চট্টগ্রামের রাজনীতিতে হঠাৎ লাইম লাইটে রেজাউর করিম

0

দিলীপ তালুকদারঃ চট্টগ্রাম আওয়ামী রাজনীতির নিভৃতচারী কান্ডারী, প্রচার বিমূখ নগরের বহদ্দার হাট এলাকার ঐতিহ্যবাহী বহদ্দার পরিবারের সন্তান রেজাউল করিম চৌধুরী। শনিবার রাত ১০ টার পর থেকে হঠাৎ আলোচনার লাইম লাইটে চট্টগ্রামের রাজনীতিতে।

হঠাৎ চমকের মতই চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরী। ‌বর্তমান মেয়রসহ ১৯ জন প্রার্থীকে ডিঙিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন পান এ কান্ডারী। ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা এ রাজনীতিকের রয়েছে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন। নেতা মুজিব আদর্শের একজন গর্বিত সৈনিক। দলের দুর্দিনেও আকড়ে ধরে ছিলেন দলকে। শত প্রলোভনেও পা মাড়াননি কোথাও।

পেশাগত জীবনে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসায়ের সাথে জড়িত রেজাউল করিম চৌধুরীর পিতা মরহুম হারুন-অর-রশীদ চৌধুরী ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। তার দাদা ছালেহ আহমদ চৌধুরী ছিলেন ইংরেজশাসিত ভারত এবং পাকিস্তান আমলে চট্টগ্রামের একজন খ্যাতিমান আইনজীবী ও চট্টগ্রামে ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত বিলুপ্ত কমরেড ব্যাংকের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি পাকিস্তান আন্দোলন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরিবারের বড় ভাই অধ্যাপক সুলতানুল আলম চৌধুরী ছিলেন একজন রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়াও তার পূর্ব পুরুষেরা চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ২৩টি মসজিদ প্রতিষ্ঠাসহ অসংখ্য জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। যার কারণে এলাকার জনসাধারণ এখনও শ্রদ্ধা ভরে খ্যাতিমান ঐতিহ্যবাহী বহদ্দার পরিবারের কথা।

১৯৫৩ সালের ৩১ মে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানার অন্তর্গত ৬নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন জমিদার বংশ বহরদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

সাবেক বৃহত্তর পাঁচলাইশ থানায় রেজাউল করিম পরিবারের পূর্ব পুরুষেরা এলাকায় শিক্ষার প্রসারের জন্যে ১৮২০ সালে বহদ্দার হাটে নিজস্ব জমির ওপর প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব ষোলশহর প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয় থেকে ১৯৬২ সালে ৫ম শ্রেণী এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সরকারী মুসলিম হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করেন। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রি অর্জন করেন এবং তারপর আইন বিষয়ে পড়াশোনার জন্যে ভর্তি হন। কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের পর হত্যার প্রতিবাদে সামরিক দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ লড়াইয়ে নেমে ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারেননি।

রেজাউল করিম চৌধুরী ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগে যোগ দেন। এরপর ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৭০ সালে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং পরের বছরেই ১৯৭২ সালে সভাপতি নির্বাচিত হন। বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগ কার্যকরী কমিটির সদস্য হন ১৯৭০ সালে। ১৯৭২ সালে চট্টগ্রাম জেলা ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক, ১৯৭৩ সালে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৯৭৬ সালে সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৮ সালে আহ্বায়ক নির্বাচিত হন।

১৯৮০ সালে তিনি চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য এবং ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন রেজাউল। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার পর ২০১৪ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করছেন।

রেজাউল করিম চট্টগ্রামের উন্নয়নের দাবিতে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামেও নেতৃত্ব দিয়েছেন।

দীর্ঘকালীন ত্যাগের পুরষ্কার হিসেবে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে আপ্লুত রেজাউল করিম বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিশ্বাসের মর্যাদা তিনি রাখবেন। নৌকার বিজয়ে নির্বাচনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার অনুরোধও জানান এই মেয়র প্রার্থী।

অন্যদিকে, বর্তমান মেয়র চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন তাঁর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরীর জন্য নির্বাচনে কাজ করে যাবেন বলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানান। তিনি বলেন, নেত্রীর সিদ্ধান্ত শিরোধার্য্য। আমাদের এখন একটাই কাজ নৌকার প্রার্থীকে জয়ী করা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.