লেখকরা কখনোই জনপ্রিয়তার জন্য লেখা-লেখি করে না

0

সিটি নিউজঃ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন আয়োজিত মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত অমর একুশে বইমেলা চট্টগ্রাম’র ৯ম দিনে বাংলা কথা সাহিতের সমৃদ্ধি ঐতিহ্য ও বর্তমান ধারা শীর্ষক সাহিত্য সম্মিলন দেশের খ্যাতিমান উপন্যাসিক হাসনাত আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়।

আহ ১৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টায় জিমনেশিয়ামস্থ অমর একুশে বইমেলা মঞ্চে  উক্ত সাহিত্য সম্মিলনে আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও সাংবাদিক আনিসুল হক, একুশে পদক প্রাপ্ত কথা সাহিত্যিক হরিশংকর জলদাশ, কবি ও সাহিত্যিক বাদল সৈয়দ। সঞ্চালনা করেন কবি ও সাংবাদিক বিশ্বজিৎ চৌধুরী।

দ্বিতীয় পর্বে শিশু সাহিত্য বিষয়ক শীর্ষক সাহিত্য সম্মেলনে প্রধান আলোচক ছিলেন দেশের বিশিষ্ট শিশু সাহিত্যিক বিজ্ঞানী লেখক ড. জাফর ইকবাল। দ্বিতীয় পর্ব সঞ্চালনা করেন কবি ও সাংবাদিক রাশেদ রউফ।

উপন্যাসিক হাসনাত আবুদল হাই বলেন, প্রাচীন ও মধ্যযুগ আমাদের সাহিত্যের বিষয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।আধুনিক কালে এসে আন্দোলনকে এবং চেতনার স্রোতকে গ্রহণ করেছি। তিনি বলেন প্রাচীন যুগের অন্যতম সৃষ্টি চর্যাপদ, যার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্য সমৃদ্ধি হয়েছে। অষ্ট্যদশ শতাব্দীর শেষে দিকে গদ্যের প্রচলন হয়েছে। বাংলাদেশে সাহিত্যে এখনও উত্তর আধুনিক পর্বে যেতে পারি নাই। আমরা আধুনিক বর্তমান ধারা বর্তমান সাহিত্যে ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার সূত্রেও পেয়েছে।এ ধারা সমূহ আমরা কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারছি তা ভাবার সময় এসেছে।

সাহিত্যিক সাংবাদিক আনিসুল হক বলেন, আমরা যে ভাষায় কথা বলি সে ভাষায় লিখি না। গদ্যের প্রবাহমানতা বাংলাদেশের সুন্দর হয় না। এটা আমার অনুভব হয়। তিনি বলেন শরৎ চন্দ্রের উপন্যাস সমাজ নিয়ে রচিত তিনি রাষ্ট্র নিয়ে লিখেন নি। বাংলাদেশের আরেকটি অসুবিধা মুখের ভাষায় কথা বললেও তা আমরা লিখি না।

তিনি বলেন ঢাকার ভাষায় যদি সাহিত্য রচনা করি। তবে অন্য অঞ্চলের ভাষা কি হবে, তা বলা মুশকিল। বিশ্ব সাহিত্যের পঠিত উপন্যাসগুলো বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছেন। কথা সাহিত্যিক হরি শংকর জল দাশ বলেন, উপন্যাসে ভূমিকা থাকতে হয় তিনি বলেন এ বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম শত বার্ষিকী তাই বলতে হয় এই মহান নেতার কারণে আজ আমরা আমাদের সবকিছু সমৃদ্ধির দিকে নিয়ে যাচ্ছি। উপন্যাসের জীবনী ভিত্তিক লেখার দ্বারা সৃষ্টির প্রবনা সূচনা করেছেন হাসনাত আবদুল হাই। তার ভ্রমণ সাহিত্য নন্দন তথ্য ও আমাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

তিনি বলেন বঙ্কিম চন্দ্র বাংলা সাহিত্যের একজন সর্বশ্রেষ্ঠ উপন্যাসিক, তাকে এড়িয়ে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিধবাদের মধ্যে তিনি প্রেম দেখিয়েছেন কিন্তু সংসার করার উপক্রম দেখাতে পারেনি। তারপরও তার হাত ধরে আজকের দিনে বিধবাদের বিয়ে হচ্ছে। সাহিত্যিক বাদল সৈয়দ বলেন, চট্টগ্রামের ভাষায় যখন চট্টগ্রাম সংলাপ রচনা করি, তখন চট্টগ্রামের মানুষকেই তা বুঝিয়ে দিতে হয়। সিলেট চট্টগ্রামের সংলাপ রচনায় তাদের ভাষা ব্যবহার করতে পারব কিনা, কিংবা ব্যবহার করলে কি সমস্যা হতে পারে তা ভেবে দেখতে হবে। আঞ্চলিক ভাষায় কথা বললে আমাদের আগ্রাবাদের ভাষায় সে ভাষাকে কথ্য ভাষা হিসেবে গণনা করতে পারি।

দ্বিতীয় পর্বে প্রধান আলোচক শিশু সাহিত্যিক বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, আমি পারিবারিকভাবেই লেখার পরিবেশ পেয়েছি। আমার পিতা মাতা, ভাই বোন সকলেই লেখক। তিনি বলেন, লেখকরা কখনোই জনপ্রিয়তার জন্য লিখে না। তারা নিজস্ব ভাবনা থেকে লিখে থাকে। আমি যখন ছোটদের জন্য লিখি তখন ছোটদের মত করেই কল্পনা করতে থাকি আর ছোটদের লেখা ছোটদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার কারণেই সেই বিষয়ে আরও লেখা-লেখি করি।

মাত্র একটি বিজ্ঞান বিষয়ক বই লিখে বিজ্ঞান শাখায় যখন বাংলা একাডেমির পুরস্কার পেয়েছি তখন থেকেই বিজ্ঞান মনষ্ক লেখা লেখিতে আরও উৎসাহি হয়ে উঠি। আমি যখন নিউ ইয়র্কে পিএইচডি অধ্যায়নরত তখন আমার কোন সাথী ছিল না। তাই আমি কল্পনার চিত্রে আমার একজন বন্ধু বানিয়ে ছিলাম। তাকে উদ্দেশ্যে করে প্রতিদিন কথা বলতে থাকি এবং লিখতে থাকি। যা পরবর্তীতে দিপু নম্বার টু উপন্যাস হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছিল।

এক সময় বাংলাদেশের খ্যাতিমান লেখিকা শহীদ জননী জাহানারা ইমামের সাথে যখন আমার নিউ ইয়র্কে দেখা হয় তখন ওনাকে আমি আমার ভাই হুমায়ুন আহমেদের পরিচয় দিয়ে ওনার কাছ থেকে যখন অটোগ্রাফ সংগ্রহ করি তখন তিনি বলেছিলেন তোমাকে আমি চিনি, তোমার বই পড়েছি, ভালো লেগেছে।

সে দিনটি ছিল আমার জীবনের লেখা-লেখির উৎসাহের প্রধান হাতিয়ার। তাই আমি আমার লেখালেখি জীবনের আজকের অবস্থানের শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তিনি শিশুদেরকে আনন্দের সহিত মননশীল ও সৃজনশীল চর্চার মাধ্যমে নিজের পড়ালেখাসহ সামগ্রিক বিষয়ে নিজেকে তৈরি করার আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীদেরকে নানান ধরণের বই পড়ার আহ্বান জানান।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.