কিছু পাওয়ার জন্য মেয়র হইনিঃ মেয়র নাসির

0

জুবায়ের সিদ্দিকী/দিলীপ তালুকদারঃ চট্টগ্রম মহানগরীতে সর্বত্র উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে। মহানগরীর অনেক ছোট বড় রাস্তার সংস্কার ও নতুনভাবে করা হয়েছে। অনেক রাস্তায় উন্নয়ন কর্মকান্ড চলমান রয়েছে। এসব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করছেন সিটি কর্পোরেশন।

এই সিটি কর্পোরেশনের জননন্দিত মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাসির উদ্দিন। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করে আসছেন। তৃণমূলের একজন কর্মী থেকে আজ তিনি শুধু মেয়রই নন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর যাবত তিনি মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিকভাবে তিনি সফল, মেয়র হিসেবেও তিনি অনেকটা সফল। একজন মানুষ ভাল-মন্দের ভেতর তার কর্মকাণ্ডকে মূল্যায়ন করে। নগরবাসীর বেশীরভাগ মানুষ মনে করেন একজন মেয়র হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দিন সফল।

তিনি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন বার বার। মেধা, শ্রম, ধৈর্য তাকে এগিয়ে নিয়ে গেছে অভীষ্ট লক্ষ্যে। নগরবাসী মনে করছেন, আ জ ম নাছির উদ্দিনকে আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আবারও মেয়র প্রার্থী করতে পারে আওয়ামী লীগ। সে লক্ষ্যে ইতিমধ্যে নগরবাসীর মধ্যে আ জ ম নাসিরকে মেয়র প্রার্থী করার প্রবল দাবীও উঠেছে। কারণ নগরবাসী মনে করেন, তার বিকল্প নেই।

বিগত চার বছরে হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড করেছেন। যার সুফল মানুষ পেতে শুরু করেছে। অবএব তার অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকুক এটাই নগরবাসীর প্রত্যাশা। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে চলছে সুইচ গেইটের কাজসহ খাল পুনঃখনন ও রিটার্নিং ওয়ালের কাজ চলমান রয়েছে। একাজগুলো সম্পন্ন হলে নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে।

চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে নেননি কোনো সম্মানী । দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি এ পর্যন্ত ৩২২ জন ব্যক্তির মধ্যে তার সম্মানীর প্রায় ৫৫ লাখ টাকা অটিজম স্কুল, মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল শিক্ষার্থীসহ অসুস্থ রোগীদের মধ্যে বিতরণ করেছেন। এ ছাড়া তিনি কর্পোরেশনের গাড়ি, তেল, চালকও নেন না। নিজের গাড়িতে করে চলাফেরা করেন। এটাও তাঁর একটা অনন্য নজির।

গত ১৩ ডিসেম্বর আমার সংবাদকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা যা পাঠকদের সামানে তুলে ধরা হলো।

মেয়র বলেন, এই শহর ছিল অপরিকল্পিত। সেভাবেই বছরের পর বছর অতিবাহিত হয়েছে অতীতে। আমি চট্টগ্রামকে একটি আধুনিক নগরী হিসেবে দেখতে চাই। তবে সময়ের প্রয়োজন। পরিকল্পিতভাবে শহরকে গড়ে তুলতে কাজ করছি। নগরীর চিত্র সময়ের সাথে বদলে যাওয়া শুরু করেছে। নগরবাসী পূর্ণাঙ্গ স্বাদ নিতে পারবে। সময় পেলে বদলে দেব চট্টগ্রাম।

তিনি বলেন সিটি মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর চট্টগ্রামকে ‘ক্লিন সিটি, গ্রিন সিটি’ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি। আমি হলফ করে বলতে পারবো, আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় নগরী এখন পরিচ্ছন্ন। কেননা ‘ডোর টু ডোর’ প্রকল্পের অধীনে ২ হাজার পরিচ্ছন্নকর্মী প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বর্জ্য সংগ্রহ করে। আগে ডাস্টবিনের বেশিরভাগ ছিল মূল সড়কে। ফলে মানুষ দুর্গন্ধে হাঁটতে পারতো না। সেই যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীকে মুক্ত করতে সড়ক থেকে সরিয়েছি প্রায় ৮২৫টি ডাস্টবিন। আরও ৬শ এর মতো রয়েছে, সেগুলোও পর্যায়ক্রমে সরানো হবে। মানুষ জায়গা দিচ্ছে না। কেননা কেউ চায় না ডাস্টবিনটা তাদের এলাকায় হোক। ফলে জায়গা সংকটের কারনে সময় নিতে হচ্ছে। অন্যথায় এতোদিনে একটা ডাস্টবিনও সড়কে থাকতো না।

মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের লালদিঘীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের ভার নিয়েছিলেন। এরপর থেকে চট্টগ্রামকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমার চারবছরে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আরও প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

বিগত বিশবছরে সিটি কর্পোরেশন যত প্রকল্প পেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। তবে আমি প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে শুধু আমাদের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দিকে তাকিয়ে থাকিনি। বিএমডিএফ, জাইকা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয় থেকেও প্রকল্প অনুমোদনে সচেষ্ট ছিলাম। তারই ফলশ্রুতিতে প্রকল্পের অংকটা বেড়েছে। তবে বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট একটি মেয়াদ রয়েছে। সেই সময়ের মধ্যে শেষ করা অনেক কঠিন। কেননা প্রকল্পের কাজ শুরু করতে যে পরিমাণ প্রশাসনিক ‘ফরমালিটি মেইনটেইন’ করতে হয়, তাতে বছর চলে যায়। তাছাড়া আবহাওয়ার প্রভাব ও অর্থছাড়ের বিষয়তো রয়েছেই। তবে আগের তুলনায় অর্থছাড়ে গতি বেড়েছে। এরই মধ্যে প্রকল্পগুলোর সবমিলিয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ শেষ। বাকিটা পুরো শেষ করতে সময় লাগবে আরও বছর তিনেক।

তখন নগরীতে একটি দৃশ্যমান উন্নয়নের সুফল ভোগ করতে পারবে নগরবাসী। নগরবাসী সাথে থাকলে কোনো চ্যালেঞ্জই চ্যালেঞ্জ নয়, যেকোনো লক্ষ্যকে ছুঁয়ে যেতে পারবো।

তিনি বলেন, মেট্রোরেল চট্টগ্রাম নগরীর জন্য অপরিহার্য একটি গণপরিবহন ব্যবস্থা। তবে সেটা আগে কেন করা হয়নি তা আমার বোধগম্য নয়। কেননা সবার প্রথমে মেট্রোরেল করা উচিত ছিল। আমি দায়িত্বে আসার পর থেকে মেট্রোরেল নিয়ে কাজ করছি। সর্বশেষ আমরা নগরীতে মেট্রোরেল নিয়ে প্রাক-প্রাথমিক সম্ভাবতা যাচাই করেছি। আরও অধিকতর যাচাইপূর্বক প্রকল্পটি আমরা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করবো। এছাড়াও আমার উদ্যোগে আগামি মাসের মথ্যে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ১০০টি এসি বাস নামছে।

মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের অহংকার পূর্ববর্তী প্রয়াত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী শহরের আয়তন বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আইনী জটিলতার কারণে সেটি আটকে যায়। এখনও জটিলতা চলছে। তবে আমি মনে করি, শহর না বাড়ানো হলে চাপের মুখে উন্নয়নের স্থায়িত্ব কমে যাবে। তাই শহরের আয়তন বাড়ানো উচিত।

চট্টগ্রাম মহানগরীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে মেযর বলেন, সারাদেশে কোনো সিটি কর্পোরেশনের এমন সুনাম নেই। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নগরবাসীর শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবায় কাজ করে যাচ্ছে। এরজন্য প্রতিবছর প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা ভর্কুকি দিতে হয়। মূল কাজের বাইরে গিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য কর্পোরেশনের সেবা খাত বাড়িয়েছি।

আমার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নতুন করে অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুন ভবন তৈরী ও ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়েছে। মূলত একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। শিক্ষক সংকট থাকায় নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও প্রতিটি ওয়ার্ডে দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ৪১ হাজার মানুষকে মেয়র হেলথ কার্ড দেওয়া হবে। যার ফলে বিশাল সংখ্যার এই মানুষগুলো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে পারবেন।

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, আমি রাজনীতি করছি নগরবাসীর কল্যাণের জন্য। কিছু পাওয়ার জন্য মেয়র হইনি, নগরবাসীকে সেবা দেয়ার জন্য এসেছি। নগরের অসহায়, দুস্থ, অসচ্ছল ছাত্র ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের কল্যাণে আমার সম্মানীর এ টাকা ব্যয় হচ্ছে, এটা আমার জন্য সুখকর ও আনন্দের। যেসব শিক্ষার্থী এ সাহায্য পাচ্ছে তারা একদিন যখন নিজের পায়ে দাঁড়াবে তখন তারাও এই কৃতজ্ঞতাবোধ থেকে পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য অবদান রাখবে। অন্যদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াবে। তাই সমাজের অসচ্ছল মানুষের কল্যাণে দেশের বিত্তবানদের এগিয়ে আসারও আহ্বান জানান মেয়র।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.