পাঁচ মাসের ব্যবধানে ১ লাখ ২৮ হাজার শ্রমিক দেশে ফেরৎ এসেছে

0

গোলাম শরীফ টিটু, সিটি নিউজঃ শান্তিতে নেই বাংলাদেশী প্রবাসীরা। বিশে^র বিভিন্ন দেশে মানবেতর দিন কাটছে তাদের। দুই বেলা খাবারও যোগাড় করতে পারছে না অনেক প্রবাসী শ্রমিক। অনেকে দালালের খপ্পরে পড়ে লাখ লাখ টাকা হারিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে আছেন জেলে। পরিস্থিতি দিন দিন অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। অসহায় প্রবাসীদের অনেকেই পকেটের টাকায় বিমানের টিকিট কেটে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। করোনার কারনে বন্ধ হওয়া বিমান চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় প্রতিদিন মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বেকার থাকা শ্রমিকরা দেশে ফিরছেন।

গত সোয়া ৫ মাসের ব্যবধানে সৌদি আরব, ওমান, কাতার, মালদ্বীপ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, লেবাননসহ ২৮টি থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার ২০৯ জন শ্রমিক ফেরত এসেছেন। যাদের বেশির ভাগ ওই দেশগুলোতে কাজ হারিয়ে, চুক্তি শেষে ও অপরাধমুলক কাছে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে কারাভোগ শেষে দুতাবাস বা হাইকমিশনের দেয়া আউট পাসে দেশে ফেরত আসছেন বলে প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের তৈরী করা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

ফেরত আসা প্রবাসী শ্রমিকদের তালিকার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে সৌদি আরব। দেশটি থেকে এসেছেন ৩০ হাজার ৫৩১ জন শ্রমিক। এর পরের স্থানে আছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এখন পর্যন্ত দেশটি থেকে নারী-পুরুষ মিলিয়ে ফেরত এসেছেন ৩৬ হাজার ৫৩৩ জন। তৃতীয় স্থানে আছে কাতার। দেশটি থেকে এসেছে ১০ হাজার ৫৩৫ জন। এর পরের অবস্থানে রয়েছে মালদ্বীপ, ওমান, কুয়েত, মালয়েশিয়া, ইরাক, লেবানন, জর্দান, লিবিয়া, ইতালি সহ মোট ২৮ দেশের শ্রমিকরা।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ এপ্রিল থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিদেশ ফেরত কর্মীদের একেক দেশ থেকে একেক কারনে ফেরত এসেছেন বলে মন্তব্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তার মধ্যে বেশিরভাগ শ্রমিক ফেরত আসার কারন ’কাজ নাই’ বলা হলেও মন্ত্রনালয়ের প্রতিবেদনে সেই সংখ্যাটি উল্লেখ করা হয়নি।

পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সৌদি আরব থেকে কর্মীদের ফেরত পাঠানোর কারনে বলা হয়েছে, বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউট পাসে এবং অনেকে কাজ হারিয়ে বা ছুটিতে দেশে এসেছেন। মালদ্বীপের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ট্যুরিষ্টনির্ভর হওয়ায় করোনার কারনে কাজ নেই, তাই মালিক বা কোম্পানী ফেরত পাঠিয়েছেন। সিঙ্গাপুরের মন্তব্যে বলা হয়েছে, কাজের বা চুক্তির মেয়াাদ শেষে তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।

ওমান থেকে যারা ফিরেছেন তাদের কারন বলা হয়েছে, বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউট পাসে ফেরত এসেছেন। কাতার, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা, ইরাক, শ্রীলঙ্কা ও মরিশাসে কাজ না থাকার কারনে শ্রমিকদের ফেরত পাঠানো হয়। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, যেসব শ্রমিক দেশে ফিরেছেন তাদের ইমিগ্রেশন লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় কথা বলে ফেরত আসার জানা গেছে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সৌদি আরবে অনেক শ্রমিক কাজ করতে পারলেও মালিক বেতন ভাতা দিচ্ছে না। অনেক শ্রমিক পালিয়ে দেশের বাড়ি থেকে টিকিটের টাকা এনে তবেই দেশে ফিরছেন। শুধু সৌদি আরব নয় একই অবস্থা বিরাজ করছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননে। দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারনে বেকার হয়ে পড়েছেন অনেক শ্রমিক। দুই বেলা খাবারও খেতে পারছেন না। অনেকের পরিবার কষ্টের কথা শুনে দেশ থেকে বিমানের ভাড়ার টাকা পাঠাচ্ছেন। এরপরই সিরিয়াল দিয়ে বিমান টিকিট কেটে দুতাবাসের হস্তক্ষেপে তারা দেশে ফিরছেন।

সর্বশেষ গত সপ্তাহে ৪১২জন শ্রমিক বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সুত্র মতে, মুলত বৈশি^ক বিপর্যয়ের কারনে বিদেশ থেকে শ্রমিকরা দেশে ফেরত আসছেন। এটি রোধ করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বাড়ানো হলে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলো থেকে কর্মী ফেরত আসার হার কমে যাবে। যাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং যারা আনডকুমেন্ট ছিলেন তারাই ফেরত চলে আসছেন। এ ছাড়া যাদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল অ্যাকটিভিটিজের কারনে জেলহাজতে ছিলেন তারাও ফেরত এসেছেন।

তবে প্রবাসী কল্যানমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, বর্তমান সরকারের গৃহীত তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ ও মন্ত্রনালয়ের অক্লান্ত চেষ্টার কারনে যেভাবে কর্মী আসার আশঙ্খা করা হচ্ছিল সেভাবে কর্মী না আসার কথা তিনি ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেন,’ আমরা আশা এবং বিশ^াস করি, যেসব দেশে আমাদের দেশের কর্মীরা কর্মরত আছেন, সেই সব দেশের সরকারের কঠিনভাবে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলা করায় তাদের করোনার অবস্থা অনেকটা উন্নতি হয়েছে। সে কারনে সে সব দেশগুলোতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে আসছে। এতে করে আমাদের কর্মীদের আবার কাজে যোগদানের ব্যবস্থা আরও গতিশীল হবে। সেই সব বিবেচনায় আমরা আশা করব আমাদের কর্মীরা ফের কাজে যোগদান করতে পারবেন। বর্তমানে যারা দেশে ছুটিতে এসে আটকা পড়েছেন এবং বায়রার কাছে যে নতুন এক লাখ কর্মীর ডিমান্ডের তালিকা রয়েছে সে ব্যাপারে অক্টোবরে হয়তো দিক নির্দেশনা আসতে পারে। তবে করোনা পরিস্থিতি যদি কন্ট্রোল করা না যায় তবে আগামীতে শ্রম মার্কেট ওপেন হলেও আমাদের কর্মীদের পাঠানো কঠিন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমাদেরও কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা প্রয়োজন।

জানা গেছে, করোনা মহামারির কারনে বড় ধাক্কা লেগেছে বৈদেশিক শ্রমবাজারে। বিভিন্ন দেশে লকডাউন, জরুরী অবস্থার কারনে শিল্পকারখানা, সেবা ও নির্মান খাত বন্ধ হওয়ায় কাজ হারিয়েছেন অনেক বাংলাদেশি অভিভাসী কর্মী। গত ৫ মাসে যারা দেশে ফিরেছেন তার বাইরে দেশে ফেরার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় ২ লাখ। এর মধ্যে ইরাক থেকে দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছে ১৪ হাজারের বেশি কর্মী। কিন্তু ইরাকে বাংলাদেশ দুতাবাস যথাযথ পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করায় তারা ফরতে পারছেন না।

অপরদিকে করোনার আগে বিভিন্ন সময়ে ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়েছেন প্রায় ২ লাখ কর্মী। সব মিলিয়ে বলা যায়, এই মুহুর্তে ৫ লক্ষাধিক শ্রমিক কর্মহীন রয়েছেন। এ ছাড়া শ্রমবাজার বন্ধ থাকায় বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ হারিয়েছেন আরও প্রায় ৩ লাখ লোক।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.