বঙ্গবন্ধু না হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অধরাই থেকে যেতঃ মেয়র

0

সিটি নিউজঃ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উদযাপন ও কাউন্ট ডাউন ক্লক উদ্বোধন উপলক্ষে টাইগারপাস চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) সম্মেলন কক্ষে এক প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আজ মঙ্গলবার সকালে অনুষ্ঠিত এই প্রস্তুতি সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান, স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) দীপক চক্রবর্ত্তী, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসাইন, চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লুাহ। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা।

সভায় সিটি মেয়র বলেন, ২০২০ সালে ১৭ মার্চ পূর্ণ হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের রজত জয়ন্তি। আর ২০২১ সাল হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী বছর। এই উপলক্ষে চসিকের উদ্যোগে বছরব্যাপি ব্যাপক কর্মসূচি পালিত হবে। এ অনুষ্ঠানমালা জাঁকজমকপূর্ণ আকর্ষণীয় ও আড়াম্বরপূর্ণ হবে। এ কথা বলা মোটেও অযৌক্তিক হবে না যে, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু একই মুদ্রার এপিট-ওপিঠ। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুকে চিন্তা করা যায় না। তেমনি বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিলে অর্থহীন হয়ে পড়বে বাংলাদেশও।

এ কথা-তো ইতিহাসের অমোঘ সত্য যে, বঙ্গবন্ধু জন্ম না হলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বোধহয় অপূর্ণ ও অধরাই থেকে যেত। জাতির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান বঙ্গবন্ধু না হলে বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির সত্বা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং স্বাধীন বাংলাদেশ হতো না। এই মহান নেতার জন্মশতবর্ষ পালনের সুযোগ আমাদের জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তি । তাই আমার অবস্থান থেকে এই বছর টিকে অত্যন্ত সম্মান ও মর্যাদার সাথে পালনের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এই প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, বাঙালি জাতিকে যুগে যুগে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে বঙ্গব্ধুর দীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রাম এবং মহান স্বাধীনতা ঘোষণাসহ মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অসামান্য অবদান তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে চসিক। বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম থেকে শিক্ষা নিয়ে তা যদি আমাদের জীবনে কাজে লাগাতে পারি তাহবে বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা ও স্মরণ করার শ্রেষ্ঠ উপায় বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন এই মুজিববর্ষ উদযাপনে সংবাদকর্মীরা তাদের লেখনী ও প্রচারের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তাই বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী বছর যথাযোগ্য ও উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপনে তিনি সংবাদসেবীদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজাদুর রহমান মল্লিক, চট্টগ্রাম স্বাস্থ বিভাগের পরিচালক ডা. হাসান শাহরিযার কবীর, চসিক সচিব মোহাম্মদ আবু শাহেদ চৌধুরী, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা সুমন বড়ুয়া, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মুফিদুল আলম, সিডিএ সচিব তাহেরা ফেরদৌস বেগম, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ পরিচালক মো. তৌফিকুল ইসলাম ভূইয়া, পিডিবিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ডিজল কুমার মহাজন, গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহজাহান, গণপূর্ত বিভাগ এর উপ সহকারী প্রকৌশলী মো. নেজাম উদ্দিনসহ, সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও প্রশাসনের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে ১০ জানুয়ারি নগরীর আউটার স্টেডিয়াম সংলগ্ন জিমনেশিয়াম চত্বরে যথাযোগ্য মর্যাদায় বর্ণিল ও অর্থবহ মুজিববর্ষ উদযাপনের বিশাল মঞ্চসহ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। ঐ দিন কাউন্ট ডাউন ক্লক আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে চট্টগ্রামের ৩০ হাজার মানুষ সরাসরি স্কিন থেকে এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অবলোকন করার সুযোগ পাবে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ১৭ মার্চ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্যে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, শত শিশুর কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ৭ই মার্চের ভাষণটির হলোগ্রাফিক উপস্থাপন, বাউল, লোকশিল্প, ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর সমন্বয়ে সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাস তুলে ধরা, স্মৃতিচারণ মূলক আলোচনা, সন্ধ্যায় ১০০টি ফানুস উড়ানো, ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দি উদ্যান হতে মুজিববর্ষের মূল অনুষ্ঠান সম্প্রচার, নগর জুড়ে র‌্যালি/মানব চেইন, এতিমদের উন্নত খাবার পরিবেশন, মুজিববর্ষে এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে সংস্থা ভিত্তিক ফুটবল প্রতিযোগিতা, মুজিব বর্ষব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে অনুষ্ঠানের আয়োজন, প্রতিমাসে ৩/৪টি ওয়ার্ডে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজন, প্রতিটি ওয়ার্ডে রক্তদান কর্মসূচি, ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, সারসার্জ মুক্ত কর মেলার আয়োজন, ছাদবাগান যুক্ত হোল্ডিং মালিকদের কর প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় এবং মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে মশক মুক্ত পরিচ্ছন্ন সবুজ নগর, বঙ্গবন্ধুর নিবেদনে অমর একুশে বই মেলাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।

এই কর্মসূচির আওতায় নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডকে ৪ ভাগে বিভক্ত করে প্রতিটি ভাগে রাস্তা,ফুটপাত,গলি উপগলি,নালা-নর্দমা ইত্যাদি যথাযথভাবে পরিস্কার, মশার বংশ বিস্তার রোধ এবং মশার স্থান ধ্বংস করণে কেমিক্যাল স্প্রে,বর্জ্য ফেলার স্থান ও সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন প্রতিমাসে ২ বার বিশেষ পরিস্কারকরণ,ডোর টু ডোর সেবকদের কাজের মান বৃদ্ধির জন্য কর্মশালা, চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহ হাসপাতাল, অফিস ও শপিং কমপ্লেক্স ইত্যাদি পরিস্কা‘র করণ,গৃহস্থালির বর্জাদি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার বিষয়ে “পলিথিন ব্যবহার বন্ধ করুন”, “চট্টগ্রাম শহরকে সুস্থ রাখুন” সহ বিভিন্ন স্লোগান সম্মিলিত সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ক্যাম্পেইন, নগরবাসিকে সম্পৃক্তকরণ,মনিটরিং ও রিপোটিং কার্যক্রম জোরদার,নগরীকে সবুজায়ন কার্যক্রম ইত্যাদি রয়েছে।

মুজিব বর্ষের এই কার্যক্রম সরাসরি তদারকীতে রয়েছেন সিটি মেয়র আলহাজ্ব আ.জ.ম. নাছির উদ্দীন। তিনি দুই মাস অন্তর অন্তর সভার মাধ্যমে সার্বিক কার্যক্রম মনিটর করবেন।

এছাড়া চসিক পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্তকরণ এবং শ্রেষ্ঠ পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী হিসেবে ওয়ার্ড, মহল্লা ও স্কুল ভিত্তিক প্রণোদনা, ওয়ার্ড পর্যায়ে গঠিত কমিটি সমূহের গৃহিত সিদ্ধান্ত মনিটরিংকরণ, নগরীর প্রধান সড়ক এবং গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সজ্জিতকরণ, গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা, গোলচত্বর, ফুটপাতের সৌন্দর্যবৃদ্ধি, নগরীর সরকারি-বেসরকারি এবং সিটি কর্পোরেশনের স্থাপনা সমূহকে আলোকবাতি দ্বারা আলোক সজ্জাকরণ প্রভৃতি রয়েছে।

চসিক নগরীতে চারটি কাউন্ট ডাউন ক্লক স্থাপন করছে তন্মাধ্যে আন্দরকিল্লাহ পুরাতন নগর ভবনের সামনে“এ” ক্যাটাগরির একটি এবং সার্কিট হাউজের সামনে,আদালত ভবণ,এবং শাহ আমানত সেতু এলাকায় “বি” ক্যাটাগরি তিনটি কাউন্ট ডাউন ক্লক স্থাপিত হচ্ছে। এই চার কাউন্ট ডাউন ক্লক এর কাজ পুরোদমে এগিয়ে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে চসিক আইাটি অফিসার ইকবাল হাসান কাউন্ট ডাউন ক্লক স্থাপনসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রজক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.