অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন আসবেঃ মেয়র

0

সিটি নিউজঃ বহুল প্রতিক্ষিত আরকান সড়ক উন্নয়ন কাজ শুরু করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। আজ বুধবার দুপুরে আরকান সড়ক ওসমানিয়া গ্লাস ফ্যাক্টরী চত্বরে এই সড়কের উন্নয়ন কাজ উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন ।

অনুষ্ঠানে সাংসদ মাঈনুদ্দীন খান বাদল বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সিটি মেয়র তাঁর বক্তব্যে বলেন দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন আসবে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া অভ্যন্তরীন ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ব্যবসা বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পরতে বাধ্য। বহিবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে অনুকরণীয় পর্যায়ে নিয়ে যেতে এই সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সিটি মেয়র আরো বলেন , বর্তমানে এই নগরের ৭০লক্ষ লোক বসবাস করে থাকে। ৬০ বর্গমাইলের এই শহরের এত লোকের ধারণ ক্ষমতা ন্ইে । অপরিকল্পিত নগরায়নে দেখা দিচ্ছে নিত্যনতুন সমস্যা । এই সমস্যা সমাধানে নগর সেবায় নিয়োজিত সেবা সংস্থা সমুহকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আহবান সিটি মেয়রের।

এই প্রসঙ্গে সিটি মেয়র বলেন চট্টগ্রাম নগর উন্নয়নে ৩২টি সেবা সংস্থার কাজের মধ্যে যে সমন্বয়হীনতা তার কুফল ভোগ করতে হয় সিটি করপোরেশনকে। প্রকল্প নেওয়ার সময় আমাদের কোনো মতামত নেওয়া হয় না। অথচ প্রকল্প নেয়ার আগে নগর উন্নয়নে যে কোনো প্রকল্প গ্রহনকালে চসিকের সাথে সমন্বয় করার সরকারি দিক নির্দেশনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একনেকে প্রকল্প পাস হয়ে যাওয়ার পর আমাদের মতামত চাইলে তখন আর কিছু করার থাকে না। দেশের মানুষকে উন্নয়নের কাজের কারণে সাময়িক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। শুধু বিরোধিতা না করে আমাদের কাজের সহযোগী হোন। চট্টগ্রাম নগরকে বাসযোগ্য ও বিশ্বমানের নগর গড়তে বর্তমান সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্ঠার কথা উল্লেখ করে সিটি মেয়র বলেন সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ,ওয়াসা,পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ বিভিন্ন সেবাধর্মী প্রতিষ্টান নগর উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

এই প্রসঙ্গে মেয়র চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন গৃহীত প্রকল্প বহদ্দারহাট বাড়ইপাড়া হতে কর্ণফূলী নদী পর্যন্ত নতুন খান খনন ১হাজার ২শ ৫৬ কোটি টাকা, জাইকার অর্থায়নে স্কুল/সাইক্লোন সেন্টা ও ডিজেষ্টার ম্যানেজমেন্ট ভবন ৯ শ কোটি টাকা, সফ্টওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ২৪ কোটি ৫লক্ষ টাকা,এলইডি প্রকল্প ২৬০ কোটি টাকা, পশু জবাইখানা ৮৩কোটি টাকা, সেবক কলোনী ২৩১ কোটি টাকা, নগর ভবন নির্মাণ ২০৪কোটি টাকা, স্মার্ট সিটি ২৭০কোটি টাকা, চার লাইনে এয়ারপোর্ট রোড সম্প্রসারন সহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন ২হাজার৭ শ কোটি টাকা, বিন্নাঘাস প্রকল্প ৩কোটি টাকা, জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার সংখ্যা ২৮২টি।

যার দৈর্ঘ্য ১৮১ দশমিক ৯ কিলোমিটার । এর মেরামত বাবত ব্যয় হবে ১শ ২২ কোটি ৭০লক্ষ টাকা এবং হাইটেক পার্ক,আইসিসিটি পার্ক,অত্যাধুনিক কিচেন মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রকল্প কথা সভায় পড়ে শুনান। তিনি বলেন এ রোডের পথযাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে এই প্রকল্পের কাজ চার মাসের মধ্যে শেষ করা হবে । বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার আরকান সড়কটিকে ১২টি লটে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে চা›ঁদগাও -তে ৮টি এবং মোহরা ওয়ার্ডে ৪টি লট রয়েছে । এডিপির ৭১ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর এই গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।

বিআরটি ডিজাইনে নির্মিত হবে রাস্তাটি। এই প্রকল্পের মধ্যে থাকছে রাস্তার উভয় পাশে প্রশস্থ ড্রেন ও দৃষ্টি নন্দন ফুটপাত, ৬৪ ফুট প্রশস্ত রাস্তা,রাস্তা উচুকরণ, এসফল্ট মিশ্র কাপেটিং,বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) বাসের জন্য আলাদা লেইন এবং যাত্রী সাধারণের উঠানামা ব্যবস্থাও থাকবে। এছাড়া আরো থাকছে ছয় লেইন বিশিষ্ট সড়কটির সৈৗন্দর্যকরণ,সবুজায়ন ও আধুনিকায়ন ও এলইডি লাইটের ব্যবস্থা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে চসিকের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন মেয়র বলেন, সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিজ্ঞাপন প্রচার, লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করা হচ্ছে। এছাড়াও চসিকের ডাক্তারদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এরপরও আর্থিকভাবে অসচ্ছল কেউ যদি ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয় সেক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন সহযোগিতা করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। মেয়র সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, কোথাও কোনো ছেলেধরা নেই। কিছু গোষ্ঠী দেশের পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে গুজব ছড়িয়েছে। যার কোনো ভিত্তি নেই। তাই তিনি সবাইকে আরো ধৈর্যশীল ও সহনীয় হওয়ার আহ্বান জানান। মেয়র কালুরঘাট ব্রিজ যত দ্রুত সম্ভব নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। প্রয়োজনে জনমত গঠনের উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংসদ মাঈনুদ্দীন খান বাদল বলেন, এ সড়ক হওয়ার ফলে ২ থেকে ৫ লাখ লোকের উপকার হবে। তারা এতদিন মেয়র আর আমার বাপ মা ধরে গলি দিতেন, তারা এইবার যেন দোয়া করেন।

চট্টগ্রামের উন্নয়ন পরিকল্পনা মাফিক হচ্ছে না বলে উল্লেখ করে সাংসদ বাদল বলেন, অপরিকল্পিত ফ্লাইওভারের ফলে উপরে পানি নিচেও পানি জমে যাচ্ছে। এ ধরনের অবস্থা আমি কোথায়ও দেখিনি। তবে এ সড়কের উন্নয়ন কাজের সাথে সম্পৃক্ত ঠিকাদারদের বাড়ি ঘর চিনে রাখার কথা বলেন তিনি। যদি কাজে গাফিলতি থাকে তাহলে তাদের বাসায় গিয়ে এর জবাব চাইবো। অনুষ্টানে বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, আইসিটি পার্ক, এক শ শয্যার মেয়েদের আধুনিক হোস্টেল নির্মাণে প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছার কথাও বলেন তিনি। তবে ২০১২ সালের পর চারবার কালুরঘাট সেতুটির জরিপ করা হলেও এর কোনো গতি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ সাংসদ। অবিলন্বে নতুন সেতু নির্মাণ করে নগরের সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ সহজ করার দাবি জানান তিনি।

এই উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন চান্দগাঁও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন খালেদ সাইফু। অন্যান্যের মধ্যে চসিক প্যানেল মেয়র জোবাইরা নার্গিস খান,কাউন্সিলর মোহাম্মদ আযম ও চসিক প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমদ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক চট্টগ্রাম বীর মঞ্চ এর সম্পাদক সৈয়দ ওমর ফারুক,চসিক কাউন্সিলর কফিল উদ্দিন খান,শৈবাল দাশ সুমন, হাসান মুরাদ বিপ্লব, সাবেক কমিশনার আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম, রাজনীতিক নোমান আল মাহমুদ, জাফর আলম ,মোহাম্মদ ইসা এবং চসিক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম মানিক, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম,আবু সালেহ, মনিরুল হুদা, নিবার্হী প্রকৌশলী আলহাজ্ব আবু সিদ্দিক ও সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজবাহসহ কর্পোরেশন কর্মকর্তা -কর্মচারীসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গরা। পরে সিটি মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম.নাছির উদ্দীন ও সাংসদ মাঈনুদ্দীন খান বাদল বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজের ফলক উম্মোচন করেন এবং দেশ জাতির সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.