ভারতে রাজনৈতিক ডিগবাজীঃ মধ্যপ্রদেশে পতনের মুখে কংগ্রেস

0

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই সে কথা আরেকবার প্রমান করলেন মধ্যপ্রদেশের বিধায়ক কংগ্রেস নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সিন্ধিয়া। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) দ্বারা শাসিত নয় ভারতের এমন রাজ্যে কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় এক নেতার কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপিতে যোগদানের পর রাজ্যটিতে কংগ্রেসের সরকার পতনের দ্বারপ্রান্তে। কংগ্রেসের এই হেভিওয়েট নেতার নাম জোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। গতকাল মঙ্গলবার তিনি দলবদল করেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দিনভর নানা নাটকীয়তার পর গতকাল মঙ্গলবার বিজেপিতে যোগ দেন মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস নেতা ও সাবেক মন্ত্রী জোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ১৫ বছর পর রাজ্যটির শাসনক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে আসে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অমিত শাহ’র কৌশলী ভূমিকা এবং মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর কমলনাথের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে বিজেপিতে যোগদানের পর জোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বের অধীনে কাজ করার জন্য আমি মুখিয়ে আছি। কংগ্রেসের প্রায় বিশ বিধায়ক তাকে সমর্থন দিচ্ছেন।

জোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া তার সাবেক দল কংগ্রেসের সমালোচনা করে বলেছেন, দলটি তার পথ হারিয়েছে এবং মধ্যপ্রদেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। তার দাদি বিজয়রাজে সিন্ধিয়া ১৯৬৭ সালে কংগ্রেস ছেড়ে জনসংঘে এবং বাবা মাধবরাও সিন্ধিয়া ১৯৮৪ সালে জনসংঘ ছেড়ে যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেসে।

দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে ভিড়ে ঠাসা এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কংগ্রেসের বর্তমান অবস্থা আর আগের মতো নেই। আমি যে দলে যোগ দিয়েছিলাম দলটি আর তা নেই। দেশের জন্য কাজ করার আমার যে লক্ষ্য এই দলে থেকে আমি তা আর পূরণ করতে পারছি না।’

কংগ্রেসের নেতা রাহুল ও প্রিয়াংকার সাথে রাজপথে জোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া
কংগ্রেসের নেতা রাহুল ও প্রিয়াংকার সাথে রাজপথে জোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া

নিজেদের পরিবারে তাকে স্বাগত জানানোর জন্য তিনি বিজেপিদলীয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির নেতৃত্বে ভারত নিরাপদ। গতকালই নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর সঙ্গে দেখা করেন জ্যোতিরাদিত্য।

রাজনৈতিক পালাবদল শুরু হলো যেভাবে
এ নাটকের শুরু হয়েছিল গত সোমবার। মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসদলীয় এবং সিন্ধিয়ার অনুগত অন্তত ১৭ বিধায়ক পদত্যাগ করার পর। পদত্যাগ করার পরপরই তাদের কর্ণাটক রাজ্যের আত্মগোপনে পাঠানো হয়। কংগ্রেস বলছে, তারা সিন্ধিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সিন্ধিয়া মোদি ও অমিত শাহর সঙ্গে সাক্ষাতের উদ্দেশে মধ্যপ্রদেশ থেকে দিল্লি যান। তারপর থেকেই বাতাসে গুঞ্জন ওঠে যে তিনি হয়তো বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। এর সঙ্গে সঙ্গে মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সরকার পতনের আশঙ্কার মুখে বলে গুঞ্জন উঠতে শুরু করে।

সিন্ধিয়ার কংগ্রেস ত্যাগের পর আরও পাঁচজন কংগ্রেস বিধায়ক পদত্যাগ করেন। তবে রাজ্যসভার স্পিকার আগের ১৭ এবং পরের পাঁচসহ মোট ২২ বিধায়কের কারও পদত্যাগপত্রই গ্রহণ করেননি। স্পিকার তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা মাত্রই রাজ্যসভায় সংখ্যালঘু হয়ে যাবে কংগ্রেস সরকার।

ধারণা করা হচ্ছে, এরপর বিজেপি সমর্থিত একটি সরকার মধ্যপ্রদেশের ক্ষমতায় আসতে পারে। যদিও কংগ্রেস দাবি করছে, সরকারে থাকতে যথেষ্ট সমর্থন আছে তাদের। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ম্যাজিক্যাল কিছু না ঘটলে মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসের সরকারপতন এখন শুধু সময়ের ব্যাপার।

মধ্যপ্রদেশে সরকারের বর্তমান অবস্থা
২০১৮ সালে ২৩০ সদস্যের মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ১১৪ আসনে জয়ী হয়। বিজেপি দখল করে ১০৯টি আসন। নির্বাচনের পর দুই বিধায়কের মৃত্যু হওয়ায় দুটি আসন এখন ফাঁকা। এদিকে একদল বিধায়কের পদত্যাগপত্র গৃহীত হলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য ১০৪ আসনের প্রয়োজন পড়বে।

২০১৮ সালের নির্বাচনে কংগ্রেস জয়ী হওয়ার পর গোয়ালিয়রের ‘রাজপরিবারের’ সদস্য জোতিরাদিত্য সিন্ধিয়ার মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল। দলে এবং রাজ্যে তার প্রভাব সত্ত্বেও কংগ্রেসের প্রবীণ রাজনীতিবিদ কমলনাথ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। সেই থেকে দ্বন্দ্ব শুরু।

টুইটারে সিন্ধিয়া নিজের পদত্যাগের কথা জানানোর পরপরই কংগ্রেসে দল বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করে। বেশ কয়েক মাস ধরেই কংগ্রেসে কিছুটা চাপে সিন্ধিয়া। তার সমর্থকরা বলছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগের কোনো চেষ্টাই করেনি গান্ধী পরিবার।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.