চট্টগ্রাম নগর জাতীয় পার্টি একটি জীবিত লাশ-অপেক্ষা দাফনের

0

দিলীপ তালুকদারঃ চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব কামাল উদ্দিন তালুকদার বলেছেন, চট্টগ্রাম জাতীয় পার্টি নগর কমিটির একজন অদক্ষ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তির কারনে হাজার হাজার নেতাকর্মী পার্টি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। যার কারনে চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টি একটি জীবিত লাশে পরিণত, দাফন করা জরুরী।

আজ রবিবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য শক্তি গণমানুষের প্রাণপ্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টি। স্বাধীন বাংলাদেশে ৯ বছরের সুশাসন পরিচালনায় জনগণের ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সফল রাষ্ট্রনায়ক পল্লীবন্ধু মরহুম হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের হাতে গড়া সংগঠন জাতীয় পার্টি। বহু ঘাত-প্রতিঘাত আর কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ একটি সংগঠন। যার চলার পথে হাজারো নিবেদিত প্রাণ পল্লীবন্ধু এরশাদ প্রেমিক, আদর্শের নেতাকর্মীর রয়েছে অমূল্য অবদান, অংশগ্রহণ।

তিনি বলেন, প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি অথবা চরম সংকটের মুখেও যারা হৃদয়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা, বিশ্বাস আর বিপুল সাহসে আগলে রেখেছেন। জনগণের ক্ষমতায়নের প্রক্রিয়ায় জাতীয় পার্টি বিগত দিনে মহাজোটেরই অংশীদার হয়ে বর্তমান মহান জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় পবিত্র দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশের উন্নয়ন আর চলমান অগ্রগতির অন্যতম দাবিদার। আপনারা ইতিহাস অবগত আছেন, ৯০ পরবর্তী পল্লীবন্ধু এরশাদ মুক্তি আন্দোলনে বীর চট্টগ্রাম নজিরবিহীন ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল।

তিনি বলেন, ১৯৯১ সালে ১৬ মার্চ চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে রাজপথের উত্থাল এরশাদ মুক্তি গণআন্দোলনে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পল্লীবন্ধু এরশাদের কাছে নিয়ে যেতে হয়েছিল। রাষ্ট্রনায়ক এরশাদকে আদালতে নিয়ে আসতে স্বৈরাচারিণী খালেদা সরকারের ক্ষমতা ছিল না। বিশ্বে এটি নজিরবিহীন একমাত্র বিরল ঘটনা। চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির ৯০ পরবর্তী পল্লীবন্ধু এরশাদ মুক্তি আন্দোলনে লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর পদচারণায় বীর প্রসবিনী চট্টগ্রাম ডকবন্দর শিল্প এলাকা আমিন জুটমিল্, নাসিরাবাদ, মোহরা, কুমিরা, সীতাকুন্ড শিল্পাঞ্চলের রাজপথ কাঁপানো আন্দোলন, স্বেচ্ছায় কারাবরণ, আন্দোলন-সংগ্রাম সংগঠনে লক্ষ শ্রমিক-জনতার এরশাদের মুক্তি চাই শ্লোগানে মিছিলে, সমাবেশে উত্থাল ছিল।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম জাতীয় পার্টি ১৯৯৬ সালে স্বৈরাচারিণী খালেদা সরকার বিরোধী অসহযোগ আন্দোলনে সম্মিলিত বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিয়েছিল মহানগর জাতীয় পার্টি এটাই ইতিহাস। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় রাজনীতিতে জাতীয় পার্টি তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল, মহান জাতীয় সংসদে বিরোধী দল। ৯ বছর রাষ্ট্র পরিচালনায় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি দল। ঢাকার পরে বন্দর নগরী চট্টগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ মহানগর। এই মহানগরে অতীতে কোন প্রকার রাজনীতি করেনি, ছাত্র রাজনীতি করেনি, রাজনীতির সাথে সম্পর্কহীন একজন লোক চট্টগ্রাম মহানগরের মত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সভাপতি পদে থাকা লজ্জাজনক, দুঃখজনক, অবিশ্বাস্য।

সামাজিকভাবে নিজেকে রাজনীতিবিদ, দামী মানুষ প্রকাশ করে সমাজবিরোধী কর্মকা- করে মামলা-মোকদ্দমা থেকে বাঁচার জন্য শুধুমাত্র তার পরিবারের জায়গা-জমি রক্ষা, দখল, ভূমিদস্যুতা করার জন্য জাতীয় পার্টির মত গুরুত্বপূর্ণ একটি তৃতীয় বৃহত্তম দলের নাম ব্যবহারে হীন স্বার্থে বিভিন্নভাবে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন কূট-কৌশলে সভাপতির পদ আখড়ে রাখছে। চট্টগ্রাম মহানগর আওতাধীন কোন থানা কমিটি, ওয়ার্ড কমিটি নাই, ছিল না। কোন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন কথিত সভাপতির সাথে রাজনৈতিক সম্পর্কে নেই। অঙ্গ সংগঠনসমূহ নিজেদের মত করে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। দুঃখজনকভাবে বলতে দ্বিধা নেই, চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টি আজ ধ্বংসের শেষ সীমানায় তলানিতে অবস্থান করছে। শুধুমাত্র একজন চিহ্নিত ভূমিদস্যু, সমাজবিরোধী, রাজনীতিতে অজ্ঞ, অরাজনৈতিক সোলায়মান শেঠ নামক ব্যক্তির কারণে।

চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির ইতিহাসে সম্মানিত সভাপতির চেয়ারে পদায়ন করেছিল মরহুম সেকান্দর হোসেন মিয়া এম.পি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম হারুনুর রশিদ খান এম.পি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ইব্রাহিম বিন খলিল এম.পি, সাবেক সাংসদ ও চট্টগ্রামের প্রথম মেয়র আলহাজ্ব মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, জননেতা জাহাঙ্গীর আলম এবং সাবেক এম.পি মাহজাবীন মোর্শেদ এর মত বিশিষ্টজন ও বরেণ্য নেতারা।

তিনি বলেন, এই পবিত্র চেয়ারে সমাজবিরোধী চিহ্নিত ভূমিদস্যু একজন সোলায়মান শেঠ নামক অরাজনীতিবিদ লোককে কোন অবস্থাতেই কেউ মানতে পারে না। ফলে আজ দুঃখে, ক্ষোভে হাজারো এরশাদ আদর্শের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী, রাজনীতিবিহীন অবস্থায় ঘরে বসে বসে তুষের আগুনে জ্বলছে এখনই সময় চট্টগ্রাম জাতীয় পার্টিকে বাঁচানোর প্রয়োজনে ঐক্য গড়া।

তিনি বলেন, ৯০ পরবর্তী পল্লীবন্ধু এরশাদ মুক্তি আন্দোলনে রাজপথ কাঁপানো লড়াকু কারানির্যাতিত তিন তিনবার চট্টগ্রাম নগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রী তপন চক্রবর্ত্তী, কারানির্যাতিত মুহাম্মদ ওসমান খান, নাসির উদ্দিন ছিদ্দিকী, এরশাদ মুক্তি আন্দোলনের ত্যাগী নেতা আলহাজ্ব জহিরুল আলম, আলহাজ্ব আবদুল্লাহ মিয়া, আনিসুল ইসলাম চৌধুরী, বাবুল আহমদ, মো: ইউনুছ আলকরণী, আমিনুল হক আমিন, জামশেদ আলম, জাহাঙ্গীর আলম, আজগর আলী, আবদুল আজিজ, আরমান মিয়া ও অসংখ্য শ্রমিক নেতাসহ শত শত ত্যাগী, নির্যাতিত নেতাকর্মীরা, হাজারো সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী, অরাজনৈতিক ব্যক্তি, সমাজবিরোধী ভূমিদস্যু সোলায়মান শেঠের প্রতিহিংসামূলক অপরাজনীতি, অশালীনতার প্রতিবাদে সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে ভিন্ন ভিন্ন রাজনীতি করে যাচ্ছে ক্ষোভে, দুঃখে, অভিমানে রাজনীতির মাঠ ছেড়ে পল্লীবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে নীরবে, নিভৃতে অবস্থান করছে। ফলে আজ চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টি একটি জীবিত লাশে পরিণত, দাফন করা জরুরী।

তাই এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সর্বস্তরের এরশাদ প্রেমিক আদর্শের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানাই ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থাকা অভিমানে, দুঃখে, ক্ষোভে রাজনীতির মাঠ ছেড়ে ঘরে বসে থাকা সর্বস্তরের সকল পল্লীবন্ধু এরশাদ মুক্তি আন্দোলনের নির্যাতিত, নিপীড়িত নেতাকর্মী, সমর্থকগণ আসুন ঐক্যবদ্ধ হই, ইস্পাত কঠিন ঐক্য। আসুন রক্ষা করি আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন আমাদের রাজনৈতিক পিতা প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সফল রাষ্ট্রনায়ক পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাতে গড়া জাতীয় পার্টিকে।

তিনি বলেন, সমাজবিরোধী এই চিহ্নিত ভূমিদস্যু তথা রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নমুক্ত করতে চট্টগ্রামের জাতীয় পার্টিকে বাঁচানোর আদর্শিক দায়িত্ব পালনে ঐক্যবদ্ধ হই। ঐক্যবদ্ধ এরশাদ সৈনিকদের অপ্রতিরোধ্য প্রতিরোধে অশুভ শক্তি পালিয়ে যাবে। আসুন বাংলাদেশের আগামীদিনের কা-ারী জাতীয় পার্টির মাননীয় চেয়ারম্যান, জনতার বন্ধু গোলাম মো: কাদের এর নেতৃত্বে সম্মিলিত ঐক্য গড়ে তুলি। চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টি আবারো আন্দোলন-সংগ্রাম সংগঠনের অতীত ঐতিহ্য ফিরে পাবে ইনশাল্লাহ।

সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্ববান জানিয়ে বলেন, আসুন ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ তুলি, বাঁচাও নগর জাতীয় পার্টি, হঠাও সমাজবিরোধী সোলায়মান। অদ্যকার এই সংবাদ সম্মেলন থেকে আগামী ৩১ জানুয়ারি’র মধ্যে বিতর্কিত অগণতান্ত্রিক, অবৈধ চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির তথাকথিত কমিটি অবিলম্বে বাতিলের দাবী জানাচ্ছি এবং সোলায়মান শেঠকে সকল পদ-পদবী থেকে অবিলম্বে বহিস্কারের দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় ৩১ জানুয়ারি নগরীর মেলা কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিতব্য ঐক্য সমাবেশ থেকে পরবর্তী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমরা এ ঐক্য সম্মেলনে সর্বস্তরে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সকল অভিমান ভুলে উপস্থিত থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। সাথে সাথে চট্টগ্রামে অবস্থানকারী সকল সম্মানিত কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নেতৃবৃন্দকে আগামী ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য ঐক্য সমাবেশে উপস্থিত থাকার জন্য আমরা আপনাদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমরা আপনাদের সদয় সহযোগিতা কামনা করছি। দীর্ঘক্ষণ যাবৎ উপস্থিত হয়ে আমাদের বক্তব্য শোনার জন্য আপনাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সেই সাথে একান্তভাবে প্রত্যাশা করবো আপনাদের ঐকান্তিক সমর্থন অব্যাহত থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত রয়েছেন জাতীয় যুবসংহতি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন ছিদ্দিকী, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম নগর সভাপতি আনিসুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন স্বপন, জাতীয় যুব সংহতি চট্টগ্রাম নগর আহ্বায়ক আবছার উদ্দিন রনি, সদস্য সচিব কায়সার হামিদ মুন্না, জাতীয় শ্রমিক পার্টি চট্টগ্রাম নগর আহ্বায়ক শামসুল আলম দুলাল, সদস্য সচিব হারুনুর রশিদ হারুন, জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি নগর আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম রেজা,সদস্য সচিব এমদাদ হোসেন চৌধুরী, জাতীয় কৃষক পার্টি আহ্বায়ক এনামুল হক বেলাল, সদস্য সচিব নুর আহমদ মিঠু প্রমুখ।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.