ওসি হিমাংশু দাসসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে সমরকৃষ্ণের মামলা

0

সিটি নিউজঃ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী থানার সাবেক ওসি হিমাংশু কুমার দাসসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ১ জন শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের আদেশ দিয়েছে আদালত। চট্টগ্রাম আদালতের শিক্ষানবিশ আইনজীবি সমর কৃষ্ণ চৌধুরী এ অভিযোগ দায়ের করেন।

আজ সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেম মোহাম্মদ নোমানের আদালত এ আদেশ দেন। এ অভিযোগটি তদন্তের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বাদির আইনজীবী এডভোকেট জুয়েল দাশ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।এ মামলায় অন্য আসামীরা হলেন বোয়ালখালী থানার তৎকালীন এসআই আতিকুল্লাহ, এসআই আরিফুর রহমান, বোয়ালখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুব আলম আখন্দ, এসআই আবু বকর সিদ্দিকী, এসআই রিপন চাকমা, এএস আই আলাউদ্দিন, এসআই দেলাওয়ার হোসেন, লন্ডন প্রবাসী সঞ্জয় দাশ, সঞ্জয় দাশের সহকারী সজল দাশ, বোয়ালখালী উপজেলার সরোয়াতলী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন চৌকিদার দিদারুল আলম।

তাদের বিরুদ্ধে ১২০(খ), ১৬১, ১৬৬, ২২০, ৩০৭, ৩২৩, ৩৬৪, ৩৭৯, ৩৮৫, ৩৮৬, ৩৮৭, ১৪৯, ৫০৬, ২১১ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৭ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আদালত সংলগ্ন চট্টগ্রাম নগরের জহুর হকার্স মার্কেটের সামনে থেকে সমর চৌধুরীকে তুলে নিয়ে যায় বোয়ালখালী থানা পুলিশ। পরদিন ২৮ মে সকালে ৩১০ পিস ইয়াবা ও একটি একনলা বন্দুক হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছবি তুলে সেই ছবি বোয়ালখালী থানা পুলিশ গণমাধ্যামে পাঠায়। এ সময় ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধারের মামলা দিয়ে জেলে পাঠায় সমর কৃষ্ণ চৌধুরীকে।

২৯ মে বিকেলে সমর কৃষ্ণ চৌধুরীর মেয়ে তমালিকা চৌধুরী বোয়ালখালীতে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের বিরুদ্ধে তার বাবাকে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করেন।

সমর কৃষ্ণ চৌধুরীর পরিবার দাবি করেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক সঞ্জয় দাশের সঙ্গে বিরোধের জেরে বোয়ালখালী থানা পুলিশ সমর কৃষ্ণ চৌধুরীকে চট্টগ্রাম নগর থেকে তুলে নিয়ে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছে।

শিক্ষানবীশ আইনজীবী সমর কৃষ্ণ চৌধুরীকে অস্ত্র ও ইয়াবা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগে বিতর্কের মুখে তাকে চট্টগ্রাম পুলিশ লাইনে এলওআর এ বদলী করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ২৫ আগষ্ট শনিবার চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) নুরে আলম মিনা বদলির এই আদেশ জারি করেছেন।

সূত্র মতে, এসপি’র আদেশে ওসি হিমাংসুকে প্রশাসনিক কারণে জেলা পুলিশ লাইনে এলওআর (লাইন অর্ডিনারি রিজার্ভ) পদে বদলির কথা বলা হয়েছে। পুলিশ বিভাগে এটি গুরুত্বহীন পদ হিসেবে বিবেচিত। সাধারণত বিভাগীয় শৃঙ্খলা-ভঙ্গের জন্য শাস্তিমূলক প্রক্রিয়া গ্রহণের আগে এই ধরনের পদে বদলি করা হয়।

সূত্র জানায়, শিক্ষানবীশ আইনজীবী সমরকে ফাঁসানোর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে বোয়ালখালী থানার তিন পুলিশ কর্মকর্তা এতে জড়িত থাকার প্রমাণ পায় জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের কমিটি। অভিযুক্তরা হলেন : ওসি হিমাংশু দাশ রানা, এসআই আতিকুর রহমান ও এসআই আরিফুল ইসলাম।ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১৯ জুলাই আরিফুর এবং ১১ আগস্ট আতিকুরকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।

জানা গেছে, এসপি নুরে আলম মিনা ওসি হিমাংসুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজি) কাছে সুপারিশ পাঠান। সেই সুপারিশের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পূর্ব প্রক্রিয়া হিসেবে হিমাংশুকে পুলিশ লাইনে বদলি করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২০১৮ সালের ২৭ মে বোয়ালখালী থানা পুলিশ সমর চৌধুরীকে নগরীর লালদিঘি এলাকা থেকে আটক করে। এরপর তাকে গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের দক্ষিণ সারোয়াতলী গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। তার গ্রামের বাড়ি থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে দাবি করে পুলিশ বোয়ালখালী থানায় দুটি মামলা দায়ের করে। শুধু মামলা করেই ক্ষান্ত হননি ওসি হিমাংসু তার হাতে অস্ত্র দিয়ে বিছানার নীচে ইয়াবা রেখে অস্ত্র ও ইয়াবা দিয়ে ছবি তুলে গণমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়া হয়। সমর চৌধুরী থাকেন শহরে আর অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার করলেন তার গ্রামের বাড়ীর বিছানার নীচ থেকে। কি অদ্ভূদ ব্যাপার। আর এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয় সমর চৌধুরীকে।

গ্রেপ্তারের পর থেকে সমরের পরিবার দাবি করে আসছিল, তাদের গ্রামের লন্ডনপ্রবাসী যুবক সঞ্জয় দাশের সঙ্গে তার প্রতিবেশী স্বপন দাশের জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধ আছে। স্বপন দাশকে আইনি পরামর্শ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সঞ্জয় দাশ পুলিশকে ব্যবহার করে সমরকে দুটি মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন।

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি এস-এম-মনিরুজ্জামানের প্ররোচনায় ওসি হিমাংশু কুমার দাশের ইন্ধনে সমর চৌধুরীকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছিল সমরের পরিবার।

এই গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় ওঠে। প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার প্রতিনিধিরা। ওসি হিমাংসু সমর চৌধুরীর বাড়ি সারোয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদে একটি সভায় গিয়ে গ্রামবাসীর তোপের মুখে পড়েন ।
গত ২ জুলাই সমরের মেয়ে অলকানন্দা চৌধুরী ও তমালিকা চৌধুরী সংবাদ সম্মেলন করে তার বাবার মুক্তি এবং মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতির জন্য প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এরপর ১২ জুলাই সমর জামিনে মুক্তি পান। জামিনে মুক্ত হয়ে সমর গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাকে ক্রসফায়ারে দিতে চেয়েছিল। সমরকে গ্রেপ্তারের ঘটনা নিয়ে বিতর্কে পড়া ডিআইজি মনিরুজ্জামানকে গত জুলাই মাসে বদলি করা হয়।

অন্য একটি সুত্র জানায়, ওসি হিমাংসুর রয়েছে নগরী কিংবা জেলার সন্ত্রাসীদের সাথে বেশ সখ্যতা। নগরীর সিআরবির জোড়া খুনের মামলার আসামী অজিতের সাথে রয়েছে তার ছবি। পুলিশের এক অফিসার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ওসি হিমাংসু টাকা পেলে এমন কোন কাজ নাই করতে পারে না। বাঁশখালীতে তার সময়কালে ইয়াবা পাচারের নিরাপদ রুট করে দেন। তার এসমস্ত দুনম্বরী কাজের কারনে তার সময়কার বেইচমেন্টরা সবার পদোন্নতি হলেও তার কোন পদন্নোতি হয়নি।

এদিকে তার কণিষ্ঠ কন্যা তমালিকা চৌধুরী তার ফেসবুক স্টাটাসে লিখেন, দোষী সকল ব্যাক্তি ও পুলিশের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। লন্ডনপ্রবাসী সন্ঞ্জয় দাশের ইন্ধনে বোয়ালখালীর তৎকালীন ওসি হিমাংশু দাস, এস.আই আরিফুর রহমান ও আতিকুল্লাহসহ বোয়ালখালীর কতিপয় পুলিশ অফিসার আমার বাবা সমর চৌধুরীকে ক্রসফায়ারের চেষ্টা করে, ক্রসফায়ারে ব্যর্থ হয়ে মিথ্যে অস্ত্র ও মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে আমার বাবাকে সারাজীবন কারাগারে নিক্ষেপ করতে চেয়েছিল। ঈশ্বরের অশেষ কৃপা, সাংবাদিকবৃন্দ, বিজ্ঞ আইনজীবি, সুশীল সমাজ, দেশের সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় আমার বাবা সব মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। এখন লন্ডনপ্রবাসী সন্ঞ্জয় দাশ ও সকল দোষী পুলিসের বিরুদ্ধে করা মামলা বিজ্ঞ আদালত মামলা গ্রহণ করে তদন্তভার পি.বি.আই কে অর্পণ করেছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.