সিটিনিউজবিডি : ইতালির নাগরিক তেভেলা সিজার হত্যাকাণ্ডে তিনটি মোটিভকে সামনে রেখে তদন্ত করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তবে কোনো মোটিভই স্পষ্ট নয়। বৃহস্পতিবার গুলশানে তেভেলা খুনের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এ তথ্য জানিয়েছে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
দুপুর সোয়া দুইটায় ঘটনাস্থলে যান মনিরুল। তার সঙ্গে হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ডিবির উপ-কমিশনার (ডিসি-পূর্ব) মাহাবুব আলম, গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (এডিসি) আব্দুল আহাহসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় গণমাধ্যমকে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ বা মোটিভ পাইনি। মোটিভ অস্পষ্ট। এ ছাড়া হত্যাকারী কারা সে বিষয়েও সুনির্দষ্ট ধারণা এখন পর্যন্ত পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হত্যাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আ্ওতায় আনা। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত কাজ চলছে।’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ডিবি তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত কাজ করছে। একটি হলো- তার পেশাগত বিষয়। তিনি যে এনজিওতে কাজ করতেন, সেখানে এনজিও সংক্রান্ত কোনো ঝামেলো ছিল কিনা। দ্বিতীয়টি হলো- তার ব্যক্তিগত বিষয়। পূর্ব শত্রুতা বা কেনো সম্পর্কের কারণে এ হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে কিনা সেটিও আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি।’
এছাড়া তথাকথিত খিলাফতের দাবিদার ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই খুনের দায স্বীকারের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান যুগ্ম কমিশনার।
তিনি বলেন, ‘একটি ওয়েবসাইটে আইএসের বরাত দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও এর সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি আইএস এই দাবি করেছে। তবে কোনো জঙ্গি সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে কিনা সেটিও খতিয়ে দেখছি।’
সন্দেহের তীর তৃতীয় পক্ষের দিকে
এদিকে তিনটি বিষয় ছাড়াও তৃতীয় পক্ষ এ ঘটনাটি ঘটাতে পারে বলেও মনে করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের এ মুখপাত্র। তিনি বলেন, ‘সরকাকে বেকায়দায় ফেলার জন্য কোনো তৃতীয় শক্তি বা পক্ষ এ হত্যাকাণ্ডটি ঘটাতে পারে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পেশাদার খুনিদের দিয়ে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটানো সম্ভব। এর আগের বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে আমরা দেখেছি, সেখানে পেশাদার খুনিরা এ ধরনের হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।’
যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ডিবি তদন্তভার গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। খুনিরা সম্ভাব্য কোনো গতিপথ ব্যবহার করেছে সেটি মূলত দেখতে এসেছি।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে হত্যার বিষয়ে কিছু তথ্য আমরা পেয়েছি। তদন্ত স্বার্থে সেগুলো প্রকাশ করা যাবে না। এদিকে তবে তেভেলা সিজার হত্যাকাণ্ডে আইএস-এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে দায় স্বীকারের কোনো ঘোষণা পাওয়া যায়নি বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বুধবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব এ. কে. মফিজুল হকের সই করা বিজ্ঞপ্তিটি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতালীয় নাগরিক তেভেলা সিজার হত্যাকাণ্ডের পর সাইট (SITE Intelligence Group) নামক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন পর্যবেক্ষণ ওয়েবসাইটে আইএসর বরাত দিয়ে দায় স্বীকার করে। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তে এ পর্যন্ত আইএস এর নিজস্ব ওয়েবসাইটে এ ধরনের কোনো ঘোষণা পাওয়া যায়নি।
সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কে হাঁটার সময় তিন মোটরসাইকেল আরোহী ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজারকে গুলি করে পালিয়ে যায়। এ সময় দুর্বৃত্তরা তার হাতে থাকা ব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সিজারকে মৃত ঘোষণা করেন।