করিম তালুকদার, ইঞ্জিনিয়ার নূর হোসাইন, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী এম এ ওয়াহাব, এরশাদ খতিবী, এস.এম লোকমান হাকিম, ফজলুল করিম তালুকদার, মাওলানা গিয়াসুদ্দীন নিজামী, নাছির উদ্দিন মাহমুদ, মাষ্টার আবুল হোসাইন, মাওলানা সোহাইল আনসারী, মাওলানা মোখতার আহমদ রজভী, মাওলানা আবুল কাশেম তাহেরী, জিম.এম শাহাদত হোসাইন মানিক, এডভোকেট আবদুল গফুর, মাওলানা ফজল আহমদ, আবদুল করিম সেলিম, মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম, মুহাম্মদ আবুল হোসাইন, মুহাম্মদ শফিউল আলম, নুরুল হাসান শিহাব, ইয়াসিন আরাফাত, এখরামুল হক ছিদ্দিকী, এইচ এম মনিরুদ্দীন, শামসুর রহমান, আবদুর রহিম রকি, আবু জাফর, জিএম মামুন, গোলাম তাহের, জাবের হাসান, নুরুল কবীর, মুহাম্মদ ইফসুফ, আবদুল মালেক প্রমুখ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.