চট্টগ্রামে একজন মোছলেম উদ্দিন-তৃণমূল থেকে সংসদ সদস্য

0

জুবায়ের সিদ্দিকীঃ চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের রাজনীতির মানচিত্রে মোছলেম উদ্দিন আহমদ একজন সুপরিচিত ব্যাক্তিত্ব। গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা ত্যাগী, পরিশ্রমি, মেধাবী এই নেতা ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করে আসছেন।

সেই ৭২-৭৩ সালে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের যখন তিনি সাধারণ সম্পাদক তখন সেই প্যানেলে আমি ছিলাম সহ-সাধারণ সম্পাদক। খুব কাছ থেকে তাকে দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। এই মানুষটি আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ এবং মুজিব আদর্শের সৈনিক। কর্মী বান্ধব, ত্যাগী ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের এই সৈনিক ছিলেন সাহসী ও সচ্ছ রাজনীতির ধারকবাহক। অনলবর্ষী বক্তা ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের বিশিষ্ট সংগঠকজ মোছলেম উদ্দিন আহমদ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

একাত্তরের এই বীর সেনানী বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর ছিলেন। নির্বাচনের পর বিজয়ী হয়ে সিটি নিউজকে মোছলেম উদ্দিন বলেন, সুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়ন, বাস্তবমুখী বিভিন্ন উন্নয়নের মাধ্যমে আধুনিক নগর ও গ্রামকে শহর হিসেবে গড়ে তোলা। নগরীর যেসব এলাকা এখনো উন্নয়ন বঞ্চিত ওইসব এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করা। শহরের সাথে বোয়ালখালীবাসীর সংযোগস্থল কালুরঘাট সেতুর কাজ দৃশ্যমান করার মধ্যদিয়ে চট্টগ্রামকে টু-ইন সিটির আদলে সাজাতে চাই। সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে জনগনকে সচেতন করা। তিনি বলেন, মানুষ আমাকে রাজনীতিক বিবেচনা না করে এলাকার উন্নয়ন ও জনগনের কল্যানের জন্য মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। কালুরঘাট সেতু নিয়ে মানুষের আশা পূর্ণ করবো ইনশাল্লাহ।

স্বাধীনতার আগে অর্থাৎ ৬৯-৭০ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চট্টগ্রামে আসলে তিনি উঠতেন সদরঘাটের হোটেল শাহজাহানে। এই শাহজাহান হোটেলে নগর আওয়ামী লীগের তৎকালীন নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু সভা করতেন। ৬৯ এর গণ আন্দোলনের সময় চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র থাকাকালীন অবস্থায় আমি হোটেল শাহজাহানে বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আমার সাথে আমার সহপাঠি ছিলেন ৬ জন। বিকেল ৩টায় হোটেল শাহজাহানের সিড়ির নীচে দেখা হলো বীর মু্িক্তযোদ্ধা বাঁশখালীর কৃতি সন্তান মৌলভী সৈয়দর আহমদের সাথে। তিনি বললেন তোমরা কোত্থেকে এসেছো। আমরা বললাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসেছি। তিনি বললেন, এজন্যই সকলের পোষাক সাদা পায়জামা সাদা শার্ট। নীচে অপেক্ষা করো। তোমাদেরকে ডেকে পাঠাবো।

প্রায় ৩০ মিনিট পরে নীচে নেমে আসলেন মোছলেম উদ্দিন। বললেন তোমরা আমার সাথে এসো। উপরে আমাদেরকে একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হলো। বঙ্গবন্ধু একটি খাটে লুঙ্গি এবং পাঞ্জাবি পরা হাতে সিগারেটের পাইপ। সামনে একটি টুলের উপর এরিনমোর সিগারেটের টিন। বঙ্গবন্ধু বললেন তোরা কেমন আছিস। কোত্থেকে এসছিস। মোছলেম উদ্দিন বঙ্গবন্ধুকে বললেন, লিডার কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসেছে আপনাকে দেখতে। আমরা সকলে বঙ্গবন্ধুকে বদমবুচি করলাম। বঙ্গবন্ধু খুশী হলেন। বঙ্গবন্ধু মোছলেম উদ্দিনকে বললেন এদের চকলেট খাওয়া। তোরা লেখা পড়া ভালো করে করিস। স্কুলতো সরকারী এবং ভাল স্কুল। তোরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। সে সময় কক্ষে, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট শফিউল বশর (পরবর্তীতে তিনি ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হয়ে মারা), মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সেই ঊনসত্তরের গণ আন্দোলনের সময় থেকে মোছলেম উদ্দিনকে বঙ্গবন্ধুর একজন ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে প্রত্যক্ষ করেছি।
ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে যুবলীগে হয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছেন কয়েকযুগ ধরে। এমপি-মন্ত্রি না হয়েও

বোয়ালখালীবাসীর উন্নয়নে বর্তমান সরকারের তিন মেয়াদে মোছলেম উদ্দিন প্রচুর কাজ করেছেন। উন্নয়ন কর্মকান্ড করতে গিয়ে তাকে ঈর্ষান্বিত মহলের রোষানলেও পড়তে হয়েছে। তারপরেও তিনি পিছপা হননি। দিনের পর দিন ফাইল নিয়ে ছুটেছেন সচিবালয়ে। এমপি বাদল থাকা অবস্থায়ও তিনি বোয়ালখালীবাসীর উন্নয়নে এমপি মন্ত্রিদের কাছে ছুটেছেন। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পূর্বে এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘদিন।

বর্ষিয়ান নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু যতদিন সভাপতি ছিলেন, ততদিন সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বাবু ভাই অত্যন্ত স্নেহমমতায় তাকে সব সময় সংগঠনের জন্য সকল সহযোগীতা করতেন। বাবু ভাই সভাপতি হলেও সংগঠনের সাংগঠনিক সকল কর্মকা- মনিটর করতেন এবং দলীয় কার্যালয় চালাতেন মোছলেম উদ্দিন। জীবনের পুরোটা সময় অতিবাহিত করেছেন রাজনীতিতে। মানুষের আপদে-বিপদে, সুখে দুঃখে জীবনের মূল্যবান সময় অতিবাহিত করেছেন মোছলেম উদ্দিন। অন্যায়, অবিচার, সন্ত্রাস, মাদক ও সমাজের সকল অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার মোছলেম উদ্দিন নীতি ও আদর্শে অবিচল।

চট্টগ্রামে স্বেরাচার বিরোধী আন্দোলনসহ সকল আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে ছিলেন সক্রিয়। বিজয়ের আনন্দে মোছলেম উদ্দিন আজকের সূর্যোদয়কে বলেছেন, চান্দগাঁও-বোয়ালখালীবাসীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমি এখন কাজ করব বহুল কাঙ্খিত কালুরঘাট সেতু বাস্তাবায়ন করা। এত বছরের মধ্যে কালুরঘাট সেতু নির্মাণের কাজ দৃশ্যমান হবে। বোয়ালখালীবাসীর এই আসনে ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগ থেকে কফিলউদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

এরপর থেকে আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী এই আসনে জয়লাভ করতে পারেনি। ২০০৮ সাল থেকে ৩টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহাজোট প্রার্থী জাসদের প্রয়াত সাংসদ মঈনউদ্দিন খান বাদলকে জয়ী করেছিলেন। বোয়ালখালীবাসী মনে করেন, বোয়ালখালীর উন্নয়নে মোছলেম উদ্দিন ভাল ভূমিকা রাখতে পারবেন। মোছলেম উদ্দিন ব্যক্তিগত জীবনে কর্মীবান্ধব এবং দলীয় স্বার্থে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত এমন নেতা চট্টগ্রামে হাতেগোনা কয়েকজনের মধ্যে মোছলেম উদ্দিন একজন। সরকারের ও জননেত্রি শেখ হাসিনার আস্থাভাজন মোছলেম উদ্দিন কালুরঘাট সেতুসহ বোয়ালখালীর সার্বিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে মনে করেন বোয়ালখালীবাসী। একেবারে তৃণমূলের থেকে উঠে আসা এই নেতা দলের ও এলাকার জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন।

চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, আতাউর রহমান খান কায়সার, এম এম মান্নান, মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ অনেক নেতার সান্নিধ্যে দীর্ঘদিন রজনীতি করেছেন। ১৯৭২ সালে ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক থাকাকালীন একদিন মোছলেম উদ্দিন বললেন, ‘তোমাকে রাতে নগরীতে দেওয়ালে চিকা লেখতে হবে। তোমার সাথে সহকর্মী থাকবে ৬ জন। তুমি নেতৃত্ব দিবে’। আমি বললাম দেওয়ালে কি লিখব। মোছলেম উদ্দিন বললেন, তা তুমি যা জান লিখবে। তবে স্লোগান আমাকে দেখিয়ে লিখবে। আমি ৩০ মিনিট পরে একটা কাগজে লিখলাম, “রাশিয়া থেকে আইলো ডিম, চীনে দিল তা,তার থেকে জন্ম নিল বৈজ্ঞানিকের ছা”।

মোছলেম উদ্দিন বললেন, সাবাস, সুন্দর হয়েছে। তোমাদের জন্য গ্র্যান্ড হোটেলের বিরানী ফ্রি রাতে। (গ্র্যান্ড হোটেল ছিল বর্তমান রাইফেল ক্লাবের সামনে)। জননেতা মোছলেম উদ্দিনের কোন অহংকার নেই। সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যেতে পারেন। নিন্দুকেরা তার অনেক সমালোচনা করলেও তার ইমেজ বেড়েছে বলে আমার বিশ্বাস। একজন দক্ষ সংগঠক। অবিজ্ঞ রাজনীতিবিদ মোছলেম উদ্দিন অনেক চড়াই উৎরাই পার হয়ে আজ এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। এটা তার শ্রম, মেধা ও ত্যাগের প্রতিফলন বলে আমার বিশ্বাস। তিনি কখনো কোন অন্যায়ের কাঝে মাথানত করেননি। তার এই বিজয় বোয়ালখালীবাসীর বিজয়।

আমরা মনে করি, মোছলেম উদ্দিন যথন ক্ষমতাসীনদলে আছেন সেহেতু তিনি বোয়ালখালীতে প্রচুর উন্নয়ন কর্মকান্ড করতে পারবেন। মানুষ চায় উন্নয়ন। বোয়ালখালীবাসী চায় তাদের স্বপ্নের কালুরঘাট সেতু বাস্তবায়ন হোক। এই সেতু বাস্তবায়নে মোছলেম উদ্দিন উদ্যোগ ও বাস্তবায়ন করতে পারবেন এই বিশ্বাস ও আস্থা মানুষের রয়েছে। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে বীর মু্িক্তযোদ্ধা মোছলেম উদ্দিন আহমদ দেশের অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বোয়ালখালীবাসীর স্বপ্ন পূরণে সম্ভব হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সিটি নিউজ পরিবারের পক্ষ থেকে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমদকে আমাদের অভিনন্দন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.