ফুলেল শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন বিশ্ব জয়ী যুব ক্রিকেটাররা
স্পোর্টস ডেস্কঃ বিশ্ব জয় করে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। আজ বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকাল পাঁচটার পর হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান আকবর আলী-তৌহিদ হৃদয়রা। এ সময় তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
গত রবিবার যুব বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে শিরোপা জেতে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। আইসিসি ইভেন্টে এটি বাংলাদেশের প্রথম সাফল্য।
বিমানবন্দর থেকে ক্রিকেটাররা রওয়ানা দেন মিরপুরে বিসিবিতে। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় বিসিবিতে পৌঁছেছে আকবর আলীদের বহনকারীদের বাসটি। এখানে কেক কেটে ও ১৯টি আতশবাজি ফুটিয়ে বিজয়ীদের সংবর্ধনা দিল বিসিবি। সংবাদ সম্মেলন শেষে অধিকাংশ ক্রিকেটার রাতে জাতীয় একাডেমিতেই অবস্থান করবেন। বৃহস্পতিবার সকালে নিজ নিজ গ্রামে ফিরে যাবেন তারা।
বিশ্বকাপজয়ী বীরদের এক নজর দেখার জন্য বিমানবন্দরের বাইরে ভিড় জমান হাজার হাজারো ক্রিকেট ভক্ত। শুধু বিমানবন্দরেই না, মিরপুরে স্টেডিয়ামের বাইরেও জড়ো হয়েছেন হাজারো ক্রিকেটপ্রেমী। বিমানবন্দর থেকে মিরপুর পুরো সড়কজুড়েই রাস্তার পাশে দেখা যায় উৎসুক জনতার ভিড়। দেশকে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ এনে দেয়ার জন্য ক্রিকেটারদের অভিনন্দন জানাতেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এভাবে জড়ো হয়েছেন। এসময় ক্রিকেটপ্রেমীদের ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এছাড়াও হোম অব ক্রিকেট সাজানো হয়েছে জাজ্বল্যমান করে। গতকাল রাত থেকে স্টেডিয়ামজুড়ে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। প্রধান ফটকের সামনে ঝুলছে বিশাল আকৃতির ব্যানার। বড় অক্ষরে লেখা-ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন। এছাড়া আকবর, রাকিবুল, শরীফুলদের ছবি সংবলিত একাধিক ব্যানার টাঙানো হয়েছে মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে।
সংবাদ সম্মেলনের পর একাডেমিতে ক্রিকেটাররা ফ্রেশ হবেন। এরপর ক্রিকেটারদের সম্মানার্থে বিসিবিতেই আয়োজন করা হয়েছে ডিনার। খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষে ক্রিকেটারদের ছেড়ে দেবে বিসিবি। ঢাকায় যাদের পরিবার আছে তারা রাতেই চলে যাবেন। ঢাকার বাইরে যারা যাবেন তারা আজ রাত একাডেমিতেই থাকবেন।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি ভারতের ছেলেদের কোণঠাসা করে বিশ্বকাপের ট্রফিটা নিজেদের দেশে নিয়ে এসেছ আকবর আলীরা। দেশের প্রথম বিশ্বজয়ের আনন্দে মেতে উঠেছে ক্রিকেটাঙ্গন। তাইতো বিশ্বজয়ী যোদ্ধাদের বরণ করে নিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বিভিন্ন আয়োজন করেছে। সেই আয়োজনের অংশ হিসেবে টাইগার যুবাদের বহণ করার জন্য বিশেষ বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যেটির গায়ে লাল-সবুজে সাকিব-অভিষেকদের বিশ্বজয়ের চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
বিমানবন্দরের মতো স্টেডিয়ামও লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে আগে থেকেই। মিরপুর-১০ নম্বর থেকে ২ নম্বর পর্যন্ত এবং স্টেডিয়ামের সামনের এলাকায় অন্তত হাজার দশেক মানুষ ব্যানার, ফেস্টুন, জার্সি এবং জাতীয় পতাকা হাতে নিয়ে অপেক্ষমাণ থাকে বিশ্বজয়ী বীরদের বরণ করে নিতে।
আকবর আলিদের বাস মিরপুর ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে অপেক্ষার অবসান ঘটে সেখানে অপেক্ষমাণ ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকদের। ক্রিকেটাররা স্টেডিয়ামে এসে পৌঁছার আগ পর্যন্ত পুলিশ প্রশাসন দর্শকদের উপচে পড়া ভিড় সামলাচ্ছিলেন।
কিন্তু আকবর-ইমন-রাকিবুলরা স্টেডিয়ামে প্রবেশ করার পরপরই সেই উপচে পড়া ভিড় সামলাতে পারেনি পুলিশ। হুড়মুড়িয়ে দর্শকরা প্রবেশ করে স্টেডিয়াম চত্বরে। এ সময় অন্তত আড়াই থেকে তিনশ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাও প্রবেশ করে স্টেডিয়ামের মূল চত্বরে।
এরপর অবশ্য দর্শকদের জন্য খুলে দেয়া হয় স্টেডিয়ামে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড গ্যালারির গেট। দর্শকরা সবাই বিশ্বজয়ী বীরদের বরণের জন্য চলে যায় গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে। বিসিবি কার্যালয় থেকে স্টেডিয়ামে নেমে আসার পথে আগে থেকেই বিছানো ছিল লাল গালিচা। আন্তর্জাতিক ম্যাচ শেষে যে জায়গায় পুরস্কার বিতরণ করা হয়, সেখানে রাখা ‘ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন’ লেখা ব্যাকড্রপ। যার ঠিক সামনেই টেবিলে সাজানো ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’ লেখা কেক।
আকবর আলিরা লাল গালিচা দিয়ে সেই জায়গায় পৌঁছার পর আনা হয় বিশ্বকাপের ট্রফিটি। এরপর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আর বাংলাদেশ যুব দলের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক আকবর আলি একসঙ্গে ট্রফি উঁচিয়ে অংশ নেন ফটোসেশনে। দুই কেকের মাঝখানে রাখা হয় ট্রফিটি। তারপরই কেক কেটে উদযাপন। কনফেত্তি আর আলোর ঝলকানিতে উৎসবমুখর এক পরিবেশ শেরেবাংলায়।