ধর্ষণের মতো জঘণ্যতম ব্যাধি রোধে পুরুষদেরও এগিয়ে আসতে হবেঃ প্রধানমন্ত্রী

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্ষণ রোধ করতে পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে। সবাইকে এক সাথে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সোচ্চার হতে হবে ধর্ষণের বিরুদ্ধে।

আজ সোমবার (৮ জুলাই) বিকেলে সরকারি বাসভবন গণভবনে চীন সফর শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ধর্ষণ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্ষণ একটি জঘন্যতম কাজ। যারা এ কাজ করে তারা মানুষ না। ধর্ষণের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। আমাদের দেশেও এই জঘন্য ঘটনা ঘটছে। এখন তো মেয়েরা সাহস করে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ করছে। একটা সময় ছিল সাহস করে বলতে পারত না। যারা এ ধরনের জঘন্য কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং নেওয়া হবে।

চীন সফরের ফলাফল নিয়ে আজ বিকেল ৪টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়। চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। সংবাদ সম্মেলনে চীন সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য পড়েন প্রধানমন্ত্রী। এরপর বেশ কয়েকজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতির উন্নতি চাইলে গ্যাসের যে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে- তা মেনে নিতে হবে। আমরা এখন জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। এর কারণ আমরা এনার্জি ক্ষেত্রে যথেষ্ট মনোযোগ দিয়েছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পেরেছি এবং গ্যাস আমাদের আমদানি করতে হচ্ছে। এলএনজি গ্যাস আমদানির জন্য খরচ যথেষ্ট বেশি পড়ে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে তিনি বলেন, দাম যেটুকু বাড়ানো হয়েছে, সেটুকু যদি বাড়ানো না হয় তাহলে আমাদের সামনে দুটি পথ আছে- হয় আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি না বাড়ে, সেজন্য এলএনজি আমদানি কমিয়ে দিয়ে এনার্জির ক্ষেত্র সংকুচিত করে ফেলব। অর্থনীতির উন্নতি হবে না। যদি উন্নতি চান এটাকে মেনে নিতে হবে। শুধু আমরা না গ্যাস আমদানিকারক দেশও এটা মেনে নেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৬১ টাকা ১২ পয়সা করে এলএনজি আমদানি করে ৯ দশমিক ৮০ টাকায় দিচ্ছি। এখন যে দাম বাড়ানো হয়েছে এই দাম বাড়ানোর পরও আমাদের বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। তাহলে আমদানি যখন করেছি আমরা একটা কাজ করি, যে দামে কিনব সেই দামে বিক্রি করব। আমরা ৬১ টাকা করে নিবো। সমস্ত ট্যাক্স মাফ করে দেয়া হয়ছে। সবকিছু করে দিলাম যাতে মানুষের কাছে সহজলভ্য হয় সে ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তারপরও ওনারা হরতাল ডাকেন, আন্দোলন করেন।

সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নেতৃত্ব বা সরকার যদি ভুল করে তার খেসারত জনগণকে দিতে হয় এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৪-০৫ সালে মিয়ানমারের যে গ্যাস, সেই গ্যাসে ভারত, মিয়ানমার, জাপান, চীন বিনিয়োগ করেছিল। ভারতে ওই গ্যাস নিতে চেয়েছিল বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে পাইপ লাইনে। একটি এমইউ স্বাক্ষরিত হয়েছিল।

কিন্তু খালেদা জিয়ার সরকার ওই পাইপ লাইনের গ্যাসটা নিতে দেয়নি। সেখানে যদি আমি থাকতাম তাহলে আমি কি করতাম- আমি পাইপ লাইনে গ্যাস নিতে দিতাম এবং আমার ভাগটাও রেখে দিতাম। আমাকে দিয়ে তারপর নিতে হবে। আমি মিয়ানমার থেকে পাইপ লাইনে গ্যাস আনতে পারতাম। সেই গ্যাস যদি এনে অর্থনীতির কাজে লাগাতে পারতাম তাহলে আমাকে এখন এলএনজি আমদানি না করলেও চলতো। সেই গ্যাসটা নিতে পারিনি। পুরাটা চীন কিনে নিচ্ছে। কিন্তু আমার তো আর নেয়ার কোন উপায় নাই’-বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ২০০০ সালে আমাদের কাছে প্রস্তাব এসেছিল গ্যাস বিক্রি করার। আমি রাজি হয়নি। এর ফলে কি হয়েছিল? আমি ভোট বেশি পেয়েও ২০০১ সালে কিন্তু ক্ষমতায় আসতে পারিনি। আর খালেদা জিয়া ঘোষণা দিয়েছিল ক্ষমতায় আসলে গ্যাস বিক্রি করবে।

আমি বলেছিলাম আমার গ্যাস আমাদের দেশের মানুষের কাজে লাগবে। দেশের মানুষের জন্য রিজার্ভ রাখব, তারপর যদি বাঁচে আমি বিক্রি করার কথা চিন্তা করব। তার আগে কত গ্যাস আছে জানতে হবে। সেই সময় আমি যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলাম আজকে কি সেটা প্রমাণিত হয়নি’- বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাকে শিল্পায়ন করতে হবে। আমার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমার সার উৎপাদন করতে হবে। আমার দেশের অর্থনীতির উন্নতি করতে হবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে হবে। কাজেই আমাদের এলএনজি আমদানি করতেই হবে। এলএনজি আমদানিতে কত টাকা খরচ হয়? সে হিসাবটা আগে জানতে হবে। প্রতি ঘনমিটার এলএনজি আমদানিতে আমাদের খরচ পড়ে ৬১ দশমিক ১২ টাকা। অর্থাৎ যেটাতে ৬১ টাকা পড়ে, সেটা আমরা কত টাকায় দিচ্ছি? এর থেকে কম দামে কিভাবে দেয়া যায়?

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে যারা আন্দোলন করছেন তাদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেখেছি অনেকে আন্দোলন করছেন। বলেছেন- ভারতে কমে যাচ্ছে। আমি বলি ভারতে আবাসিকে গ্যাসের মূল্য ৩০-৩৭ টাকা প্রতি ঘনমিটার। আর বাংলাদেশ দিচ্ছে মাত্র ১২ দশমিক ৬০ টাকায়। শিল্পে বাংলাদেশ দিচ্ছে ১০ দশমিক ৭০ টাকা, আর ভারতে ৪০-৪২ টাকা। সিএনজি আমাদের এখানে ৪৩ টাকা, ওদের ওখানে ৪৪ টাকা। বাণিজ্যিকে আমরা এখানে দিচ্ছি ২৩ টাকায়, আর ভারতে ৫৮-৬৩ টাকা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে প্রতিবছর দুই বার দাম বাড়ায়। এটা তাদের নীতি, আর সেই নীতিতেই তারা চলে। ১ এপ্রিল তারা একবার বৃদ্ধি করে, এরপর আবার অক্টোবরে আরেকবার বৃদ্ধি করে।

তিনি বলেন, ৬১ টাকা ১২ পয়সা করে এলএনজি আমদানি করে আমরা দিচ্ছি ৯ দশমিক ৮০ টাকায়। এবার বিষয়টি আপনার চিন্তা করে দেখেন। তারপরও আন্দোলন। একটা মজার বিষয় আছে বাম আর ডান মিলে গেছে, এক সুরে। খুব ভালো।

‘আমাদের টার্গেট আগামী বছর জিডিপি ৮ দশমিক ২ শতাংশ করব এবং ২০২৪ সালের মধ্যে এটাকে দুই অঙ্কে নিয়ে যাবো। আমার এনার্জি লাগবে। ভালোভাবে বিদ্যুৎ লাগবে। এখন লোডশেডিং নাই সারাদেশে, অতীতের কথা ভুলে গেছি’-বলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স অত্যন্ত চমৎকার বলে অভিহিত করে বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে ক্রিকেট খেলে, যেমন- বড় বড় দল তাদের পর্যন্ত হারিয়ে দিয়েছে। সাকিব, মোস্তাফিজ বিশ্বকাপে বিশেষ স্থান করে নিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্রিকেট খেলায় বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করছে। হয়তো সেমিতে যেতে পারেনি। চারটি দল সেমিতে গেছে। যে দলগুলো বাদ পড়েছে তারা সবাই কি খারাপ দল। দীর্ঘদিন ধরে যারা ক্রিকেট খেলছে তাদের সঙ্গে মোকাবিলা করেছে আমাদের ছেলেরা। এই সাহসই তো বড় কথা। সবাই যে সব খেলায় জিতবে এমন কোনো কথা নয়। তা ছাড়া ভাগ্যও লাগে।

শেখ হাসিনা বলেন, খেলায় ধীরে ধীরে বাংলাদেশ আরও উন্নতি করবে। ছেলেরা খেলায় যাতে আরও ভালো করতে পারে সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আগের চেয়ে বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। আমাদের ছেলেদের আমি নিরুৎসাহিত করি না। অস্ট্রেলিয়া ৩৮৬ করেছে তার বিপরীতে বাংলাদেশ ৩৩৩ রান করেছে। এটা কম কিসে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.