কক্সবাজারে মেজর (অবঃ) হত্যা-মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি গঠন

0

কক্সবাজার প্রতিনিধিঃ কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান (৩৬) নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে।

শনিবার (১ আগষ্ট) সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই কমিটি গঠন করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব শাহে এলিদ মাইনুল আমিন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহা. শাজাহান আলিকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্য হলেন কক্সবাজার জেলার পুলিশ সুপার মনোনীত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও কক্সবাজারের এরিয়া কমান্ডারের একজন প্রতিনিধি। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের ভেতরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, কমিটি ঘটনার বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ, উৎস অনুসন্ধান করবে। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় ইত্যাদি সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ পূর্বক সুস্পষ্ট মতামত দেবে।
শুক্রবার রাত ৯টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়ায় কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে গুলিতে সিনহা রাশেদ খান নিহত হন।

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ জানিয়েছে, সাবেক ওই সেনা কর্মকর্তা তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে করে অপর একজন সঙ্গীসহ টেকনাফ থেকে কক্সবাজার আসছিলেন। মেরিন ড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া চেকপোস্টে পুলিশ গাড়িটি থামিয়ে তল্লাশি করতে চাইলে সেনা কর্মকর্তা বাধা দেন। এই নিয়ে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে সেনা কর্মকর্তা তাঁর কাছে থাকা পিস্তল বের করলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান গুরুতর আহত হন। তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। শনিবার সকালে নিহতের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, শামলাপুরের লোকজন ওই গাড়ির আরোহীদের ডাকাত সন্দেহ করে পুলিশকে খবর দেয়। এই সময়ে পুলিশ চেকপোস্টে গাড়িটি থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু গাড়ির আরোহী একজন তাঁর পিস্তল বের করে পুলিশকে গুলি করার চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ গুলি চালায়।

পুলিশ সুপার জানান, এই ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। দুজনকে আটক করা হয়েছে। পুলিশ পিস্তলটি জব্দ করেছে। এ ছাড়া গাড়িতে তল্লাশি করে ৫০টি ইয়াবা, কিছু গাঁজা এবং দুটি বিদেশি মদের বোতল উদ্ধার করা হয়েছে।

মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মো. রাশেদ খান ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপসচিব মো. এরশাদ খানের ছেলে। গত ৩ জুলাই ঢাকা থেকে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের তিনজন ছাত্রছাত্রীসহ একটি ইউটিউব চ্যানেলের জন্য ট্রাভেল ভিডিও তৈরি করতে তিনি কক্সবাজার আসেন। প্রায় এক মাস যাবত তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে শুটিং করেন।

এদিকে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তাঁর রাজউক কলেজের বন্ধুরা। তারা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

তানভীর অপু নামের একজন তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমি হতবাক, শোকে বাকরুদ্ধ। যে উচ্ছল মানুষটি শুধু ভ্রমণ করার জন্য, দুনিয়া দেখার জন্য সেনাবাহিনীর মেজরের চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে জীবনে চলতে চেয়েছিলেন নিজ পথে, তাকে এভাবে হত্যা করা হলো। কমান্ডো ট্রেনিং পাওয়া সাবেক এসএসএফ অফিসার, আমাদের কাছের বন্ধুটা এত ভালো মানুষ ছিলো, আর তাকে নিয়ে এখন এত রটনা ।

মেজর (অব:) রাশেদ ইউনিফর্ম নয় বরং ছিলেন কমবেক্ট কালার টি-শার্ট প্যান্টে এ ছিল। তার কাছে তার লাইসেন্স পিস্তল ছিলো। তিনি ইউটিউবে একটা শো শুটিং এ সেখানে ছিলেন। নিজের পরিচয় অবসরপ্রাপ্ত মেজর পরিচয় দেবার পর তিনি গাড়ি থেকে নামেন। সেখানেই গুলির ঘটনা ঘটে এবং মেজর রাশেদ নিহত হন।যেটা প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন সংস্থা জেনেছে। এই ঘটনার পিছনে সত্য উদঘাটন হোক।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.