করোনার কারণে চতুর্মুখী সংকট মোকাবেলা করছে প্রবাসীরাঃ সিরাজুল হক

0

প্রবাস ডেস্কঃ ওমানস্থ বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের সভাপতি সিরাজুল হক বলেন, বিশ্বের এই মহামারী করোনাভাইরাসে আতঙ্কে চতুর্মুখী সংকটে পড়েছে প্রবাসী বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ও চাকুরীজীবি শ্রমিকেরা। পৃথিবীর মানুষ আজ গৃহবন্দী হয়ে রয়েছে, একাকিত্বে দিন কাটাচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশীরা।

গত সোমবার ওমানস্ত বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের সভাপতি সিরাজুল হক ক্লাবের কার‌্যালয়ে প্রবাসী সাংবাদিকদের উপরোক্ত কথা বলেন।

তিনি আরো বলেন, একদিকে প্রাণঘাতী রোগের ভয়ে পরিবার নিয়ে থাকতে হচ্ছে শঙ্কায়, অন্যদিকে প্রায় আয়-রোজগার বন্ধের পথে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, কফিলের ফায়দা, লাইসেন্স রিনিউ এবং ফ্যামেলি নিয়ে বিশাল এক সংকটে পড়েছে। ফলে প্রবাসী ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

বিশিষ্ট সংগঠক ও ব্যাবসায়ী  সিরাজুল হক বলেন – দীর্ঘদিন থেকেই আমাদের দেশের বিরাট একটা জনগোষ্ঠী ওমানে, প্রবাসী হিসেবে আছেন। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আসা মধ্যপ্রাচ্য দেশগুলোর মধ্য অন্যতম একটা দেশ হলো ওমান। এখানে নানা সেক্টরে কাজ করেন আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা। করোনার এই ভয়াল থাবায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে অনেকের স্বপ্ন। সাধারণ মানুষ অনেক কষ্টে দিন যাপন করছেন। ওমান সরকারও নানাভাবে বাংলাদেশসহ প্রবাসীদের সাহায্য করছে এবং যারা অবৈধ আছেন তাদেরকেও ফ্রি চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন লকডাউন থাকা শহরগুলো ধীরে ধীরে লকডাউন তুলে দেওয়া শুরু করেছে। অনেক কলকারখানা ও খাদ্য সেক্টরের দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হচ্ছে।

করোনা এই সময়ে ক্লাবের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আমরা বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাবের উদ্যোগে ক্লাবের নির্বাহী সদস্য, আজীবন সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায়, করেনা ভাইরাসের ফলে সৃষ্ট দূর্যোগে কর্মহীন হয়ে পড়া প্রায়, (৩ হজার) প্রবাসীদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা মাস্কাটসহ বিভিন্ন অঞ্চলে তালিকভুক্ত করে ক্লাবের নিজ উদ্দ্যোগে কর্মহীনদের বাসা বাড়িতে গিয়ে উক্ত ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছি।

এছাড়া লকডাউনের ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া সাধারণ প্রবাসীদের পাশে নানাবিধ সেবা প্রতিষ্ঠান এবং অর্গানাইজেশনের কর্মীরা পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ অনেকের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি আশা করছেন পুরো ওমানের অবস্থা ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে আসবে৷ ইতিমধ্যে বন্ধ থাকা অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে।

অবৈধ প্রবাসী দেশে যেতে পারবে কিনা বা আউটপাস কখন নাগাদ দিচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন- আউটপাস এটি ওমান সরকারের উপর নির্ভর করে। ওমান অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ ক্ষমার অপেক্ষায় দিন গুনছে, সেটি দূতাবাসসহ সবার নজরে আছে। ওমান অবস্থানরত অবৈধ বাংলাদেশী নাগরিকদের বিনা জরিমানায় দেশে ফিরে যাবার সুযোগ প্রদানের জন্য দূতাবাস ওমানের মহামান্য সুলতানের নিকট সাধারণ ক্ষমার আবেদনসহ বাংলাদেশ দূতাবাস কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছে।

তবে ওমান সরকার থেকে এখনো পর্যন্ত সাধারণ ক্ষমার কোন প্রকার ঘোষণা পাওয়া যায়নি।

যারা ছুটিতে দেশে আছেন তারা পুনরায় ওমান প্রবেশ করতে পারবে কিনা জানাতে চাইলে তিনি বলেন- লকডাউনের আগে যারা ছুটিতে দেশে গিয়েছে ছুটির দিনক্ষণ পেরিয়ে যাওয়ার পর কর্মস্থলে ফিরে কাজে যোগ দেওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। এটি দুই দেশের সরকারের উপর নির্ভর করছে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রবাসীদের এখন প্রয়োজন ছাড়া বাংলাদেশে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।

তিনি বলেন যারা এখন ওমানে অবস্থানরত আছে, প্রয়োজন ছাড়া যেন দেশে না যায়, হয়ত এই সংকটময় মুহুর্তে মানুষ চলে যেতে চাচ্ছে, তবে সংকট খুব দ্রুত নিরসন হবে।

তিনি ওমানে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের ওমানের আইন-কানুন মেনে চলতে পরামর্শ দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এবং ওমানের সাথে সুসম্পর্ক ধরে রাখতে হলে অবশ্যই ওমানের নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। ওমানে অবস্থানরত প্রবাসীদের যাবতীয় সমস্যায় দূতাবাসের পরামর্শ নিতেও বলেন তিনি। ওমানে অবস্থিত বাংলাদেশি প্রবাসীদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে এবং সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকার পরামর্শ দেন। বর্তমানে কিছু অসাধু বাংলাদেশিদের কারণে ওমানে বাংলাদেশিদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিদেশের মাটিতে কেউ যেন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান বাংলাদেশ সোশ্যাল ক্লাব ওমান এর সভাপতি সিরাজুল হক।

করোনার এই পরিস্থিতি সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকল প্রবাসীদের চলাফেরা করাও অনুরোধ জানান তিনি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.